সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

মাযহাব মানব মানতে হবে কেন
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : মঙ্গলবার ৩১/০৭/২০১৮

 ধর্মের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ধর্মকে পরিপূর্ণভাবে জানা। আর ধর্মকে পরিপূর্ণরূপে জানতে হলে ধর্মের মূল গ্রন্থের উপর ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে হবে। আর ইসলামের পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হলে কোরআন সুন্নাহের উপর গভীরভাবে গবেষণা ও অধ্যয়ন করা নিতান্তই দরকার। আর এটা সবার পক্ষে সম্ভব নয় যে, ধর্মের সকল বিষয়ে সূক্ষাতিসূক্ষ জ্ঞান ও উপলব্ধি নিজের মধ্যে ধারণ করবে। একদিকে কোরআন সূন্নাহর নিগুঢ় রহস্যাবলী সবার পক্ষে উদঘাটন করা সম্ভব নয়, কিন্তু ইসলামের সকল বিধি বিধান সকলের জন্য মেনে চলা কর্তব্য। এখন প্রশ্ন হল– যে সকল ব্যক্তি উক্ত বিধি বিধান উপলব্দির যোগ্যতা রাখেনা সে কিভাবে ইসলামের সকল বিধি বিধান মেনে চলবে? এখানেই মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা প্রস্ফুটিত হয়ে উঠে। আল্লাহর সৃষ্টিগত বিধান হল সকল মানুষ এক স্তরের জ্ঞানী ও সমযদার হবে না । তাই আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে আদেশ দিয়ে রেখেছেন -فااسءلو اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون অর্থাৎ যদি তোমরা না জান তাহলে জ্ঞানীদের কে জিজ্ঞাসা কর । যারা সকল শাখা মাসয়ালার জ্ঞান রাখে না তারা অধিক সমজদার ব্যক্তি থেকে বিধি বিধান জেনে নিবে এবং জেনে নেয়ার জন্য তাদের আনুগত্য করবে। সর্বজ্ঞানী আল্লাহ এরশাদ করেছেন- اطعوا الله و اطعوا الرسول و اولي الامر منكم অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে উলিল আমর তথা জ্ঞানী ব্যক্তিদের আনুগত্য কর । আর এটাই তো মাযহাব ।

আবার আমাদের ধর্ম গ্রন্থাদিতে এমন কিছু বিধি বিধান রয়েছে ,যেগুলোর ব্যপারে ইমামগণের মধ্যে মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় যাহা خير القرون তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার যুগ সাহাবার যুগ ও তাবেয়ীগণের যুগ থেকে ই চলে আসছে । এটা এ জন্য যে, একই আমল দয়াল নবীজি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করেছিলেন । আবার এমন কিছু বিষয় রয়েছে যে ব্যপারে সুস্পষ্ট কোন আয়াত ও হাদীছ এবং সাহাবা কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর ঐক্যমত ও আসার পাওয়া যায় না । যেমন-আল্লাহ পাকের কথা -والمطلقات يتربصن بانفسهن ثلاثة قروء সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতের মধ্যে قروء শব্দটি নারীদের ঋতুস্রাব কালীন সময় নাকি ঋতুমূক্ত পবিত্রাবস্থা বুঝানো হয়েছে ? এ প্রশ্নের জট খোলা কি সকলের জন্য সম্ভব? অবশ্য ই না । তাই কোর আর আনে আদেশকৃত اهل ذكر তথা জ্ঞানীব্যক্তি ও اولو الامر তথা বিধি বিধানের ক্ষেত্রে আদেশ দানের উপযুক্ত ব্যক্তির দারস্থ হতেই হবে । শরীয়তের পরিভাষায় এটাই মাযহাব ।

অনুরূপভাবে দেখুন হাদীছে পাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে বলেছেন-من كان له امام فقراءة الامام له قراءة যার ইমাম রয়েছেন তার জন্য ইমামের কেরাত ই তার কেরাত । অপর হাদীছে রয়েছে-لا صلوة لمن لم يقراء بفاتحة الكتاب অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির নামাজ নাই যে নামাজে সূরা ফাতেহা পড়ে নাই ।লক্ষ্য করুন প্রথম হাদীছে দেখা যায় নবীজি বললেন ইমামের কেরাত ই মুক্তাদির কেরাত ।মানে ইমামের পেছনে মুক্তাদি কেরাত পড়বেন না । আবার দ্বিতীয় হাদীছে বললেন নামাজি নামাজে সূরা ফাতেহা না পড়লে তার নামাজ নামজ ই না । এই যে বাহ্যিক বৈপরিত্য এর সূরাহা করা কি কোন সাধারন মুসলিমের পক্ষে সম্ভব ? আদৌ সম্ভব নয় । ইজতিহাদের যোগ্যতা সম্পন্ন ইমাম গন ইজতিহাদের মাধ্যমে শরয়ী ক্বিয়াস দ্বারা এ সকল বিরোধপূর্ণ বিষয়ে পূর্ণ মনোজ্ঞ সমাধান বের করে রেখেছেন। আর কোরআনে, হাদীছে, সাহাবাগণের আমলে কিছু না পাওয়া গেলে ইজতিহাদের দ্বারা ক্বিয়াস করে সমাধান বের করা নবীজির হাদীছ দ্বারা স্বীকৃত । এ জন্য ই মাযহাবের ইমামগণের ফাতওয়ার অনুসরণ করতে হবে । আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ ও তাই। গায়রে মুজতাহিদ ব্যক্তি একজন মুজতাহিদ ইমামের অনুসরন করা অপরিহার্য ও নিরাপদ ।

কারণ কোরআন সুন্নাহের সুক্ষ্ম বিষয়াদির কোন আয়াত ও হাদীছ ناسخ কোনটি منسوخ কোনটি আগের কোনটি পরের কোনটি حقيقت কোনটি مجاز কোনটি صريح কোনটি كنايه কোনটি مشترك কোনটি موءل কোনটি ظاهر কোনটি نص এবম্বিদ বিষয়ে একজন সাধারণ লোক দূরের কথা বর্তমান যুগের অনেক নামী দামী আলেম ওলামা ইতো বেখবর । তাইতো দেখা যায় একটি আয়াত ও একটি হাদীছের বাংলা অনুবাদ পাইয়াই অনেকে ফাতওয়া দিয়ে বসেন। অথচ তিনি মূলনীতি জানেন না যে এটা তার জন্য জায়েয নয় । একজন বাংলা শিক্ষিত মডার্ণ ব্যক্তি আমাকে বলে ই ফেললেন –“ আমি আপনার মাযহাবের কোন ইমামের লোক নই”। অর্থাৎ - তিনি মাযহাব মানেন না । আজিব! তারপরে তিনি আমাকে বললেন আমি নাকি বিদয়াত বিষয়ে ন্যুনতম জ্ঞান ই রাখি না ! অবশ্য উনার উদ্দেশ্যে আমি সামান্য লিখার পর তিনি আমাকে আনফ্রেন্ড করে উদাও হয়ে গেছেন। জানি না উনি এখন উনার জ্ঞান কে কোথায় খয়রাত করতেছেন।

আসুন এবার মাযহাব মানার ব্যপারে কোরআন হাদীছ ও ইজমা কিয়াসের ভিত্তিতে কিছু আলোচনা করি ।

আল্লাহ পাকের ঘোষণা -ومن يشاقق الرسول من بعد ما تبين له الهدي و يتبع غير سبيل المومنين نوليه ما تولي و نصله جهنم و ساءت مصيرا অর্থাৎ - যে ব্যক্তি সরল পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পর রাসূলের বিরোদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের অনুসৃত পথ ব্যতিরেকে অন্য পথের অনুসরণ করে ।আমি তাকে সেদিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে । আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব । আর তা নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল। (সূরা নিসা-১৫)

উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী (রাঃ) তাফসীরে মাযহারী ১ম খণ্ড ৯১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন -هذه الاية دليل علي حرمة مخالفة الاجماع لانه تعالي رتب الوعيد علي المشاقة و اتباع غير سبيل الموءمنين অর্থাৎ- উল্লেখিত আয়াত ইজমার বিরোদ্ধাচরন করা হারাম হওয়ার প্রমান বহন করে। কেননা আল্লাহ তা’লা এ আয়াত দ্বারা রাসূলের বিরোদ্ধে ও মু’মিনদের বিপরীত পথে চলার ব্যপারে ভীষণ শাস্থির অঙ্গীকার করেছেন । উল্লেখ্য যে মাযহাব মানার ক্ষেত্রে মু’মিগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আর তাফসীরে মাযহারী মাযহাব না মানা ব্যক্তিগণের ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব।

বুখারী শরীফের হাদীছ নং- ৩৬০৬ এ উল্লেখ রয়েছে - قال تلزم جماعة المسلمين امامهم অর্থাৎ- তিনি বলেন(রাসূল সাঃ) তুমি অবশ্য ই মুসলিমদের জা’মাত ও তাদের ইমামের অনুসরণ করবে । উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ,বিশ্ব জুড়ে মুসলিমগন চার মাযহাবের ইমামগনকে ইমাম মেনে নিয়েছেন নির্দ্বিধায় ।

আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন -يوم ندعو كل اناس بامامهم অর্থাৎ আমি কিয়ামত দিবসে মানুষদের কে তার ইমাম সহকারে আহবান করব । (সূরা ইসরা -৭)

আল্লাহ ফরমান - يا ايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول و اولي الامر منكم অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের এবং উলিল আমরের অনুসরণ কর।(সূরা নিসা -৫৯)

উক্ত আয়াতে اولي الامر এর তাফসীরে ইমাম জাসসাস (রাঃ) বলেন -يدل علي ان اولي الامر هم الفقهاء لانه امر ساءر الناس بطاعتهم قال الله تعالي فاسءلو اهل الد كر ان كنتم لا تعلمون অর্থাৎ اولي الامر উলুল আমর দ্বারা ফোক্বাহায়ে কেরামকে নির্দেশ করা হয় কারণ আল্লাহ তা’লা বলেন –“ তোমরা জ্ঞানীদের কে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান “।সূরা আম্বিয়া-৭ ( তাফসীরে কবীর )

সাহাবাগণের যুগ থেকেই মাযহাবের অনুসরণঃ সুনানে বায়হাকী ১২৫৫১ নং হাদীছে ফারূকে আযম (রাঃ)জাবিয়া নামক স্থানে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন - من اراد ان يسءل عن القران فاليات ابي ابن كعب و من اراد ان يسءل عن الفراءض فاليات زيد ابن ثابت ومن اراد ان يسءل عن الفقه فاليات معاذ ابن جبل ومن اراد ان يسءل عن المال فلياتني অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোরআন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায় সে যেন উবাই ইবনে কা’বের কাছে যায় । আর যে ব্যক্তি ইলমে ফারাইদ্ব তথা উত্তরাধীকারী সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করতে চায় সে যেন যায়েদ ইবনে সাবেতের কাছে জেনে নেয় । যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বহ সম্পর্কে জানতে চায় সে যেন মুয়াজ ইবনে জাবাল থেকে তা আয়ত্ব করে নেয় । আর যে ব্যক্তি মাল মাত্তার ব্যপারে জানতে চায় সে যেন আমি ওমরের কাছে চলে আসে । দেখুন এখানে সাহাবীগণ কেও জ্ঞানীদের অনুসরণের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ,যা কোরআনের আদেশের ই প্রতিফলন বটে । চলবে...

৮৪৮

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭