শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প
আল্লাহর রাসুল সা. মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনা যাচ্ছেন। সঙ্গে ছিলেন আবু বকর রা., তাঁর গোলাম আমের ইবনু ফুহাইরা এবং সেই কাফেলার পথপ্রদর্শক আবদুল্লাহ ইবনু উরাইক্বিত। কাফেলাটি যখন বনি মুদলিজের এলাকা কুদাইদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, বনি মুদলিজের বেদুইন সর্দার সুরাকা ইবনু মালেক গতিরোধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। লম্বাকৃতির এ বেদুইন সর্দার দুর্ধর্ষ ঘোড়সওয়ার ছিল।
.
কুরাইশ ঘোষণা করেছিল, ‘যে ব্যক্তি (নাউজুবিল্লাহ) রাসূলুল্লাহ সা.কে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরে নিয়ে আসবে তাকে এক’শ উট পুরস্কার দেয়া হবে।’ কুরাইশের এ ঘোষণার খবর ইতোমধ্যে পেয়েগেছে সুরাকা। পুরস্কারের লোভে কাফেলার পিছু নিল সে। মাঝখানে তার ভাগ্য পরীক্ষাও করে দেখেছে লটারির মাধ্যমে। লটারির ফলাফল ছিল তার ইচ্ছার বিপরীত। লটারির ফলাফল মতে কাফেলার অনুসরণের মধ্যে তার কোনো লাভ ছিল না। কিন্তু শতউট পুরস্কারের লালসা তাকে অন্ধ করে দিয়েছিল। ভাগ্যপরীক্ষাকে এড়িয়ে গেল সুরাকা।
.
পিছে পিছে যে সুরাকা ধেয়ে আসছে, রাসূলুল্লাহ সা. লক্ষ করেছেন। তাঁর পবিত্র মুখ থেকে উৎসারিত হল, (اللهم اكفناه بما شئت) “হে আল্লাহ! যেভাবে তোমার ইচ্ছা আমাকে তার কাছ থেকে রক্ষা করো।”
এদিকে রাসূলুল্লাহ সা.এর মুখ থেকে এশব্দগুলো বের হয়েছে আর ওদিকে সুরাকার ঘোড়ার সামনের পাদ্বয় শক্ত জমিনে ধ্বসে গেল। সুবহানাল্লাহ!
.
নিচে পড়ে গেল সে। বেশ কয়েকবার তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করল, কিন্তু সফল হল না। তখন তার মনে দৃঢ় ধারণা জন্ম নিল, যে কেউ এই কাফেলার পিছু নিবে সে নির্ঘাত ধ্বংস হবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল, মুহাম্মদ (সা.) বিজয়ী হবেনই।
.
কাফেলাকে ধাওয়া করার পরিবর্তে তখন নিজের জানের ফিকির হয়ে গেল সুরাকার। ‘চাচা আপন জান বাঁচা’ অবস্থা তার। নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আবেদন করল সুরাকা। দয়ার সাগরে জোয়ার এসে গেল তখনও। ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলেন রহমতের নবী সা.। আসমানি গজবে ছেড়ে দেননি জানের শত্রুকেও। ক্ষমা করে দিলেন তাকে।
.
সুরাকার আবেদন গৃহীত হল। সুরাকা বলল,
(اكتب لي كتابا يكون بيني وبينك آية)
-“আমার জন্য একটা নিরাপত্তাপত্র লিখে দিন যা আমার আর আপনার মধ্যে বিশেষ নিশান হিসেবে থাকবে।”
রাসূলুল্লাহ সা. আবু বকর রা.এর গোলাম আমের ইবন ফুহাইরাকে নির্দেশ দিলেন,
- সুরাকাকে নিরাপত্তাপত্র লিখে দাও।
তখন সুরাকা কুরাইশের পরিকল্পনা এবং শতউট পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা.কে অবহিত করল। তাঁর খেদমতে বিভিন্ন পাথেয় ও পথের সরঞ্জাম পেশ করতে চাইল সে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা. কোনো ধরনের সরঞ্জাম নিতে সম্মত হননি। শুধু বললেন,
(أخف عنا)
-“আমাদের বিষয়টা গোপনে রেখো।”
.
সুরাকা নিরাপত্তাপত্রটি যত্ন করে রেখেছিল। আল্লাহর রাসূল সা. হুনাইন যুদ্ধের সময় জা‘রানায় অবস্থান করছিলেন। আনসারি সাহাবিদের একটি দল আল্লাহর রাসূল সা.এর প্রহরায় নিয়োজিত ছিল। যাতে বিনা অনুমতিতে কেউ ভিতরে যেতে না পারে। বনি মুদলিজের এই সর্দার সকল বাঁধা অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হয়। সাহাবায়ে কেরাম রা. তাকে বাঁধা দেন।(إليك, إليك, ماذا تريد؟) “আরে আরে, কোথায় যাচ্ছো। কি চাও তুমি?”
.
সুরাকা তার পকেট থেকে ওই নিরাপত্তাপত্রটি বের করে। ওদিকে আল্লাহর রাসূল সা.ও তার আওয়াজ শুনতে পান। সে তার দুই আঙ্গুলে ঐ পত্রটি উঁচু করে ধরল। অনেকটা উচ্চস্বরে বলতে লাগল,
-“হে রাসূলুল্লাহ! আমি সুরাকা ইবনু মালেক ইবন জু‘শাম আর এই হল আমার পত্র।”
আল্লাহর রাসূল সা. সুরাকাকে দেখলেন। তখন তাঁর মুখে মুচকি হাসি। তখন মনে পড়েছে সেসময়ের কথা যখন কুদাইদের এলাকায় এই বেদুইন তাঁর পিছু নিয়েছিল।
.
সেদিনও চাইলে তিনি প্রতিশোধ নিতে পারতেন। তার পূর্ণ ক্ষমতাও রাখেন তিনি। কি করে নিবেন ?! তিনি তো রাহমাতুল লিল আলামিন! বরং রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করলেন,
(هذا يوم وفاء وبر)
-“আজ ওয়াদা পালন, অঙ্গিকার পূরণের দিন। সৎকাজ ও উপকার করার দিন।” তাকে আমার নিকট আসতে দাও।
সুরাকা রাসূলুল্লাহ সা.এর নিকটবর্তী হয়। সালাম দিল তাঁকে। ইসলাম কবুল করে সাহাবি হবার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
.
সুপ্রিয় পাঠক! সুরাকা সেদিন জমিনে ধ্বসে যাবার গজব থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন মহানবীর দয়ার কারণে। সেদিনও অভিভূত হয়েছিলেন তাঁর অনুপম চরিত্রে। আজ তো এতোই প্রভাবিত হলেন যে, ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে নিলেন। বেঁচে গেলেন জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব থেকে। রাজিয়াল্লাহু আনহু।
.
আল্লাহর রাসূল সা.কে সুরাকা প্রশ্ন করেন,
- হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার উটের জন্য চৌবাচ্চায় পানি জমা করি। আমার উট ছাড়াও অন্যান্য লোকের উটও ওখানে চলে আসে। আমি যদি ওসব উটকে পানি পান করাই তা হলে কি আমার ছওয়াব হবে?
আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করলেন,
(في كل ذات كبد رطبة أجر)
“প্রতিটি জিনিস যার মধ্যে প্রাণ আছে তার উপকার করার মধ্যে ছওয়াব রয়েছে।”
৪৪০
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
একটি শিক্ষণীয় গল্প মৃত্যুর পূর্বে ৪ জন ফেরেস্তা যেভাবে জানিয়ে......
শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প আল্লাহর রাসুল সা. মক্কা থেকে হিজরত করে......
অাত্নশুদ্ধি অর্জন করতে পারলে মানবাত্মা পরলোকে পরমাত্মা মহান প্রভুর দীদার......
মহান অাল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমরা কোনো কোনো কারণে ভরসা......
এক রাজার দক্ষতা ও সফলতা এক দেশের রাজা ইন্তিকাল করার......
দাউদ (অাঃ) এর জমানায় এক সুন্দরী রমনীর কাহিনী হযরত দাউদ......
বিশ্বস্ত সহধর্মিণীর মধুময় স্মৃতি আল্লাহর রাসূল সা. পঁচিশ বছর বয়সে......
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা: আবদুল্লাহ নাম, সিদ্দীক ও আতীক......
দুনিয়া কাঁপানো সেই মালদ্বীপের ঘটনা . প্রায় পাঁচশত বৎসর আগের......
সত্যবাদিতা মানবজীবনের একটি অতি মহৎ গুণ। সত্যের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত......