সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : মঙ্গলবার ১৩/০২/২০১৮

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হোক তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এঁর ওপর, তাঁর পরিবার এবং সাহাবীগণের ওপর, এবং সেই সকল লোকদের ওপর, কিয়ামত পর্যন্ত যারা সত্যের পথ অনুসরণ করবে ৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন বা জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে বাছাই করেছেন এবং তিনি অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা কখনও গ্রহণ করবেন না, তিনি বলেন:
"এবং যে কেউই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা আকাঙ্খা করবে, তা কখনোই তার নিকট হতে গ্রহণ করা হবে না, এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন ৷” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৮৫) এবং নবী(সা.) বলেছেন, এই উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক বিভিন্ন ইবাদতের প্রক্রিয়া ও সামাজিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে আল্লাহর শত্রুদের অনুসরণ করবে ৷ আবু সাঈদ আল খুদরী(রা.) বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন: "তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে, প্রতিটি বিঘৎ, প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্যে [তাদের তোমরা অনুসরণ করবে], এমনকি তারা সরীসৃপের গর্তে প্রবেশ করলে, তোমরা সেখানেও তাদেরকে অনুসরণ করবে ৷” আমরা বললাম, "হে রাসূলুল্লাহ ! তারা কি ইহুদী ও খ্রীস্টান?” তিনি বললেন: "এছাড়া আর কে?” (বুখারী, মুসলিম) আজ মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ঠিক এটাই ঘটছে, মুসলিমরা তাদের চালচলন, রীতিনীতি এবং উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে ইহুদী ও খ্রীস্টানদের অনুসরণ করছে ৷ টিভি, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেটের মত মিডিয়ার প্রচারে অবিশ্বাসীদের অনুসৃত সমস্ত বিজাতীয় রীতিনীতি আজ মুসলিমদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচেছ এবং এর অনুসরণ ও অনুকরণ সহজতর হয়ে উঠেছে ৷ মুসলিম সমাজে প্রচলিত এরূপ বহু অপসংস্কৃতির সাথে একটি সাম্প্রতিক সংযোজন হচেছ "ভ্যালেন্টাইন’স ডে”, যা "ভালবাসা দিবস” নামে বাঙালী মুসলিম সমাজের যুবক-যুবতীদের মাঝে ঢুকে পড়েছে এবং ক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করছে, পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এ দিবসটি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করছে ৷ এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের আলোকে এই ভালবাসা দিবসকে মূল্যায়ন করে বাঙালী মুসলিম সমাজের মুসলিম যুবক-যুবতীদের বোধশক্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাদেরকে কাফিরদের অন্ধ অনুসরণ থেকে নিবৃত্ত করা ৷ নিশ্চয়ই ইহুদী ও খ্রীস্টানসহ অন্যান্য কাফিরদের সংস্কৃতির অনুসরণের পরিসমাপ্তি ঘটবে জাহান্নামের আগুনে, তাই বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য আমাদের যুবসম্প্রদায়কে জাহান্নামের পথ থেকে ফিরিয়ে জান্নাতের প্রশান্তির দিকে আহবান করা ৷ প্রথমে "ভ্যালেন্টাইন’স ডে”র উৎস এবং প্রচলন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক ৷ "ভ্যালেন্টাইন’স ডে”র উৎস হচ্ছে সতের শত বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত "আধ্যাত্মিক ভালবাসা”র উৎসব ৷ রোমানদের এই পৌত্তলিক উৎসবের সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে খ্রীস্টান রোমকদের মাঝেও প্রচলিত হয়ে পড়ে ৷ এ সমস্ত কল্প-কাহিনীর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এই বিশ্বাস যে, এই দিনে রোমের প্রতিষ্ঠাতা রমিউলাস একটি নেকড়ের দুধ পান করেছিলেন, যা ছিল তার শক্তি ও জ্ঞানের উৎস ৷ এই দিনে পালিত বিচিত্র অনুষ্ঠানাদির মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, দুজন শক্তিশালী পেশীবহুল যুবক গায়ে কুকুর ও ভেড়ার রক্ত মেখে তারপর দুধ দিয়ে তা ধুয়ে ফেলার পর এ দুজনকে সামনে নিয়ে বের করা দীর্ঘ পদযাত্রা ৷ এ দুজন যুবকের হাতে চাবুক থাকত যা দিয়ে তারা পদযাত্রার সামনে দিয়ে যাতায়াতকারীকে আঘাত করত ৷ রোমক রমণীদের মাঝে কুসংস্কার ছিল যে, তারা যদি এই চাবুকের আঘাত গ্রহণ করে, তবে তারা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাবে, এই উদ্দেশ্যে তারা এই মিছিলের সামনে দিয়ে অতিক্রম করত ৷ যাহোক রোমকরা খ্রীস্টধর্ম গ্রহণের পরও এই উৎসব উদযাপনকে অব্যাহত রাখে, কিন্তু এর পৌত্তলিক খোলস পাল্টে ফেলে একে খ্রীস্টীয় খোলস পরানোর জন্য তারা এই উৎসবকে ভিন্ন এক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট করে ৷ এই ঘটনা হচেছ সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক খ্রীস্টান সন্ন্যাসীর জীবনোৎসর্গ করার ঘটনা ৷ মূলত ইতিহাসে এরূপ দুজন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী পাওয়া যায় ৷ এদের একজন সম্পর্কে দাবী করা হয় যে, তিনি শান্তি ও প্রেমের বাণী প্রচারের ব্রত নিয়ে জীবন দিয়েছিলেন, আর তার স্মরণেই রোমক খ্রীস্টানরা এই উৎসব পালন অব্যাহত রাখে ৷ এই সময়টাতেই "আধ্যাত্মিক ভালবাসা”র উৎসব, রূপান্তরিত হয়ে জৈবিক কামনা ও যৌনতার উৎসবে রূপ নেয় ৷ এ ধরনের উৎসবের মধ্যে যোগ করা হয় একবছরের জন্য সঙ্গী বাছাইয়ের অনুষ্ঠান, যাতে একজন তরুণের জন্য একটি তরুণীকে একবছরের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হত, তারা একবছর পরস্পরের সাথে মেলামেশা করার পর একে অপরের প্রতি আগ্রহী হলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হত, নতুবা পরবর্তী বছরেও এই একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতো ৷ খ্রীস্টান ধর্মের ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা এই প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন, কেননা তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা সমাজে অশালীনতা ও ব্যাভিচারকে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজকে ধবংস করার জন্য শয়তানের বহু কূটচালের একটি, এবং ধর্মের সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই ৷ এমনকি খ্রীস্টধর্মের প্রাণকেন্দ্র ইতালীতে এই প্রথা অবশেষে বিলুপ্ত করা হয়৷ তবে আঠার ও ঊনিশ শতকে তা সেখানে পুনরায় চালু হয় ৷ "ভ্যালেন্টাইন’স ডে”র উৎস সম্পর্কে আরেকটি মতবাদ হচেছ এই যে, এর উৎস খ্রীস্টীয় ৩য় শতকে রোমক সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের শাসনামলে ৷ এসময় ক্লডিয়াস একটি বিধান জারী করেন যে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না, কেননা বিবাহ তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে দৃঢ় থাকাকে ব্যাহত করবে ৷ এ সময় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন এই আইনের বিরুদ্ধাচরণ করেন এবং গোপনে সৈনিকদের বিয়ের কার্য সমাধা করতে থাকেন ৷ যাহোক, এর পরিণতিতে তাকে কারাবরণ করতে হয় এবং পরিশেষে সম্রাট তাকে খ্রীস্টধর্ম পরিত্যাগের বিনিময়ে মুক্তি ও পুরস্কারের লোভ দেখান, কিন্তু তিনি খ্রীস্টধর্মের ওপর অটল থেকে মৃত্যুদন্ড মাথা পেতে নেন ৷ তার প্রাণদন্ড কার্যকরের তারিখটি ছিল খ্রীস্টীয় ২৭০ শতকের ১৪ই ফেব্রম্নয়ারী, যা কার্যকর হয় ১৫ই ফেব্রুয়ারী লুপারক্যালিয়া* উৎসবের প্রাক্কালে ৷ সেজন্য এই দিনটিকে ঐ পাদ্রীর নামে নামকরণ করা হয় ৷
খ্রীস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে ভালবাসার উৎসব দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন ৷ দেখুন, কিভাবে খ্রীস্টানদের সর্বোচ্চ এই "ধর্মীয় নেতা” একটি নব-উদ্ভাবনকে ধর্মীয় বেশ পরিয়ে সমাজে চালু করে দিলেন, আর কিভাবে খ্রীস্টানরাও একে সাদরে গ্রহণ করে নিল, এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেছেন: "তারা তাদের পন্ডিত এবং সন্ন্যাসীদেরকে আল্লাহর পাশাপাশি তাদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে ৷”(সূরা আত তাওবাহ্‌, ৯:৩১) একদা রাসূলুল্লাহ্‌র সাহাবী আদি ইবন হাতিম (রা), [যিনি খ্রীষ্ট ধর্ম ছেড়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন, তিনি ] আল্লাহর রাসূল (সা.) কে উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করতে শুনে মন্তব্য করলেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা তাদের ইবাদাত করতাম না ৷’ আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর দিকে ফিরে প্রশ্ন করলেন: "এমনকি হতো না যে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা হারাম করে দিত আর তোমরাও সেগুলোকে হারাম বলে গণ্য করতে, আর আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তাকে হালাল করে দিত, এবং তোমরাও সেগুলোকে হালাল করে নিতে?”, তিনি জবাবে বললেন: "হাঁ, আমরা নিশ্চয়ই তাই করতাম৷” আল্লাহর রাসূল (সা) বললেন; "ওভাবেই তোমরা তাদের ইবাদত করতে৷”

৫৪২

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭