খুলে গেল কবির ভাগ্য
মক্কায় এক কবি বসবাস করত। নাম আবদুল্লাহ ইবনু যাবআরি। কুরাইশ বংশোদ্ভূত। তার পরবর্তী গোত্র ছিল বনি সাহমের সম্পর্কযুক্ত। রাসূলুল্লাহ সা.এর ঘোর শত্রু, ইসলামের প্রচন্ড বিরোধী ছিল এ কবি। মক্কা বিজয়ের পর নিজের প্রাণের ভয়ে নাজরান পালিয়ে গিয়েছিল।
.
সে-যুগে কবিদের কবিতা বিরোধীদের জন্য বড়ই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হত। কবি আবদুল্লাহ সারাটি জীবন রাসূলুল্লাহ সা.এর বিরোধিতায় কবিতা রচনা করেছে। কবিতার মাধ্যমে কুরাইশকে তাঁর বিরুদ্ধে উসকে দিত। ইসলামের কবি হাস্সান ইবনু সাবিত রা. তার এসব কবিতার যথাযথ জবাব দিতেন।
.
কবি আবদুল্লাহ যখন নাজরান পালিয়ে গেল, সেখানেও হাস্সান রা.এর কবিতার পাল্লায় পড়ল। হাস্সান রা. তাঁর কবিতায় কবি আবদুল্লাহকে কাপুরুষ আখ্যায়িত করে তিরস্কার করলেন তির্যক ভাষায়।পলায়নের পথ অবলম্বনের জন্য লজ্জ্বা দিলেন। কবিতাটি অনেক দীর্ঘ। তবে এখানে সেখান থেকে একটি পঙক্তির ভাবার্থ উল্লেখ করে সামনে অগ্রসর হচ্ছি:
.
“আল্লাহ মহান ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ সা.কে আমাদের জন্য বাঁচিয়ে রাখুন। যার প্রতিহিংসা ও ঘৃণা তোকে নাজরানের এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। হে যাবআরির সন্তান! আল্লাহ তা‘আলা তোকে স্থায়ী লাঞ্চনাকর জীবন, অকল্যাণকর, অশুভ ও দুর্ব্যবহারের মধ্যে রাখুক।”
.
আবদুল্লাহ ইবনু যাবআরির কানে যখন এই কবিতা পৌঁছে, সে ঘাবড়ে যায়। নিজের অবস্থান ও বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে। চিন্তা-ভাবনা করে দেখল, আমি কোন ব্যক্তিত্বের বিরোধিতা করছি এবং কেনই বা করছি? নিজের অতীত জীবনের পাতা উল্টিয়ে দেখে সে। তখন হৃদয়ের ক্যানভাসে ফুটে উঠে তার খলচরিত্র.. অনুধাবন করে করে লজ্জ্বিত হয়। পক্ষান্তরে প্রত্যক্ষ করল, রাসূলুল্লাহ সা.এর উন্নত চরিত্রের আলোকময় ভূবন।
.
এদিকে আল্লাহ তা‘আলাও তাঁর এ বান্দার জন্য কল্যাণের ইচ্ছা করেন। তার মন পরিস্কার হয়ে গেল। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেন। ভাগ্য খুলে গেল কবি আবদুল্লাহর। ফলশ্রুতিতে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সে। অত:পর মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যায় আলোর সন্ধানে।
.
মক্কায় পৌঁছার পর সে সোজা রাসূলুল্লাহ সা.এর খিদমতে গিয়ে উপস্থিত হল। বিগত জীবনের উপর অনুতপ্ত হয়ে সে ইসলাম কবুল করে ফেলে। সাথে সাথে আরজ করল,
-হে আল্লাহর রাসূল! আমি অতীত জীবনে আপনার এবং ইসলাম সম্পর্কে যেভাবেই শত্রুতা করেছি সবগুলো ক্ষমার জন্য দুআ করে দিন।
.
এদিকে রাসূলুল্লাহ সা.এর অবস্থা দেখুন, তিনি তাঁর এই নতুন সাথীকে সান্ত¦না দিচ্ছেন... সুসংবাদ দিচ্ছেন... তাকে পুরনো গুনাহের উপর লজ্জ্বা দিচ্ছেন না। ইরশাদ করলেন,
-“ইসলাম বিগত সব ত্রুটি ও গুনাহকে শেষ করে দেয়।”
আল্লাহর রাসুল সা. আবদুল্লাহকে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। তার সাথে মহব্বতপূর্ণ আচরণ করেন। একজুড়া কাপড়ও তাকে উপহার দেন রাসূলুল্লাহ সা.।
.
ইতিহাসবিদরা সবাই একমত, আবদুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সা.এর সদাচার ও সুব্যবহার দ্বারা এতই প্রভাবিত ও মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করেছেন রাসূলুল্লাহ সা.এর শানে। সে-সব কবিতায় একদিকে আল্লাহর রাসূলের স্তুতি যেমন চিত্রায়িত হয়েছে, একই সাথে রাসূলুল্লাহ সা.এর বিরোধিতায় অতীতে আবৃত্তি করা কবিতার জন্য অনুশোচনাও প্রকাশ পেয়েছে।
.
ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন, অনেক বড় ও তুখোড় কবি ছিলেন আবদুল্লাহ। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসূলুল্লাহ সা.এর প্রশংসায় এত বিপুল সংখ্যক কবিতা রচনা করেছেন যে, যার মাধ্যমে তিনি তার কুফরি অবস্থায় রচিত কবিতাসমূহের প্রায়শ্চিত্ত করে নিয়েছেন।
৫০৫
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
পড়ার অনুরোধ.... যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন প্রথম যেদিন প্রেসিডেন্ট......
দক্ষতার গল্প খায়বারের ময়দানে উপস্থিত আল্লাহর রাসুল সা.। ইহুদিদের বিরুদ্ধে......
দক্ষতার শিক্ষণীয় গল্প রেষ্টুরেন্টে বসে এক হুজুর নাস্তা করছেন। হাত......
চাঁদ নেমেছে আজ আমার ঘরে আল্লাহর রাসূল সা.এর ঘরে কয়েকদিন......
খুলে গেল কবির ভাগ্য মক্কায় এক কবি বসবাস করত। নাম......
তিন ব্যক্তির গল্প আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি......
রূপে নয় গুণেই পৃথিবী অালোকিত হয় এক যুবতীর প্রশংসা শুনে......
ইয়া উম্মাতি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের শেষ মূহুর্ত চলছে।......
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, এক-দুইবার বা পাঁচ-সাতবার নয় বরং এর......
শিক্ষণীয় গল্প এগুলো শুধুই গল্প নয়। গল্পের ব্যানারে আঁকা পৃথিবীর......