আল আকসা ও জেরুজালেম
কুরআন ও হাদীস মোতাবেক বায়তুল মুকাদ্দাস ও মসজিদুল আক্বসার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে-
প্রথম আয়াত:
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ (اسراء:١)
১. অর্থাৎ, মহাপবিত্র সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর বান্দাকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে) রাতের এক অংশে মাসজিদে হারাম থেকে ঐ মসজিদে আক্বসা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, যার চতুর্দিককে আমি বরকতময় করে রেখেছি। যাতে আমি তাঁকে আমার কুদরতের নিদর্শনসমূহ দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) অতিশয় শ্রবণকারী এবং অতিশয় দর্শনকারী।
এ আয়াতের “চতুর্দিকে বরকত” মানে বায়তুল মুকাদ্দাসের চতুঃপার্শ্বে ধর্মীয় ও পার্থিব বরকতের কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে পূর্বে বিভিন্ন তাফসীর সমূহ থেকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় আয়াতদ্বয়:
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَآتَاكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ ﴿٢٠﴾ يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللَّـهُ لَكُمْ (مائدة:٢٠–٢١)
২. অর্থাৎ, স্মরণ করো সেই সময়কে যখন মূসা (আঃ) তাঁর জাতিকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত সমূহ স্মরণ করো (যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন)। তিনি যে তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বর নির্বাচন করেছেন এবং তোমাদেরকে বাদশাহ করেছেন। যা দুনিয়াতে আর কাউকে দান করেন নাই তা তোমাদেরকে দান করেছেন। হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করো যা আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
#ফিলিস্তিনে বিশ্ব মুসলিমের তৃতীয় পবিত্র নগর আল কুদস বা জেরুজালেম (ইংরেজি শব্দ জেরু সালেম)। সেখানে রয়েছে আউয়াল কিবলা, ইসরা ভ্রমণের পর উর্ধ্বজগতে মেরাজে গমনের প্রস্তুতির স্থান, সেই মহান মসজিদ বাইতুল মুকাদ্দাসের “মাসজিদুল আক্বসা” যেখানে সমস্ত নবী-রাসূলগণের জামাত সংগঠিত হয়েছিল নামাজের। যার ইমামতি করেছিলেন ইমামুল আম্বিয়া সায়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা নাবীয়্যিল মুরসালিন খাতামান্নাবীয়্যীন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যাঁর পবিত্র জবান নিঃসৃত বাণী হলো:
عن أبي هريرة - رضي الله عنه - عن النبي - صلَّى الله عليه وسلَّم - قال: لا تشد الرحال إلا إلي ثلاثة مساجد: مسجد الحرام ومسجد الرسول ومسجد الاقصى. (بخاري)
১. অর্থাৎ, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন, তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা যাবে না, আর তা হচ্ছে- মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আক্বসা। এছাড়াও হাদীসে রয়েছে-
عن أنس بن مالك - رضي الله عنه - قال: قال رسول الله - صلَّى الله عليه وسلَّم - صلوة الرجل فى بيته بصلوةٍ، وصلوته في مسجد القبائل بخمس وعشرين صلوةً. وصلوته في المسجد الذي يجمع فيه بخمسمائة صلوة، وصلوته في المسجد الأقصى بخمسين ألف لوةٍ، وصلوته في مسجدي بخمسين ألف صلوةٍ، وصلوته في المسجد الحرام بمائة ألف صلوة. (رواه ابن ماجة كذا في المشكوة)
২. অর্থাৎ, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, একজন লোকের ঘরের নামাজে এক নামাজের, মহল্লার মসজিদে পঁচিশ নামাজের, জুমা মসজিদে পাঁচশত নামাজের, মসজিদে নববীতে পঞ্চাশ হাজার নামাজের, মসজিদে আক্বসাতে পঞ্চাশ হাজার এবং মসজিদে হারামে এক লক্ষ নামাজের ছওয়াব রয়েছে।
“কুব্বাতুস সাখরা” যে জায়গা থেকে হুজুর (সাঃ)-এর আকাশ ভ্রমণ শুরু হয়, অর্থাৎ মসজিদে আক্বসা থেকে নামাজ আদায় করে পরে য়ে জায়গা থেকে “রফরফ” যোগে হযরত জিব্রীল (আঃ) হুজুর (সাঃ)-কে আকাশে নিয়ে যান এবং যাকে বায়তুল মাকদিস বলা হয় ।
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা মুকাররমা থেকে বুরাক যুগে হযরত জিবরীলের সাথে ২৭শে রজবের রাতে এসে সমস্ত আম্বিয়াদের ইমামতি করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ (اسراء:إ)
১. অর্থাৎ, মহাপবিত্র সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর বান্দাকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে রাতের এক অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আক্বসা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, যার চতুর্দিক আমি বরকতময় করে রেখেছি। যাতে আমি তাঁকে (নবী সাঃ) আমার কুদরতের নিদর্শনসমূহ দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) অতিশয় শ্রবণকারী এবং অতিশয় দর্শনকারী।
আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে কেনো?
বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল বিশ্ব মুসলিমের প্রথম কিবলা। কিবলা মানে মুখ করার দিক। অর্থাৎ নামাজে মুখ করার দিক। ইসলামের ইবাদতগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। কিছু কিছু ব্যক্তিগত ইবাদত, আবার কিছু কিছু সমষ্টিগত ইবাদত। ব্যক্তিগত ইবাদত যেমন তাসবীহ পড়া, যিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদিতে কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নামাজ একটি সমষ্টিগত ইবাদত। তাতে একতা ও সংহতি প্রকাশ পায়। এতে বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে একতা সংহতি দ্বারা মিল মহব্বত ও হৃদ্যতা জন্মে। যার কারণেই একদিকে মুখ করা আর এটাকেই কেবলা বলা হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে হজ্ব সামষ্টিক ইবাদত। তাই তো হজ্বের মধ্যে পোষাক ও অবস্থানের অভিন্নতা দেখা যায়। এছাড়া নামাজের মধ্যে হুজুরে কলব বা মনের একাগ্রতা প্রয়োজন। এ একাগ্রতার জন্য নামাজী মাত্রকে একদিকে মুখ করার প্রয়োজন ছিল। আর এ জন্যই কা’বা নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন ছিল। (তাফসীরে কবীর)
তবে বিশ্ব মুসলিমের সর্ব প্রথম ক্বিবলা পবিত্র কা’বাই ছিল। হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে হযরত নূহ (আঃ) পর্যন্ত কাবাই ছিলো ক্বিবলা। হযরত নূহ (আঃ) এর তুফানের সময় তা ধ্বসে পড়ে। পরে আবুল আম্বিয়া হযরত ইবরাহীম (আঃ) ছেলে হযরত ইসমাঈল (আঃ) সহ তা পুনঃনির্মাণ করেন। তারপর বনী ইসরাঈলের নবীগণের যুগ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসকে পবিত্র ক্বিবলা সাব্যস্থ করা হয়। তাফসীরে কুরতুবীতে রয়েছে, পূর্ববর্তী পয়গাম্বরগণ নামাজ পড়ার সময় এমনভাবে দাঁড়াতেন যাতে বায়তুল মুকাদ্দাসের ‘ছাখরা’ ও কাবাগৃহ উভয়টি সামনে থাকে। (কুরতুবী শরীফ)
(সুত্র-নবী-রাসুলের দেশ ফিলিস্তিন/অধ্যাপক মাও: মুহিব্বুর রহমান)
সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের দুটি কেবলা (১) কা’বা শরীফ ও (২) বায়তুল মুকাদ্দাস। উভয় কেবলার দিকে নামাজ আদায় এর মধ্যে এ পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া প্রিয় নবী (সাঃ) এর আবির্ভাব হয়েছে মক্কা মুয়াজ্জমায়। তাই কা’বা শরীফের সঙ্গে তাঁর যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে তা অতি সহজেই অনুমেয়। পরবর্তীতে যখন দ্বীন ইসলামের প্রয়োজনে নবী (সাঃ) মদীনায় হিজরত করেন এবং মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় তখনও কিছুদিন বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে নবী করিম (সাঃ) নামাজ আদায় করলেন, কেননা দুনিয়ার সকল মুসলমানের জন্য উভয় কেবলাই অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান। অবশ্য কোন কোন আলেমের মতে হিজরতের পূর্বে বায়তুল্লাহ কিবলা ছিল, মদীনায় হিজরতের পর বায়তুল মুকাদ্দাসকে ক্বিবলা করা হয়েছিল। (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন)।
হুজুর (সাঃ) মক্কা মুকাররমায় থাকাকালীন কা’বা এবং বায়তুল মুকাদ্দাস, মদীনায় আসার পর কিছুদিন শুধু বায়তুল মুকাদ্দাস এবং পরে যখন আদেশ হয়েছে তখন পুনরায় কা’বা শরীফকে কিবলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। এগুলো সব আল্লাহর হুকুমেই। তিনি নিজে থেকে কিছুই করেননি। মহান আল্লাহর আদেশ পালনে প্রিয় নবী (সাঃ) ছিলেন আপাদমস্তক আনুগত্যের প্রতীক। সে মতে আল্লাহর হুকুম পালন করেছেন। তবে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়লেও তাঁর স্বভাবগত আগ্রহ ও বাসনা ছিল এই যে, হযরত আদম ও হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কেবলাকেই পুনরায় কেবলা সাব্যস্থ করা হউক।
পবিত্র কুরআনের আয়াত:
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ (بقرة:١٤٤)
১. অর্থাৎ, (হে নবী!) আপনার বারবার আকাশের দিকে তাকানো আমার দৃষ্টি এড়ায় নাই। আমি আপনাকে আপনার পছন্দ মতো কিবলার দিকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব। সে মতে আপনি নামাজে মসজিদে হারাম তথা কাবাগৃহের দিকে মুখ করুন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, মহানবী (সাঃ) কেন এ আকাঙ্খা প্রকাশ করলেন? এর জবাবে মুফাসসিরীনে কেরাম কতগুলো কারণ উল্লেখ করেছেন, তা হলো (১) ইহুদীগণ বলতে লাগলো, মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের বিরোধিতা করে অথচ আমাদের কিবলার অনুসরণ করে। (২) কা’বা ছিল তাঁর পিতামহ ইবরাহীম (আঃ) এর কিবলা। (৩) কা’বা শরীফ হলো প্রাচীনতম কিবলা (৪) কা’বা শরীফ কিবলা হলে আরববাসীর ঈমান আনয়নে সাহায্যকারী হবে। (তফসীরে রুহুল মাআ’নী)
তাই এসব কারণে প্রিয় নবী (সাঃ) ইচ্ছা পোষণ করেন তথা মনে মনে আল্লাহ পাকের দরবারে আর্জি পেশ করেন, আর আল্লাহ তাঁর এ আর্জি কবুল করেন। এ হলো সংক্ষেপে এ দুটি কিবলার বর্ণনা।
৫৫১
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
কিয়ামতের কিছু নিদর্শন ১. নারীদের সংখ্যা বেশি হবে। ২. পুরুষের......
ঈদ মুসলমানদের জাতীয় উৎসব। বিশ্বের সব দেশের ও সব পেশার......
মহররম অাল্লাহর সম্মানিত একটি মাস সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য......
২০১৮ সালের মধ্যে দেশের ১৫ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধীদের অালাদা......
সাম্প্রতিক যে ১০টি বিষয় জানি কিন্তু মানিনা ১। আল্লাহর অস্তিত্বে......
ক্যানসারের পাঁচ কারণ বিশ্ব ক্যানসার দিবস । ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর......
কম্পিউটার টিপস কম্পিউটার হয়ে যাক আরও গতিশীল করুন- GO “......
অভিভাবক সচেতন হোন : মোহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী আত্মহত্যার পেছনে ব্লু......
রোজার গুরুত্ব ও মর্যাদা এম সোলাইমান কাসেমী ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের......
২৪ জন ডুবুরি পবিত্র জম জম কূপের তলদেশ থেকে নিয়ে......