সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ক্ষমা করতে শিখুন
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ০৭/১২/২০১৭

ক্ষমা করতে শিখুন 

হিজরি দ্বিতীয় সালের ঘটনা। মাহে রমজান। বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে মাত্র।  আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশকে পরাজিত করেছেন তাতে। মক্কাবাসী বদর যুদ্ধের ফলাফল জানার জন্য তখন অস্থির। অত্যন্ত ব্যাকুলতার সাথে প্রতীক্ষা করছিল লড়াইয়ের খবর জানার জন্য। কুরাইশের লোকজন সাধারণত: বায়তুল্লাহর প্রাঙ্গণে একত্রিত হয়ে ফলাফল সম্পর্কে নানা ধরনের অনুমান করতে থাকে। 
.
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি যুদ্ধের সংবাদ নিয়ে মক্কা পৌঁছে তার নাম ছিল হাইছুমান ইবন আব্দুল্লাহ খুযায়ি। সে নিজেও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। যখনই সে বায়তুল্লাহর প্রাঙ্গণে তার উটকে বসায়, লোকজন অধৈর্য হয়ে তার দিকে ছুটে আসে: 
-বলো ভাই! পিছনের খবর কি? যুদ্ধের ফলাফল কি হল?
হাইছুমান বলল, 
-পিছনের খবর কি জিজ্ঞেস করছ তোমরা?! উতবা ইবন রবিআ‘ ও শায়বা ইবন রবিআ‘ মারা গেছে। আবুল হাকাম ইবন হিশাম, উমাইয়্যা ইবন খালাফ নিহত হয়েছে। কুরাইশের লোকদের মধ্যে এক বিরাট অংশকে মুসলমানরা আটক করে নিয়েগেছে। এভাবে সে বড় বড় সর্দারের নাম উল্লেখ করে। 
.
যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে যখন সে মক্কার শীর্ষস্থানীয় লোকদের নাম নিচ্ছিল তখন হাতিমে উপবিষ্ট উমাইয়্যা ইবন খালাফের ছেলে ছাফওয়ান বলল, 
-আল্লাহর কসম! এ লোকটি তার হুশ ও চেতনাশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ঠিক আছে, তাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। 
-বল তো, ছাফওয়ানা ইবন উমাইয়্যার কী হয়েছে? হাইছুমান বলল, 
-হে লোকজন! ঐ দেখ, ছাফওয়ান তো হাতিমে বসে আছে। তবে আমি তার পিতা উমাইয়্যা এবং তার ভাই আলীকে স্বয়ং নিজের চোখে নিহত হতে দেখেছি। 
তখন কুরাইশের বিশ্বাস হয়, পরাজয়ের সংবাদ সঠিক। সঙ্গে সঙ্গে মক্কার ঘরে ঘরে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুঃখ ও ক্ষোভের ঢেউ বয়ে গেল সর্বত্র।
.
পরাজয়ের সংবাদ আসার পর কিছুদিন অতিবাহিত হয়েগেল ইতোমধ্যে। ছাফওয়ান ইবন উমাইয়্যা ছিল মক্কার প্রসিদ্ধ অস্ত্রব্যবসায়ী ও ধনকুবের। তার চাচাতভাই উমাইর ইবন ওহাব ছিল বড়ই চালাক ও শয়তানপ্রকৃতির লোক। সেও বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মদিনার সৈন্যদলের শক্তি যাচাইয়ের জন্য তাকেই পাঠানো হয়েছিল। তখন উমাইর ঘোড়ার উপর আরোহন করে সৈন্যদলের চারিদিকে একটি চক্কর লাগায় এবং ফিরে এসে বলল, তিনশ’ থেকে সামান্য কিছু বেশি লোক হবে। এ ছিল বড়ই দুষ্ট ও ফিৎনাবাজ লোক। জনসাধারণ্যে তাকে কুরাইশের শয়তান হিসেবে আখ্যায়িত করা হত।
.
একদিন ছাফওয়ান ও উমাইর বায়তুল্লাহর ছায়াতলে হাতিমে বসে আছে। ছাফওয়ান অত্যন্ত রাগান্বিত। বদরে আপন পিতা ও ভাই নিহত হওয়ায় রাগে-ক্ষোভে একেবারে অগ্নিশর্মা। প্রতিশোধের তোড়ে সে উম্মাদ হওয়ার উপক্রম। এদিকে উমাইরের ছেলে ওহাব ছিল বদরে আটককৃতদের একজন। মুসলমানদের হাতে বন্দী। 
.
নিহতদের স্মরণ করতে গিয়ে ছাফওয়ান বলল, 
-আল্লাহর কসম! ওসব মুরুব্বি ও সাথীদের দুনিয়া ত্যাগ করার পর জীবনের আর কোনো মজাই রইল না।! উমাইর বলল, 
-ঠিক বলেছ।  আমার উপর যদি ঋণের বোঝা না থাকত এবং আমার মৃত্যুর পর আমার বাচ্চাদের দেখাশোনা করার মত কেউ না থাকার আশংকা না থাকত, তাহলে এক্ষণিই মদিনা গিয়ে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রদ্বীপ চিরতরে নিভিয়ে দিতাম।
-তুমি কি আসলেই এ কাজ আঞ্জাম দিতে পারবে? ছাফওয়ান ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করল। উমাইর উত্তর দিল, 
-হ্যাঁ অবশ্যই। কেন নয়? ব্যাস, ঋণশোধ এবং আমার বাচ্চাদের রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা সমাধান যদি হয়ে যায়, তা হলে এ কাজটি আমি সহজেই করতে পারি।
ছাফওয়ান বলল, 
-ওসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আমার জন্য ওসব অতি সাধারণ ব্যাপার। আমি ঋণ ও রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি। তোমার সবঋণ আমি শোধ করে দেব। আমার বাচ্চারা যা খাবে এবং যা পরিধান করবে তাই তোমার স্ত্রী-সন্তানের জন্য ব্যবস্থা করা হবে। তুমি শুধু এ কাজটি করে দাও। 
.
আরো বলল:
-তবে হ্যাঁ। শোন, এটা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে করার কাজ। পৃথিবীতে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ যেন জানতে না পারে।
উমাইর বলল, এই গোপন কথা গোপনই থাকবে। তুমি চিন্তা করো না এ নিয়ে।... ঠিক আছে তা হলে হাত মিলাও এবং অঙ্গিকার করো, এ সম্পর্কে কেউ কোনো কিছুই জানতে পারবে না। পরিকল্পনা মতে আমি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, ছাফওয়ান! তুমি তো জানোই, আমার জন্য মদিনা যাবার একটি যুক্তিসঙ্গত অজুহাতও রয়েছে। আমার ছেলে ওহাব মুসলমানদের হাতে বন্দী। তার সাথে সাক্ষাত করার অজুহাত। শয়তানের মুচকি মুখে নিয়ে সে বলল।
.
ছাফওয়ান ঘরে আসে। নিজের তরবারিটা খাপ থেকে বের করে নেয়। দেখল, একটু মরিচা ধরেছে বলে মনে হয়। তরবারিটাকে খুব ভালো করে ধার দিয়ে বিষের মধ্যে চুবাতে আরম্ভ করে সে। গালের ভিতর বিডবিড করে বলতে লাগল, আহা!! এখন এ তরবারি দিয়ে আমার পিতা ও ভাইয়ের খুনের বদলা নেয়া যাবে।
অত:পর সে বিষাক্ত তরবারিটা নিয়ে উমাইরের সোপর্দ করে এবং যথাদ্রুত সম্ভব মদিনা যাত্রা করার জন্য তাগিদ দিল তাকে। উমাইর মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়। 
.
তখনকার দিনগুলোতে মক্কার প্রতিটি বৈঠকে, প্রতিটি ঘরে বদরের কাহিনীই ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। ছাফওয়ান যাদের সাথে মেলামেশা করত তাদের সবাইকে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলত: 
-ব্যস, অল্প কয়েক দিনেরই তো কথা। এমন জবরদস্ত সংবাদ তোমাদেরকে শোনাবো, তোমরা বদরের দুঃখ ভুলে যাবে।
.
উমাইর ইবন ওহাব তার চাতুর্য, নিষ্ঠুরতা, দুষ্টপ্রকৃতি এবং মন্দলোক হিসেবে এমনিতেই প্রসিদ্ধ ছিল। মক্কায় রাসূলুল্লাহ সা. এবং তাঁর সাহাবিদের কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রেও সে সর্বদা অগ্রগামী থাকত। বদরের দিন তার ছেলে ওহাবকে রেফাআ ইবন রাফে’ নামক জনৈক আনসারি সাহাবি আটক করে ছিলেন।
.
উমাইর ইবন ওহাব ক্ষিপ্রগতিতে সফর করে মদিনা পৌঁছে যায়। মসজিদে নববির সামনে এসে তার উষ্ট্রীকে বসায়।  তারপর নিচে নামে। এ দিকে মদিনার মুসলমানদের মধ্যেও বদর যুদ্ধের উপর কথা চলছিল। নিজেদের সংখ্যা অল্প হওয়ার সত্ত্বেও অর্জিত সেই বিজয় ও ঐশি সাহায্যের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন তারা এবং বদরের ঘটনাকে বারবার পুনরাবৃত্তি করে পুলকিত হচ্ছিলেন। 
.
হযরত উমর ফারুক রা.ও অন্যান্য সাহাবিদেরকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদের এক কোণায় বসে বদরের আলোচনা করছিলেন, কিভাবে আল্লাহ তাআলা স্বীয় একান্ত দয়া ও অনুগ্রহে তাদেরকে সম্মানিত করেছেন এবং কাফিরদের করেছেন লাঞ্চিত ও অপমানিত। হঠাৎ তার দৃষ্টি উমাইরের উপর পড়ল। দেখলেন, সে তরবারি ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
উমর ফারুক রা. এর অন্তর্দৃষ্টি কাজে আসে। বললেন, 
-যে যাই বলুক, আল্লাহর এই দুশমন ভয়ানক কোনো মতলব নিয়েই এখানে এসেছে। বদরের দিন শত্রুপক্ষের লোকজনকে যখন যুদ্ধের জন্য উসকানো হচ্ছিল, তখন উসকানিদাতাদের সারিতে অগ্রভাগে দেখা গেছে তাকে। সেই অনুমান করে মুসলমানদের সংখ্যা সম্পর্কে কাফিরদের অবহিত করেছিল। 
.
গলায় ঝুলন্ত তরবারির বন্ধনী দিয়ে উমাইরের ঘাড় ছেপে ধরলেন হযরত উমর রা. এবং গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সা. এর দরবারে উপস্থিত হলেন। আরজ করলেন, 
-হে আল্লাহর রাসূল সা.! আল্লাহর এ দুশমন তরবারি ঝুলিয়ে আসছিল।
নবী কারিম সা. ইরশাদ করেন, 
-“উমর! তাকে ছেড়ে দাও। সামনে আসতে দাও।” 
উমর ফারুক রা. সাহাবিদের বললেন, 
-তোমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর আশে-পাশে থেকো এবং এই খবিশটার প্রতি দৃষ্টি রেখো। এ হচেছ অত্যন্ত ভয়ংকর লোক। 
.
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, 
-“উমাইর! আমার নিকট এসো”। কাছে এসে সে জাহিলি পদ্ধতিতে বলল, (أنعموا صباحا) “আপনাদের সকাল শুভ হোক।” রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, 
-“আল্লাহ তাআলা সেই জাহিলি শব্দসমূহের পরিবর্তে আমাদেরকে এমন এক অভিবাদন দিয়ে ধন্য করেছেন যা তোমাদের ওই অভিবাদন থেকে বহুগুণ ভালো। অর্থাৎ সালাম দিয়ে যা জান্নাতবাসীদেরও অভিবাদন।  হ্যাঁ উমাইর! বলো, কি জন্য এসেছ?”
.
সে বলল, 
-আমি আমার বন্দী ছেলে ওহাবের অবস্থা জানার জন্যে এসেছি। অনুগ্রহ করে তার ব্যাপারে একটু দয়া করুন। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, 
-“তোমার গলায় ঐ তরবারি ঝুলছে কিভাবে?” সে উত্তর দিল, 
-আল্লাহ ওসব তরবারিকে ধ্বংস করুক। এসব তরবারি ইতিপূর্বে আমাদের কী উপকারে এসেছে যে, আজও আসবে।! মহানবী সা. বললেন,
-“উমাইর! সত্য করে বলো। তুমি কোন উদ্দেশ্যে এসেছ?” সে বলল, 
-সত্য বলছি। আমি কেবল আমার বন্দী ছেলের জন্যই এসেছি।
.
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, 
-“এ কথা কি সত্য নয় যে, তুমি আর ছাফওয়ান ইবন উমাইয়্যা হাতিমে বসেছিলে।?!তোমরা উভয়ে বদরের কোপে নিক্ষিপ্ত নিহত সর্দারদের স্মরণ করেছ। তারপর তুমি বলেছ, আমার যদি ঋণশোধ এবং পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব নিয়ে আশংকা না থাকত তাহলে মদিনা গিয়ে মুহাম্মদ(সা.)কে হত্যা করতাম। ছাফওয়ান তোমার ঋণগুলো পরিশোধ এবং বাচ্চাদের নিজের তত্ত্বাবধানে নেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করল। তুমি আমাকে খুন করবে- এ শর্তে। মনে রেখো উমাইর! তোমাদের মোকাবেলায় আল্লাহই আমার রক্ষক।”
.
বন্ধুরা! দেখুন, বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন কোনো ফলাফলে পৌঁছে তখন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করে না। উমাইরও করেনি।  রাসূলুল্লাহ সা.এর এ কথা শোনার সাথে সাথে তার মনের আঁধার দূর হয়ে গেল।  সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে উঠল এ বলে: 
-(أشهد أنك رسول الله) “আমি এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল।” তারপর বলল, 
-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের নিকট যেসব আসমানি খবরাখবর নিয়ে আসতেন আমরা সেসবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম। কিন্তু এ বিষয়টা এত গোপন ছিল যে, আমি আর ছাফওয়ান ব্যতীত কাক-পক্ষীও কিছু জানত না এ ক্ষেত্রে। আল্লাহর কসম! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, একমাত্র রাব্বুল আলামীন আল্লাহই এ খবর আপনার নিকট পৌঁছিয়েছেন। সেই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যিনি আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন এবং সীরাতুল মুস্তাকিম তথা সরল সঠিক পথে চলার তাউফিক দান করেছেন।
.
এ দিকে সবার চোখে-মুখে আনন্দের হাসি। হৃদয় সাগরে উদারতার উত্তাল ঢেউ। দয়া ও ক্ষমার এমন পরিবেশ বিরাজ করছিল যে, যে ব্যক্তিটি নবী-রাসূলদের সর্দারকে হত্যা করার জন্য আসে তার ন্যাক্কারজনক অপরাধকে শুধু মার্জনাই করা হয় নি কেবল; বরং তাকে আপন সাথীদের অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া হল।
আল্লামা ইবনুল আসির রহ.এর বর্ণনা মতে উমাইর ইবন ওহাব যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, হযরত উমর ফারূক রা. বলেছিলেন,
- (لخنزير كان أحب إلي منه حين طلع علينا)
“ সে যখন মদিনা এসেছিল তখন তাকে আমার এত বেশি ঘৃণা লাগছিল যে, শুকরের চাইতে বেশি নিকৃষ্ট মনে হচ্ছিল।”
(ولهو اليوم أحب إلي من بعض بني)
“কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তাকে আমার ছেলে-সন্তানদের চাইতেও বেশি প্রিয় মনে হচ্ছে।”
.
আল্লাহর রাসূল সা. বললেন,
- হে আমার সাহাবিরা! তোমাদের এ ভাইকে দ্বীনের শিক্ষা দাও। তাকে কুরআন পড়াও এবং তার বন্দী (ছেলে ওহাব)কে ছেড়ে দাও।”
এমন ভালো ব্যবহারের কল্পনাই করতে পারছিলেন না উমাইর রা.। এখন তিনি অতীতে কৃত কর্মের জন্য লজ্জ্বিত। তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাচ্ছেন। আরজ করলেন, 
-হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নূরকে নিভানোর অনেক চেষ্টা করেছি আমি। এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আমাকে মক্কায় বসবাস করার অনুমতি দিন। আমি মক্কাবাসীকে আল্লাহ, তাঁর রাসূল সা. এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি দাওয়াত দেব। 
তার এ আবেদন মঞ্জুর করা হয়। তারপর তিনি দ্বীনে হক্বের একজন দায়ি হয়ে মক্কায় বসবাস করতে থাকেন। অনেক লোক তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
.
এ দিকে ছাফওয়ান তার ঈপ্সিত ও পসন্দের সংবাদ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছিল। মদিনা থেকে আগত প্রত্যেক মুসাফিরকে জিজ্ঞাসা করত।  হ্যাঁ ভাই! তোমাদের নিকট নতুন কোনো খবর আছে? এভাবে একদিন তাকে জনৈক আরোহী বলল, 
-ছাফওয়ান! তোমার জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে। সে বলল, 
-দ্রুত বলো। কী সংবাদ আছে? 
আরোহী জবাব দিল, 
-উমাইর মুসলমান হয়ে গেছে। এ সংবাদ শোনার পর ছাফওয়ানের পায়ের তলে মাটি সরে গেল। তখন শপথ করল, উমাইরের সাথে সারাজীবন কথা বলবে না এবং তার কোনো কাজেও আসবে না।
.
সুপ্রিয় পাঠক! আপনি কি কখনো দেখেছেন বা শুনেছেন, কোনো ব্যক্তি তাকে খুন করতে আসা লোকটিকে এভাবে উদারতার সাথে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা.ই ছিলেন, যিনি নিজের অনিন্দ্য সুন্দর চরিত্র দিয়ে মানুষের অন্তর জয় করেছেন। দেহের উপর নয়; তিনি হৃদয়ের উপর রাজত্ব করেছেন।

৪১২

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭