বর্ষপরিক্রমায় রহমত, বরকত ও মুক্তির বাণী নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের দুয়ারে আবারও আসছে পবিত্র মাহে রমজান। সংযম সাধনার পুণ্যময় এ মাসে সিয়াম সাধনা এবং ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়। সারাবছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে যে পাপ সঞ্চিত হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণের মোক্ষম সময় হলো রমজান। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বের মুসলমানরা নাজাতের পথ খুঁজবে এই মাসে। রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ এবং সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠী শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে নেয় এ মাসকে। পবিত্র এ মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে ইহকাল ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। মহান আল্লাহ এ মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সংযত-সুন্দর জীবনযাপনে বিশ্ব মুসলিমকে শিক্ষা দেয় পবিত্র এই মাস। এ ছাড়া হাজার রজনীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে মহিমান্বিত ও সম্মানিত। এ রাতেই ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআনের শিক্ষা হলো বিশ্বাসী মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে অশেষ কল্যাণ দান করা। কৃচ্ছ্রতা সাধন ও আত্মসংযমের এ মাসে তাই আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার ওয়াদা করে মুসলমান সম্প্রদায়, সবরকম গুনা মাফ করে দেয়ার জন্য আকুল প্রার্থনা জানায়। এ মাসে কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে। রমজানের তিন অংশের মধ্যে আল্লাহতায়ালার কাছে শেষাংশের সর্বাধিক মর্যাদা বলে হাদিসের উদ্ধৃতিতে উপলব্ধি করা যায়। কারণ পুরো মাসের যত গুরুত্ব রয়েছে, তা মূলত শেষাংশকে কেন্দ্র করেই। মূলত পবিত্র কোরআন অবতীর্ণের কারণেই রমজান মাসের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য এত বেশি। আর তা নাজিল হয়েছে রমজানের শেষাংশেই। কোরআন নাজিল হয়েছে কদর রজনীতে। আর এ জন্যই সব আসমানি কিতাব নাজিল দিবসে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে_ 'তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর।'
পরিতাপের বিষয়, মূলত যেভাবে সিয়াম সাধনার প্রয়োজন, সর্বতোভাবে তেমনটি পালিত হতে দেখা যায় না। সংযমের এ মাসে সবচেয়ে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে বাজার। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। ভোক্তাদের অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করা হয়। রমজান মাস এলেই মাছ-মাংস সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার প্রায় বাইরে চলে যায়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ মাসে বেশি মুনাফার আশায় আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে বসে থাকে। এবারো বাজারে এর প্রতিফলন দেখা দিতে শুরু করেছে। শহরাঞ্চলে রমজান মাসে জমজমাট হয়ে ওঠে ইফতারির বাজার। ইফতারির বাজারেও এলাকা বিশেষে দামের তারতম্য দেখা যায়। অন্যদিকে ভেজাল খাবার নিয়েও তোলপাড় হতে দেখা যায়। এবার এমনটি না ঘটুক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।
স্মর্তব্য যে, রমজান মাসে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের তাগিদ দেয়া হয়েছে। সব ধরনের পাপ ও অন্যায়-অপকর্ম থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। রমজান মাসে কথায় ও কাজে মিতাচারী হতে বলা হয়েছে। এটাই রমজান মাসের শিক্ষা। অবিচ্ছিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সংযম সাধনার মাস রমজান। নিজেকে বিরত রাখতে হবে সব ধরনের মিথ্যাচার, অন্যায় ও অপকর্ম থেকে। মানুষের কল্যাণের জন্যই রোজা। রোজা মানুষের আত্মার উন্নতি বিধানের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। মানুষের আত্মার কুপ্রবৃত্তিকে দুর্বল করে মানবপ্রকৃতির বিকাশ সাধনের মাধ্যমে মুমিনের আত্মশুদ্ধি লাভের এক অপূর্ব সুযোগ করে দেয়। তাই রমজানের প্রথমদিনের প্রথম লগ্ন থেকে এ মাসের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত যথাযথ মাসলা ও নীতি অনুসরণ করে গুনা মাফ ও পুণ্য লাভের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হওয়া উচিত। রমজান মাসে সংযমের মধ্যদিয়ে সবার জীবন পরিশুদ্ধ হয়ে সমাজ হয়ে উঠুক মানবিকতাপূর্ণ, এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
৩৩৮
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
বর্ষপরিক্রমায় রহমত, বরকত ও মুক্তির বাণী নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের দুয়ারে......