সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

নাটোর, লালপুর
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বুধবার ০৫/০৭/২০১৭

সৌদী আরবে বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগ সম্পর্কে ইসলামের বিধান!!
প্রশ্ন: সৌদি আরবে বাংলাদেশী অসহায় মহিলাদের মাহরাম ব্যতীত গৃহকর্মী হিসাবে নিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশের সাথে চুক্তি হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে জানা যায় এবং এরকম নাকি আগেও ছিল ,এ সব গৃহকর্মীদের নিপীড়ন নির্যাতন নিগ্রহ ব্যাভিচারের বহুবিধ কাহিনী জনশ্রুত |তাছাড়া অনেক সৌদি নাগরিক মনে করে,গৃহকর্মী দাসী হিসাবে ভোগকরা শরিয়া সম্মত এবং প্রায়শ:ই বাপ বেটা মিলেই উপভোগ করে বলে অনেক ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা নিজেই শুনেছি |নিদেনপক্ষে এসব নারী গৃহকর্মীরা বাসার ভিতর পর্দা মেনে কাজকর্ম করতে পারেনা এবং গৃহকর্তা বা পুরুষ সদস্যের সাথে নির্জনে খেদমত করতে হয় | মাহরাম ব্যতীত বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে সফর করতে হয় এবং জীবন যাপন করতে হয় মাহরাম ব্যতীত | এসব গৃহকর্মীর অতি নিম্ন বেতন ভাতার আপাতত নাইবা বললাম | এরকম মাহরাম ব্যতীত গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়ে কুরআন ও সহিহ হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার মতামত কি ?
বি.দ্র. আপনি একজন জ্ঞানী আলেম, যাকে আমরা মুসলিম সমাজের নেতা/ইমাম মনে করি -অন্তত: দ্বীন ইসলাম বুঝার জন্য | আপনার খুতবা/বক্তৃতা জন সচেতনতা তৈরিতে অনেক বেশি কার্যকরী হবে, ইন সা আল্লাহ | সৌদি / বাংলা সরকার পরিবর্তিত হউক বা না হউক |
প্রশ্নটি অনেকে করেছেন, তন্মধ্যে লিখিত আকারে করেছেন, মনির আহমদ এবং আব্দুল কাইয়ূম।
উত্তরঃ আল্ হামদু লিল্লাহ, ওয়াস স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদঃ
প্রথমতঃ আমি বিনয়ীর সাথে পাঠকদের স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, আমি মুসলিম সমাজের কোনো নেতা/ইমাম নই আর না কোনো বড় আলেম। তাই বিষয়টির সম্পর্কে এই উত্তর আমার জ্ঞানের আলোকে নিজস্ব উত্তর এবং বিষয়টির সম্বন্ধে একটি সাধারণ ধারণা মাত্র।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের উক্ত বিষয়ে ইসলামের বিধান সম্বন্ধে জ্ঞান রাখা ভাল যে, গৃহকর্মী হিসাবে কোথাও কাজ করা কিংবা গৃহে কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ করা বৈধ। অর্থাৎ মূলতঃ বিষয়টির ইসলামী বিধান হচ্ছে, তা বৈধ। এটি ইসলামে আজীর বা কর্মচারির বিধানের অন্তর্গত।
তৃতীয়তঃ মাহরাম ব্যতীত কোনো মহিলার বাড়ির বাইরে সফর করা ইসলামে নিষিদ্ধ অনুরূপ গায়র মাহরিম (বিবাহ সিদ্ধ এমন ব্যক্তি) এর সাথে মাহরিম ব্যতীত নির্জনতাও ইসলামে নিষেধ। আর এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক। নবী (সাঃ) বলেনঃ “কোনো পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে তার মাহরিম ব্যতীত নির্জনতা অবলম্বণ না করে। আর না মহিলা মাহরাম ব্যতীত সফর করে”। [বুখারী (৩০০৬) মুসলিম (১৩৪১)]
তাই এমন সফর যাতে মাহরিম নেই এবং এমন স্থান যাতে গায়র মাহরিমের সাথে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় নির্জনতা ঘটে তা হারাম। উপেক্ষাকারী গুনাহগার। [এমন ফতোয়া সম্মানিত সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদও দিয়েছেন, খন্ড ১৭/৩১০]
যেমন মাহরিম ব্যতীত কোনো মহিলা সফর করতে পারে না, তেমন মাহরিম ব্যতীত কেউ কোনো মহিলাকে গৃহকর্মী হিসাবেও আনতে পারে না। সউদী স্থায়ী উলামা বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এক মহিলার ৬য়জন সন্তান তাদের রান্না-বান্না, পরিচর্যা, বাড়ির সংরক্ষণ সহ স্বামীর দেখা-শোনা করতে হয়, এমতাবস্থায় সে কি খাদেমা (গৃহকর্মী) আনতে পারে? [মাহরাম ব্যতীত]
তাঁরা উত্তরে বলেনঃ কোনো মহিলা খাদেমাকে মাহরিম ব্যতীত আনা অবৈধ কারণ; নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মাহরিম ব্যতীত কোনো মহিলা যেন সফর না করে।” [১৭/৩২৬]
{তবে ভাববার বিষয় হল, যে সব মহিলা বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক, তারা কি ইসলামের উপরোক্ত বিধান জানে বা মনে স্বীকার করে? না পর্দা ও মাহরিম ব্যতীত সফরের বিষয়কে তারা কিছুই মনে করে না। বরং এর থেকে বড় বিধান তাওহীদ জানেন না এবং স্বালাত পর্যন্ত আদায় করেন না। আর যদি অবস্থা এমন হয়, তাহলে তাদের ও তাদের গার্জিয়ানদের প্রথমে ইসলামের মৌলিক বিধানের জ্ঞান দেওয়া উচিৎ।}
চতুর্থতঃ সাধারণতঃ সউদীতে এমনি সরাসরি খাদেমা আনয়নের প্রথা থাকলেও শিক্ষিত মুমিন সমাজ কিন্তু এমন নিয়ম সঠিক মনে করেন না। তাই শাইখ ইবনু উছায়মীন (রাহেঃ) অন্য দেশ থেকে খাদেমা আনার ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। এসব শর্ত পাওয়া গেলে খাদেমা আনা ও তাকে গৃহে রাখা বৈধ নচেৎ নয়। ১-তার সাথে যেন মাহরিম থাকে।[এটা খাদেমার ক্ষেত্রে] ২-সত্যিই যেন খাদেমার প্রয়োজন থাকে। এমনি সাধারণ প্রয়োজনে যেন না আনা হয়। ৩- যে আনবে সে যেন খাদেমার কারণে নিজের ও পরিবারের প্রতি ফেতনার আশংকা না করে। আশংকা থাকলে আনবে না। ৪-খাদেমা যেন পূর্ণ হিজাবের অধিকারী হয়। [বায়তুল আতীক ওয়েব থেকে গৃহীত]
তাই আমার এমন লোকের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে যে আমার কাছে বার বার এসে আবেদন করত যে, ভাই আমার মায়ের সমস্যা আমার একজন খাদেমার প্রয়োজন। এমন খাদেমা যেন তার মাহরিমও সাথে আসে। মাহরিম আমার ড্রাইভিং করবে আর সে বাসায় কাজ করবে।
পঞ্চমতঃ এ ছাড়াও মহিলাদের বিদেশে অবস্থানে রয়েছে অনেক সমস্যা, যা তার কাজ ও স্বয়ং নিজের সাথে সম্পর্কিত। যেমন, ভাষাগত সমস্যা। ভাষা না জানার কারণে সংশ্লিষ্টদের সাথে অনেক সময় একারণে ভুল বুঝাবুঝি ও ঝামেলার সৃষ্টি হয়। সাধারণ লেবার কাজের সময় ৮ ঘন্টা কিন্তু গৃহকর্মীদের সাধারণতঃ লিমিটেশন থাকে না বললেই চলে। তাদের নির্ধারিত কাজ কি, তার ব্যাখা থাকে না। থাকলেও কমীরা বুঝে না অনুরূপ মালিকেরা তোয়াক্কা করে না। তার উপর কোনো প্রকারের নির্যাতন হলে, সে কোথায় যাবে? কি বলবে? কোথায় বিচার চাইবে? কি ভাবে চাইবে? জানে না বা উপায় থাকে না। অসুখ-বেসুখের সময় তার ঠিক সময়ে চিকিৎসা সহ আরাম-বিরামের নিয়ম থাকে না। তার বেতন ঠিক সময়ে পাওয়া বা না পাওয়ার পর্যবেক্ষক থাকে না। প্রেরণের ব্যবস্থাও কষ্টসাধ্য যদি মালিক সাহায্য না করে। ইত্যাদি সমস্যা।
ষষ্ঠতঃ অনেক সৌদি নাগরিকদের সম্পর্কে আপনি যা শুনেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, সে সম্বন্ধে বলবোঃ
আপনি কার কাছ থেকে এমন শুনেছেন, বা কেউ এমন বললেই যে তার কথা এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিনা যাঁচাইয়ে গ্রহণীয়? এর ব্যাখ্যা তলবের এটা স্থান নয়। তবে আমি যেহেতু সউদী আরবে পড়া-শোনা সহ এক দশক ধরে কর্মরত আছি, তাই বলছি। আমি নিজ কানে কোনো দিন কোনো সাধারণ আর না বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে এমন কিছু বলতে শুনেছি বা প্রশ্ন করতে শুনেছি। বরং জুমআর খতীবকে খুত্ববা দিতে শুনেছি তিনি (নাসের খালেদ আল হাজেরী) জোর কন্ঠে গুরুত্বের সাথে মুস্বল্লীদের বলছিলেন। মালিকেরা যেন খাদেমাদের চেহারা ঢাকতে আদেশ করে কেন না তারা গাইর মাহরিম তাই তাদের পর্দা করা জরূরী। তবে দুঃখ হলেও সত্য আমাদের দেশের এমন বহু মহিলা চেহারা ঢাকা তো দূরের প্রশ্ন দেহটাই ভাল করে ঢাকে না।
স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়াই ইসলামে এমন বিষয়ের ধারণা রাখা কঠোর ভাবে নিষেধ। প্রমাণবিহীন এমন উক্তি একটি জঘন্য তহমত, যার শাস্তি সূরা নূরের চতুর্থ নম্বর আয়াতে বর্ণিত। তাই এসব ধারণা ও মন্তব্য বুঝে-সুঝে যাঁচাই-বাছাই করার পরেই বলা শরীয়তের আদেশ। তবে কারো সাথে এমন ঘটলে, সে কোর্টে যেতে স্বাধীন এবং সেখানে শরীয়া অনুযায়ী তার বিচার পাবার সে যোগ্য। তাই বলছিলাম অত্যাচর হলে, কোথায় যাবে কি ভাবে যাবে? তার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান থাকা উচিৎ।
উপরোক্ত মন্তব্যে সউদীদের নেতিবাচক চরিত্রেরই কথা প্রকাশ পেয়েছে, তবে এটাও সত্য যে, হাজারো অমুসলিমা এমন গৃহকর্মী হিসাবে এসে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়। হাজারো নামের মুসলিমা এখানে এসে নামাযী হয়। গোলদেশে তাবীজ পরে এসে তা সহীহ আক্বীদা পাওয়ার কারণে খুলে ফেলে। হজ্জ ও উমরা করা সুযোগ পায়। অর্থ-কড়ির বিষয়টি ছেড়েই দিলাম।
তাছাড়া এই আশংকা যদি সউদীদের পক্ষ থেকে হতে পারে, তাহলে খাদেমাদের পক্ষ থেকেও এমন আশংকা অস্বীকার করা যায় না। তাই উপরের মন্তব্যটির সম্পর্কে এতখানি বলবো যে, তা সউদীদের সাধারণ ধারণা নয় এটা বিক্ষিপ্ত কিছু মানুষের হতে পারে।
সপ্তমতঃ এই চুক্তি হওয়া মানে ব্যক্তিগতভাবে কারো উপর তা করা জরূরী নয়। তাই আমরা সেখানে গৃহকর্মী হিসাবে যাওয়া বা না যাওয়ার এখনও স্বাধীনতা রাখি।
অষ্টমতঃ ফল কথা স্বরূপ বলা যেতে পারে, কোনো বিষয়ে যদি ক্ষতির আশংকা বেশী থাকে, তাহলে তা না করাই উচিৎ। ওয়াল্লাহু তাআলা আলাম।

৩৬০

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

  • নাটোর, লালপুর

    সৌদী আরবে বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগ সম্পর্কে ইসলামের বিধান!! প্রশ্ন: সৌদি......

  • দালাল কেন বলে ?

    যারা সৌদি আরবের রাজ পরিবারকে ইহুদি খ্রিষ্টানের দালাল বলে থাকেন,......

  • ভুল শিক্ষা

    পাগড়ি মাথায় দিয়ে নামাজ পইড়লে নাকি ৭০ গুন সোয়াব বেশি!!......

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭