শিষ্টাচার, সদ্ব্যবহার ও ওয়াদা পূরণ
হে আল্লাহর ঘরের মেহমানরা! ইসলামের প্রথম রুকন হলো কালেমার সাক্ষ্য। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের ইলাহ একজনই। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু আর কেউ নেই।’ (বাকারা : ১৬৩)। দ্বিতীয় হলো, নামাজ। এটি আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরি করে। যাতে সে গোপনে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘আর আপনি নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (আনকাবুত : ৪৫)।
ইসলামের তৃতীয় ভিত্তি হলো জাকাত। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিত রূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (মুযযাম্মিল-২০)।
তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহর আনুগত্য করো। সম্ভবত তোমরা মুত্তাকি হবে।
চতুর্থ রুকন হলো রোজা। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ ছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হও।’ (বাকারা : ১৮৩)।
পঞ্চম রুকন হলো, বাইতুল্লাহর হজ। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে ব্যক্তির এ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রয়েছে।’ (আলে ইমরান : ৯৭)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ পালন করবে এবং হজ সমাপনকালে স্ত্রী সহবাস কিংবা তৎসম্পর্কিত আলোচনা এবং কোনো ধরনের গোনাহের কাজে লিপ্ত হবে না, সেখানে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
হজের আমলে রাসুলের অনুসরণের ব্যাপারে আমরা সবাই আদিষ্ট। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই যেন তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজের আমলগুলো গ্রহণ করো।’
যেভাবে আমাদের জীবনের বড়-ছোট প্রতিটি ইবাদতে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ এবং তাঁর দেখানো পথে চলতে আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং এর ওপর তাঁর প্রতি মহব্বত প্রদর্শনকে আবশ্যক করে দিয়ে বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তাহলে আমায় অনুসরণ করো।’
এতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরও ভালোবাসেন এবং তোমাদের গোনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেবেন।
অন্যত্র এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। এটি তার জন্য, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আখেরাতপ্রত্যাশী এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।’
উত্তম চরিত্র ও মহান শিষ্টাচারের দিক দিয়ে রাসুল (সা.) উচ্চ মর্যাদার মানুষ ছিলেন। আল্লাহর এরশাদ, ‘নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।’
অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত রহমতের কারণে আপনি তাদের (সাহাবাদের) প্রতি সদয় হয়েছেন।’
চরিত্র মানুষের অন্তরকে হেফাজত করে। পুরো পৃথিবী আজ রাষ্ট্রীয় আচার ও বিধিবিধানসহ প্রতিটি অঙ্গনে সচ্চরিত্রের কতই না মুখাপেক্ষী। চরিত্র অধিকার সংরক্ষণ করে এবং অন্তরকে দৃঢ় করে।
রাসুলের বিদায় হজেও আখলাকের ভিত্তি স্থাপনের বিষয়টি দৃঢ় করে। তিনি অন্যের ওপর শত্রুতা বা বিদ্বেষ পোষণে নিষেধ করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের একের রক্ত, সম্পদ এবং ইজ্জত-সম্মান অপরের জন্য হারাম করা হয়েছে।’
ইসলামের সৌন্দর্যের একটি হলো, উত্তম চরিত্র। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তি সে, যে চরিত্রে উত্তম।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
চরিত্র কল্যাণের সংরক্ষণ করে এবং ফ্যাসাদকে বিদূরিত করে। এটি পরস্পরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে এবং নম্রভাব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া দয়া ও রহমতের কারণ এই উত্তম চরিত্র। কল্যাণ ও ভালো কাজের সহযোগী এটি। তাছাড়া এটি যে কোনো কারও প্রতি জুলুম করতে বাধা প্রদান করে।
ইসলামের সৌন্দর্যের আরেকটি হলো, ভালো কথা ও ভদ্র আচরণ দেখানো। ‘আপনি আমার বান্দাকে বলুন, সে যেন উত্তম কথাটিই বলে। নিশ্চয়ই শয়তান তাদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে দেয়।’ কোরআনে অন্যত্র বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করুন।’
শরিয়ত ওয়াদা ও অঙ্গীকার পূরণের আদেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে ঈমানদাররা, ‘তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো।’
আল্লাহ তায়ালা নিজ মা-বাবা, আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের আদেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। মা-বাবার সঙ্গে সৎ ও সদয় আচরণ করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক-গর্বিতকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : ৩৬)।
মা-বাবার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা, আপনি তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন শৈশবে তারা আমার লালন-পালন করেছেন।’ (বনি ইসরাইল : ২৪)।
আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পরস্পরের সুসম্পর্কের আদেশ দেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করো।’
বিদায় হজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
সৃষ্টির প্রতি দয়া ও ইনসাফের আচরণ করতে আদেশ করা হয়েছে। কোরআনি এরশাদ, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ন্যায় ও ইহসানের আদেশ দেন।’ (সূরা নাহল-৯০)।
ধোঁকা ও পরিমাপে কম দেওয়া থেকে আল্লাহ নিষেধ করে বলেন, ‘আর ওজন ও মাপ পূর্ণ করো ন্যায় সহকারে।’ (আনআ’ম : ১৫২)।
নিজেদের কাছে গচ্ছিত আমানতকে পৌঁছে দিতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমানতকে তার বাহকের কাছে পৌঁছে দিতে আদেশ করেছেন।’ (নিসা : ৫৮)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান-সদকা করতে আদেশ করে বলেন, ‘প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় করার আগ পর্যন্ত কস্মিনকালেও তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না।’ (আলে ইমরান : ৯২)।
তওবার প্রতি আল্লাহ বান্দাকে আদেশ দিয়ে বলেন, ‘কিন্তু যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সূরা ফোরকান : ৭০)।
তোমাদের আরাফার এই দিনটি তওবার মৌসুম এবং মার্জনার স্থান।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো উত্তম কোনো দিন নেই, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি বান্দার কাছে আসেন এবং ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন।’ (মুসলিম)।
আর কেনইবা এই দিনটি শ্রেষ্ঠ হবে না! এই দিনেই দ্বীনের পরিপূর্ণতা সংশ্লিষ্ট আয়াত অবতীর্ণ হয়।
৯ জিলহজ ১৪৩৯ হিজরি আরাফার খুতবা অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন নাজমুল হুদা, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা মুকাররমা
(আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকা হতে সংগৃহিত)
১৩২৮
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
অপ্রাপ্ত বয়সে যে সকল শিশু মৃত্যু বরণ করে তাদের কবরে......
আল্লাহ পাক সূরা ক্বাফ ছাব্বিশ পারায় ঘোষণা করেন-ونحن اقرب اليه......
ফেরাউনের আদেশমত সদ্য প্রসূত পুত্র সন্তান হত্যা চলতে থাকল। কারণ......
আযানের পর দোয়া করা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়য়াসাল্লামের সুন্নাত......
ডাকতে তোমায় ভাল লাগে রহীম রহমান, নয়ন জুড়ে যা দেখি......
নবী করীম [ﷺ ] শান সম্পর্কিত ৪২টি বৈশিষ্ট্যঃ------------------------------------------------------------------অনুপ্রেরণায় হাফেজ শেখ......
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ( রা:) মদীনার খাজরাজ গোত্রের লোক......
শরীয়তের ভাষায় আছে " আল ঈমানু বাইনাল খাউফে ওয়ার রাজা"......
عن ابي اممة رضي الله عنه قال قال رسول الله......
সূচনা:পানাহারের সামগ্রিক উপকরণকে রিযক্ব বা জীবিকা বলা হয়। এ রিযক......