সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ইবাদাতের রুহ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বুধবার ০৮/০৮/২০১৮

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্য বানিয়েছেন এবং মেহেরবানী করে প্রত্যেক ইবাদতের একটা সময় ও সুরত, একটা আঙ্গিক কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নামাযের আলাদা সূরত ও সময় রয়েছে, রোযার রয়েছে, হজের রয়েছে। ইবাদতকরতে হলে এই সব সূরতের ভিতর, আঙ্গিক কাঠামোর ভেতর করতে হবে, এর বাইরে ইবাদত হয় না। এর মাঝে মাঝে কিছু সময়তিনি আবার অন্যান্য কাজেরও অনুমতি দিয়ে রেখেছেন।


আল্লাহর মেহেরবানী, আল্লাহর ফজল ও করম এটা।  আল্লাহ  তা’আলা আমাদেরকে হুকুম করতে পারতেন, যে তুমি তো কোনোমুহূর্তই আমার ধ্যান থেকে খালি থাকবে না।  আল্লাহ  তা’আলা ইবাদতের নামে কিছু মুহূর্ত আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন এবং চান, যেএই ইবাদতের সময়টা, এই মুহূর্তগুলোয় আমার ধ্যান থেকে যেন আল্লাহ গায়েব না থাকেন। আমি যেমনভাবে আল্লাহ তা’আলারনিগাহবানীর ভিতরে আছি, ঠিক আমার ধ্যানের বাইরেও যেন আল্লাহ তা’আলা না থাকেন। এই ইবাদতগুলো এক দিকে যেমনবান্দার গোলামীর প্রকাশ, আরেকদিকে হলো গোলামের পক্ষ থেকে মালিকের জন্য কিছু হাদিয়া, উপহার। আল্লাহ তা’আলাকে কিছুখাদ্যদ্রব্য উপহার দেয়া সম্ভব নয়, একটা ফুল দিয়ে আল্লাহ তা’আলাকে ভালোবাসা দেখালামÑ তা হয় না। বান্দার পক্ষ থেকেইবাদাতগুলো এই যে নামায বলুন, রোযা বলুন এইগুলো হলো, এক দিকে যেমন তার গোলামীর প্রকাশ, আরেক দিকে হলো এগুলোআল্লাহ তা’আলার সামনে বান্দার পক্ষ থেকে একেকটা হাদিয়া। হে আল্লাহ! তোমাকে তো আর কিছু দিবার আমার নেই, আমি যেগোলাম এ স্বীকৃতির প্রকাশটুকুই তোমার সামনে আমি হাদিয়া হিসেবে পেশ করছি, উপঢৌকন হিসেবে, উপহার হিসেবে দিচ্ছি।


মানুষ যখন কোনো কিছু কাউকে উপহার দেয়, তখন সে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। ফুলের স্তবক যখন বানায় তখন সেঅত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। এমনিতে সাধারণত নিজের ভোগের জন্য কিছু করে বা নিজের জন্য কিছু করে, তাহলে এতসতর্কতা অবলম্বন করে না, কিন্তু কোনো মেহমানের জন্য, কোনো সম্মানী লোকের জন্য, কোনো ভালোবাসার পাত্রের জন্য সে যখনকোনো উপহার ঠিক করে, তখন এটাকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখে যে কোথাও কোনো বিশ্রী ময়লা লেগে রইল কি না! কোথাওকোনোরূপ বিশৃঙ্খল হয়ে রইল কি না, কোথাও কোনো পাপড়িটা অসজ্জিত রয়ে গেল কি না, কোথাও কোনো অবস্থাটা আমারভালোবাসার পাত্রের পছন্দ হবে না, এমন কিছু হয়ে গেল কি না, সে জপতে থাকে, ডরাতে থাকে, একটা ভয় একটা আশঙ্কা তারভিতরে কাজ করে এবং তার পরিপূর্ণ শক্তি দিয়ে সে এই উপহারটাকে সুন্দর করে সাজায়, তার পরিপূর্ণ মনযোগ দিয়ে সাজায়, তারপরিপূর্ণ নিবেদন দিয়ে সাজায়। এক দিকে যেমন তার ভালোবাসা থাকে, আরেক দিকে তার আশঙ্কা থাকে, আরেক দিকে তারনিবেদন থাকে। এর মধ্যে কোনোরূপ ত্র“টি-বিচ্যুতি হয়ে যাচ্ছে কি না এ দিকে তার পরিপূর্ণ লক্ষ থাকে।


কিন্তু আমরা আল্লাহ তা’আলার এমন আশেক, এমন প্রেমিক, এমন বান্দা যে আমাদের উপহারগুলো আল্লাহ তা’আলার কাছে যেপেশ করছি, এ ব্যাপারে কোথাও কোনো আমাদের নজর নেই। যারা কোনো ইবাদত করি না তাদের প্রশ্ন নেই, কিন্তু যারা ইবাদত করিতাদেরও যেনতেন প্রকার গা ছাড়া ভাব নিয়ে করি। এর আগেও কোনো প্রস্তুতি নেই, এর আগেও কোনো চিন্তা নেই, মনের মধ্যেকোনো শঙ্কা কাজ করে না, কোনো মনোযোগিতা কাজ করে না, পরেও কোনো চিন্তা নেই। একটা উদাসীন যেনতেনভাবে আমরাআল্লাহকে হাদিয়া পেশ করি। অথচ আল্লাহ হলেন সবচেয়ে বড়।


আল্লাহ আমাদের রুচি বানিয়েছেন, যে সামান্যতম একটা বালির কণাও যদি থাকে তাহলে জিহ্বা তা অস্বীকার করে। জিহ্বা তাগ্রহণ করে না, টের পেয়ে যায় যে, চালটা আজ ধুতে গিয়ে যিনি পাক করেছেন, গৃহিণী মনোযোগ দেননি, তাই চালটা-ভাতটা কচকচকরছে। কোথাও নজরে আসছে না, এরপরও আল্লাহ তা’আলা এত অনুভূতিপ্রবণ আমাদের বানিয়েছেন যে, সামান্য জিহ্বায় দেয়ামাত্রই আমাদের জিহ্বা সেটাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। একটা পরিমাণমতো সবকিছু আমার জিহ্বাকে দিতে হয়, নাহলেজিহ্বা কী করে, অস্বীকার করে। আপনি ঝাল যদি বেশি দিয়ে দেন, জিহ্বা অস্বীকার করবে, লবণ যদি আপনি বেশি দিয়ে দেন জিহ্বাঅস্বীকার করবে। ওয়াক্ করে ফেলে দিবে, আপনি জবরদস্তি করে গলার ভিতরে এ খাদ্যকে আপনি ঢুকাতে পারবেন না। সবটাতেইএকটা জিহ্বার এত বেশি খেয়াল করতে হয়। একটা অঙ্গকে আল্লাহ তা’আলা এত অনুভূতিপ্রবণ বানিয়েছেন, সামান্য একটা অঙ্গ।আর তার খেয়াল করতে গিয়েই আপনার পরিমাণে, অনুমান সবকিছুতে আপনার খেয়াল করতে হয়। একটু অমনোযোগী হলেই, আগুনে জ্বাল দিতে গিয়ে একটু বেশি জ্বাল দিলেই, বলে পোড়া পোড়া লাগছে, গ্রহণ করতে চায় না, আজীব ব্যাপার।


যিনি বানানেওয়ালা তার অনুভূতি কত সূক্ষ্ম! আমাদের রুচি যদি এত সূক্ষ্ম হয়ে থাকে, আমাদের রুচিবোধ যদি এতটা উন্নত হয়েথাকে, তাহলে যিনি এই রুচির স্রষ্টা, যিনি একটা গোশতের টুকরার মধ্যে এত রকমের জিনিস রেখে দিয়েছেন যে, যাই স্পর্শ করানোহয়, সঙ্গে সঙ্গে এটা তিতা না এটা মিষ্টি, না এটা লবণাক্ত, না এটা টক, না এটা কী? সঙ্গে সঙ্গে এটা অনুভব করছে। অথচ এটাএকটা গোশতের টুকরা মাত্র। আপনি একটি জিহ্বাকে কেটে ফালি ফালি করে ফেলেন, টুকরা টুকরা করে ফেলেন, রেজা রেজাকরে ফেলেন, কোথায় তার মিষ্টির জায়গাটা, কোথায় তার তিতার জায়গাটা, কোথায় তার টকের জায়গাটা, আপনি খুঁজে পাবেন? কিন্তু যতদিন আল্লাহ তা’আলা আপনার মুখের মধ্যে একটাকে লাগিয়ে রেখেছেন আপনার রুচিবোধ এত সূক্ষ্ম, যে সঙ্গে সঙ্গেইআপনি সবকিছু টের পেয়ে যাচ্ছেন। কোনো জিনিসই আপনার মেজাজের বাইরে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জিহ্বা অস্বীকারকরছে, আপনি জবরদস্তি গলা দিয়ে ঢুকাতে পারছেন না। কোনোরকমে যদি গলা দিয়ে ঢুকাতে পারেন, পরে আর কোনো তিতাওনেই, মিঠাও নেই, কী বলেন? গলার ভিতরে গেলে কোনো তিতা মিঠা আছে? আজীব শান আল্লাহ তা’আলার। কিভাবে আল্লাহতা’আলা বানিয়ে রেখেছেন, এর বাইরে লাগালেও কোনো তিতা মিঠা নেই, এর গোড়াটা পার হয়ে গেলেও কোনো তিতা-মিঠা নাই।আপনাকে এত অনুভূতিসম্পন্ন করে আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছেন।


এখন আল্লাহর মেজাজের বাইরে যখন আপনার ইবাদতটা হবে, আল্লাহর রুচি কি সেটাকে গ্রহণ করবে? এই হাদিয়া কি আল্লাহর রুচিঅনুসারে হলো কি না, আল্লাহর মর্জি মোতাবেক হলো কি না দেখতে হবে না? আল্লাহর মেজাজ অনুসারে হলো কি না, আপনি কিএতই সহজ মনে করেছেন? আপনার জিহ্বাকে আপনি গ্রহণ করাতে পারেন না, আর আপনি সব আল্লাহর ওপর ঠেলে দিচ্ছেনগ্রহণ কর, গ্রহণ কর। আল্লাহ তা’আলার মানশা ও মেজাজের ওপর আমি কতটা অত্যাচার করছি, কতটা জুলুম করছি! আমারখাদ্যের সময় আশেপাশে যদি দুর্গন্ধযুক্ত বিষয় থাকে, আমার কাছে নেই, আশপাশে কোনো দুর্গন্ধযুক্ত কোনো জিনিস যদি থাকে, আমি ওই জায়গাটাকেও আমার খাদ্যের জন্য গ্রহণ করি না। চতুষ্পার্শ্বে আমার খাদ্যের পরিবেশ বানাতে হয়। যদি পরিবেশ না থাকে, তাহলে মজাদার খাদ্য হলেও আমি জায়গাটাকে আমার খাদ্যের জন্য গ্রহণ করি না। আমি আল্লাহর ইবাদত করি, না তার কোনোপরিবেশ আছে, না তার কোনো রুচিবোধ আছে, না তার কোনো সূক্ষ্মতা আছে, না সেটা আল্লাহর মর্জির কাছে যাচ্ছে কী যাচ্ছে নাতার খেয়াল নেই। এটা কি আল্ল-াহর ওপর আমার জুলুম নয়?


আল্লাহর ওপর তো কেউ জুলুম করতে পারে না, মূলত আমি নিজের ওপরই নিজে জুলুম করছি। মৌলিকভাব আমি নিজেরওপরই জুলুম করছি।


এই যে ধরুন, নামাযের মতো এত বড় ইবাদত, সমস্ত ইবাদতের মাথা। যত রকমের ইবাদত আছে সব ইবাদতের প্রধান হলো আল্লাহতা’আলার কাছে নামায। সেই এক নামাযের ভিতরের কথা আমরা বাদ দিলাম, যে মনোযোগ কোথায় থাকে, আচ্ছা যেখানেইথাকÑবাজারে থাক, ডালে থাক, পালায় থাক, নদীতে থাক, মনোযোগ যেখানে ইচ্ছা সেখানেই থাক, মালয়েশিয়ায় থাক, সিঙ্গাপুরেথাক, সৌদি আরব থাক, যেখানে ইচ্ছা সেখানেই থাক, কিন্তু এর যে কাঠামোটা, কাঠামোটাওতো সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে হবে। ভাই, আপনার কাছে একটা যেনতেন প্লে¬ট দিলে আপনি ছুড়ে ফেলে দিবেন যে, মেহমানের ইজ্জত করা হলো না। প্লে¬টটায় আপনিখাবেন নাকি? প্লে¬টটা যদি ময়লা থাকে আপনি খাবেন? প্লে¬ট আপনি খান না, এরপরও আপনার কাছে উত্তম অবস্থায় প্লেটটাকেপেশ করতে হয়। তাহলে নামাজের কাঠামোটা এটাকে অন্তত যদি শুদ্ধ না করি, তাহলে নামাযের প্রাণ কোথায় হবে? কাঠামোর বাইরেকোনো জায়গায় প্রাণ আসবে? এখন যদি আমার একটা হাত ল্যাংড়া, পা ল্যাংড়া হয়, আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেককে হেফাজতকরুন, কারো সন্তান যদি এমন হয়ে যায়, কত চিন্তা তার, পছন্দ হয় না, পা ল্যাংড়া, হাত ল্যাংড়া। আপনাকে যদি পছন্দ করতে বলাহয় যে, একটা বিবি সাহেব পছন্দ করেন, এক হাজার বিবি সাহেব দেখা হয়, এক হাজার মেয়েকে দেখে পছন্দ হতে চায় না, বলে এরচোখটা এইদিকে, ওর একটু হাতের আঙুলগুলো জানি কেমন দেখলাম, রঙ ফর্সা হলেও নাকটার সাইজটা যেন কেমন! ইয়াসুবহানাল্ল¬াহ! একটার পর একটা মেয়ে দেখতে দেখতে হয়রান হয়ে যায়। এখানে আপনি একটা পা ল্যাংড়া, ঠোঁট বাঁকা এরকমঠুণ্ডা পছন্দ করবেন আপনি? কাঠামোটাও পছন্দ নয় আপনার। এখানে ল্যাংড়া নামায যে আল্লাহকে দিচ্ছি, নামাযের পা নেই, নামাযের হাত নেই, নামাযের কান নেই, নামাযের শরীর নেই,  একটা ল্যাংড়া নামায, কানা নামায, বোবা নামায, অন্ধ নামায আমরাআল্লাহ তা’আলাকে পেশ করছি। কাঠামোটাও ঠিক করিনি। সেটা আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন?


হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, নামায পড়ামাত্র নামাযের একটা চেহারা আল্লাহ তা’আলার কাছে হয়। একটা সুন্দর চেহারা হয়। আপনি যেধরনের নামাযটা পড়বেন, ঠিক সেই ধরনের চেহারা হবে। আল্লাহ তা’আলার কাছে এটা অঙ্কিত হতে থাকে। চেহারা হয়, শরীর হয়, একটা গঠন কাঠামো হয়।


এক বুযুর্গ নামাযের মনযোগ হওয়ার জন্য খুব মনোযোগসহকারে নামায পড়লেন। ভালো করে নামায পড়লেন, কিন্তু মনোযোগিতাসৃষ্টি করার জন্য চোখটা বন্ধ করে রাখলেন। এর পর উনি মোরাকাবা করলেন যে, আমার নামাযের চেহারাটা কী হয়েছে দেখিতো, নামাযের শরীরটা কী হয়েছে দেখি তো! দেখলেন, একটা সুন্দর হুরের চেহারা হয়েছে, শরীর হয়েছে, কিন্তু এই হুরটা অন্ধ। এটা অন্ধহয়ে গেছে। জলদি জলদি এসে তার শায়েখের কাছে বললেন যে, হুজুর অবস্থা তো এই। উনি শুনেই বললেন, তুমি কি নামায পড়ারসময় চোখ বন্ধ করে পড়ছিলে? বললেন, হ্যাঁ হুজুর! মনোযোগ বেশি করার জন্য চোখ বন্ধ করে পড়লাম। শায়েখ বললেন, তুমি যেরকম নামায বানিয়েছ, তোমার নামাযের চেহারাও আল্লাহ তা’আলার কাছে এমন হয়ে গেছে। নামায অন্ধ বানিয়ে ফেলেছ।


নামাযটা এমন একটা আমল, যে আমলটার মধ্যে প্রতিটা অঙ্গেরই একেকটা আলাদা আমল আছে। রোযা বলেন, যাকাত বলেন, প্রত্যেকটা অঙ্গ তার মধ্যে ব্যবহৃত হয় না। বিশেষ বিশেষ অঙ্গ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নামায এমন একটা ইবাদত যে ইবাদতের মধ্যেনাকের ব্যবহার আছে, চোখের ব্যবহার আছে, কানের ব্যবহার আছে, হাতের ব্যবহার আছে, আঙ্গুলের ব্যবহার আছে, পায়ের ব্যবহারআছে, হাঁটুর ব্যবহার আছে, কনুইর ব্যবহার আছে, কপালের ব্যবহার আছে। প্রত্যেকটা অঙ্গের আলাদা একেকটা ব্যবহার হয় এবংএই ব্যবহারের রূপটা রাসূলে পাক সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম দেখিয়ে গিয়েছেন।


 রাসূলে পাক সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল¬াম নামাযের মনোযোগিতার কথা বলেছেন, সাথে সাথে চোখের আমলসম্পর্কে বলেছেন যে, চোখ খোলা থাকবে। তুমি যখন দাঁড়াও তখন তোমার চোখ থাকবে সিজদার দিকে, তুমি যখন রুকুতে যাওতখন তোমার চোখ থাকবে পায়ের দিকে, তুমি যখন সিজদায় যাও তখন তোমার চোখের আমল হবে নাকের ডগার দিকে, তুমিযখন বস তখন তোমার চোখ থাকবে তোমার কোলের দিকে। চোখ খোলা থাকবে, কারণ নামায তোমাকে নিয়ন্ত্রণ শিখাচ্ছে। নামাযেদাঁড়িয়েছÑযেভাবে তোমার যবানকে নিয়ন্ত্রণ করেছ, যেভাবে তোমার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করেছ, পাকে নিয়ন্ত্রণ করছ, তোমার চোখকেওতুমি নিয়ন্ত্রণ কর, এখানে তুমি অন্ধ হওয়ার অবকাশ নেই। তোমার বাইরের জীবনে যেন তোমার চোখকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার, তাইনামাযের মধ্যে তুমি নিয়ন্ত্রণটা শিখে নাও যে, যখন দাঁড়াবে, এ দিকে ও দিকে যেন তোমার চোখ না যায়। বরং তোমার চোখ যেন পুরোসিজদার দিকে থাকে। নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রণে তুমি অভ্যাস কর। তুমি যখন রুকুতে যাবে তোমার চোখ যেন সিজদার দিকে না যায়।রুকুতে যাওয়ার পরে তুমি যদি মনে কর, দাঁড়ানোর সময় সিজদার দিকে তাকিয়েছি, রুকুর সময়ও তো আমি সিজদার দিকেতাকিয়েছি, গুনার কাজটা কি করলাম আমি! না, না, না। এই সময়ের নিয়ন্ত্রণ হলো তোমার পায়ের দিকে তাকাও, আবার যখন তুমিসিজদায় চলে গেলে, এ সময় তুমি চোখ বন্ধ রাখতে পার না, নাকের ডগার দিকে তাকাও তুমি। আবার যখন বসবে, তখন আরঅন্য দিকে তাকাবে না, তোমার কোলের দিকে তাকাও তুমি।


শায়েখ বললেন, তো চোখ খোলা রাখার হুকুম ছিল নামাযে। আমার মনে হয় তুমি যখন নামাযটা পড়েছ, মনযোগ সৃষ্টি করার জন্যনিশ্চয়ই চোখ বন্ধ করে নামায পড়েছ। বলল, হ্যাঁ হুজুর, চোখ বন্ধ করে নামায পড়েছি। আচ্ছা। এ কারণে আল্লাহর কাছে তোমারনামাযের চোহারাও অন্ধ হয়ে গেছে।


আমরা কেউ খেয়াল করি না, যে নামাযের একটা চেহারা আল্লাহর কাছে হচ্ছে। নামাযটা ল্যাংড়া হচ্ছে কি না, নামাযটা বোবা হচ্ছেকি না, নামাযটা বধির হচ্ছে কি না, নামাযের পা মিল হচ্ছে কি না, লুলা হচ্ছে কি না, এ দিকে আমাদের কারো কোনো খেয়াল নেই।নামাযটা পড়লাম, এক দিনও চিন্তা করিনি, নামাযটা পড়ার পরে এটা আল্লাহ তা’আলার সামনে কী চেহারা নিয়ে গেল, কী রূপ নিয়েগেল? আমরা নামাযের সময় অনেকেই মনে করি, যে আমার কনুই আমি যেখানে ইচ্ছা রাখব, তাই একদম কনুইকে মাটির সঙ্গেমিশিয়ে দিই, ঠিক না? তাহলে আজকাল অনেক পুরুষ মহিলা হয়ে যায় আর অনেক মহিলা পুরুষ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে পত্রিকায়দেখা যায় যে অনেক মহিলা কী হয়ে গেছে, পুরুষ হয়ে গেছে। আবার অনেকে পুরুষ হয়ে বড় হয়েছিল এখন সে মহিলা হয়ে গেছে।মহিলাদের নামায হলো যে তোমার নামাযের সময় কনুইটাকে যমীনের সঙ্গে বিছিয়ে রাখতে হবে, এটা হলো মহিলাদের নামায। তুমিওযে কনুইটাকে যমীনের সঙ্গে বিছিয়ে রাখলে, আল্লাহর কাছে এটা এতক্ষণ পুরুষের নামায ছিল এখন এটা মহিলা হয়ে উঠে যাবে। ইন্নালিল্ল¬াহ...।


এই যামানাটা বড় মুশকিলের যামানায় পড়ে গেছি। কে কোন সময় মহিলা হয় কে কোন সময় পুরুষ হয়, এটার যেমন খেয়াল নেই, হঠাৎ পত্রিকায় খবর আসল বেটা মহিলা হয়ে গেছে। পত্রিকায় খবর আসল, বেটি পুরুষ হয়ে গেছে। ঠিক এরকমই আমার নামাযটিযে মহিলা নামায হয়ে যাচ্ছে এটারও আমার খেয়াল নেই। এতক্ষণ দাঁড়ানোর সময় পুরুষ ছিল সেজদার সময় মহিলার নামায হয়েগেছে, এখন একটা বস্তু যদি বানানো হয় যে এর অর্ধেক মহিলা অর্ধেক পুরুষ, তাহলে কাণ্ডটা কী দাঁড়াবে? কাণ্ডটা কী হবে? এখনআপনার নামাযেরও অর্ধেক চেহারা হবে পুরুষের, আরে! সেজদার সময় গিয়ে দেখা যাবে মহিলা হয়ে গেছে। বুঝেন তো দেখি, ফেরেশতাদের কাছে কী রকম লাগবে?


ঠিক, এমনিভাবে নামাযের মধ্যে প্রত্যেকটা অঙ্গের একেকটা আমল আছে। আপনার হাতের অঙ্গুলিগুলো কোথায় থাকবে সিজদারমধ্যে, বিছানো থাকবে, খোলা থাকবে। এখন কেউ যদি হাতের আঙ্গুলগুলোকে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখি, মুঠ করে রেখে দিলাম, নামাযেরসুরত হবে কী? তার নামাযের আঙুল নেই। এখন আপনার খুব পছন্দ করে একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন জামাইয়ের কাছে, এবেটা একটা লম্বা স্যুট পরে এসেছিল, আজকাল কোন সময় কোন স্টাইল হয় তাতো জানেন না, তাই আপনি মনে করেছিলেন, স্টাইলটা বুঝি এখন হাত ঢেকে পরার স্টাইলই বুঝি। পরে যখন হাত তুলল, দেখা গেল তার চার আঙুল নেই, বিয়ে তো দিয়েদিয়েছেন। পরে হায় হায় করলে হবে? গোস্সা করলে হবে? তো আপনি যখন মুঠ করে নামায পড়লেন, আল্লাহর কাছে নামাযেরসুরতও হয়ে যাবে কী? এ নামাযের হাতের আঙুল নেই, সব আঙুল কাটা। কী দাঁড়াবে তখন?


নামাযের প্রত্যেকটি বিষয় চিন্তা করে করে আমাদের আদায় করতে হবে। যদি তা না করি তাহলে নামায একটা কিম্ভূতকিমাকারচেহারা হয়ে আল্লাহ তা’আলার সামনে যাবে। কোনো নামায অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অনেকে দেখি সিজদায় যায়, নাক লাগায় না। এমনগভীর সিজদা দিচ্ছেÑসিজদার সময় শুধু কপাল লাগিয়ে রেখেছে আর নাকটাকে তুলে রেখেছে। আরে ভাই, আল্লাহর সামনে তোতোমার নাকটাকে ঘষবে এটাই আল্লাহর গোলামী। এখন তোমার নামায যখন আল্লাহর কাছে যাবে, সর্বনাশ, নাক ছাড়া হবে, নাকনেই। এখন তোমার চেহারা যদি এরকম হয় যে তোমার নাক কাটা। কারো সামনে যেতে পারবে? কী অবস্থা দাঁড়াবে? এখন তোমারনামাযটা ভীষণ আকৃতির হয়ে গেছে। নামাযের কী নেই? নাক নেই। তাই সব সময় সিজদা দিতে গিয়ে, কপালও যেমন রাখতে হবে, নাকও রাখতে হবে। আবার নাক কেবল ছুঁয়ে রাখলেই হবে না, সিজদা হবে না। নাক রাখতে হবে নাকের যে হাড্ডিটা আছে এহাড্ডিটাকে রাখতে হবে। হাড্ডিটা ছোঁয়াতে হবে যমীনের মধ্যে। তখন নাক রাখা হবে। কেবল নাকটা কোনো রকমে রেখে দিলেনআপনি, নাকটা তুলে রাখলেন, হবে না।


ঠিক এমনিভাবে যতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপনার থাকবে ব্যবহার করতে হবে। আপনার দাঁড়ানো। অনেকে নামাযে দাঁড়ায় একজায়গায়, শেষ করে আরেক জায়গায়। আজীব আজীব ব্যাপার! নামাযের মধ্যে আসলে এত হাজার ভঙ্গি দেখা যায়, যেমনআল্ল¬াহু আকবার বলে নামাযে এখানে দাঁড়িয়েছে, একবার পা দিয়ে ওখানে চলে গেল, আরেকবার সিজদা দিয়ে উঠে এইজায়গায় দাঁড়িয়ে গেল, তার পা এক জায়গায় আর থাকতে চায় না। নাড়াচাড়া করে, এ জায়গায় যায়, ওই জায়গায় যায়, এখনআপনার সামনে যদি কেউ কাঁপতে কাঁপতে আসে, কী অবস্থাটা দাঁড়াবে আপনার? সে দাঁড়াতেই পারে না, পড়ে পড়ে যায়, কাঁপতেকাঁপতে যায়, যে এই নামায ফেরেশতার কাছে যাবে, কাঁপতে কাঁপতে, এটা দাঁড়াতেও পারে না, একবার এখানে পা দেয় আবারওখানে পা দেয়। দেখেন নাÑলুলা মানুষ যাদের পায়ে জোর নেই, হাঁটুতে জোর নেই ওরা যখন হাঁটে, তখন মনে হয় এক পা এখানেআরেক পা ওখানে, কী রকম একটা কিম্ভূৎকিমাকার দেখা যায় না? তো আমার যদি এ অবস্থা হয় তাহলে কী হবে, এক পা এখানে, আরেক পা ওখানে, আরেক পা সেখানে। সুরতটা কী হবে? তাই বলা হয়, নামায যদি ঠিক না হয়, এটা যখন হাদিয়া পেশ করা হয়আল্লাহ তা’আলার কাছে। আল্লাহ বলেন, এটা ছুড়ে ফেলে দাও। হাদিয়াটা হয় নেই, তাই ছুড়ে ফেলে দাও। এই যে বলে, হুজুর এতনামায পড়ি তবুও তো কলব ঠিক হয় না, এত নামায পড়ি তবুও তো শান্তি লাগে না। নামায পড়লে না অভাব দূর হয়, অমুক হয়, তমুক হয়? হাদীসের মধ্যে পাওয়া যায়, ফাযায়েলে আমালের তা’লীমে বসলেই দেখা যায়, তমুক হয়, নামায পড়লে অমুকটা হয়।কিন্তু এত নামায পড়লাম, হয় নাই। গর্দভ! তোমার নামায তো আল্লাহর কাছে যাওয়ার আগেই সব ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে, এ কথাখেয়াল আছে নাকি? এই ল্যাংড়া নামাযে কেমন করে হবে?


সুতরাং ভাই, শুধু নামায নয়, বান্দার কাজগুলো হলো আল্লাহ তা’আলার কাছে হাদিয়া। হাদিয়াটা বান্দার তরফ থেকে মালিকেরকাছে হাদিয়া। হাদিয়াটা দেয়ার সময় আমার হাদিয়ার আকৃতি কী, আমার হাদিয়ার সুরত কী, আমার হাদিয়া কী হচ্ছে না হচ্ছে এ দিকেআমার খেয়াল থাকা দরকার। আল্লাহ তা’আলা আমাকেও তৌফিক দান করুন, আপনাদের সবাইকে আল্লাহ তা’আলা তৌফিকদান করুন। আমীন।


২ জুন ২০০৬ তারিখে প্রদত্ত জুমুআর বয়ান।


লেখক : ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম ও জামিআ ইকরার বাংলাদেশের মহাপরিচালক-শাইখুল হাদীস।

১৭৩০

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

  • ইবাদাতের রুহ

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্য বানিয়েছেন এবং মেহেরবানী করে......

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭