সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

সমাজকল্যাণে ইমামদের ভূমিকা
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : শনিবার ২৪/০২/২০১৮

সমাজকল্যাণে ইমামদের ভূমিকা  

ইসলাম মানবসম্পদ উন্নয়নে নীতি-নৈতিকতা ও আর্থসামাজিক অগ্রগতির বিষয়ে জোরালো তাগিদ দিয়েছে, যাতে একজন নীতিবান মানুষ সামাজিক কল্যাণ ও মানবিক উন্নয়নে সমর্থ হয় এবং ইহকাল ও পরকালে সাফল্য লাভ করে। প্রত্যেক মানুষই কর্মক্ষমতা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতায় মানবসম্পদ ও সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ। মানবসন্তানের কার মধ্যে কোন সামর্থ্য-শক্তি নিহিত, তা খুঁজে বের করে যথোপযুক্ত পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারলে মানবসভ্যতার উন্নয়নে অভাবিত অগ্রগতি সম্ভব। প্রত্যেক নবী-রাসুল স্বজাতিকে মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যেমনভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞান দান করো, কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (মুসলিম)
মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর একটি জাতি তথা দেশের সার্বিক অগ্রসরতা নির্ভর করে। মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ শিশুরা দেশ ও জাতির কর্ণধার। তাদের পরিকল্পিত পরিবারে ধর্মীয় অনুশাসন ও আদর্শ সুশিক্ষায় সৎপথে লালন-পালন করা হলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী হবে সুন্দর। এ জন্য শিশুদের ভালোভাবে প্রতিপালিত করা পিতামাতা ও অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের মাধ্যমেই মানবসম্পদ উন্নয়নের ভিত রচিত হয়। পৃথিবীতে নবী-রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল নৈতিকভাবে আদর্শ মানুষ গড়ে তোলা। কাজেই মানবসন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার সংরক্ষণ করা উচিত। নবী করিম (সা.) যথার্থই বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের স্নেহ করো, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিজি)
জাতির উন্নয়ন কার্যক্রমে দেশের দক্ষ মানবসম্পদ সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। মানবজাতি এমন এক বিরাট সম্পদ, যা সঠিকভাবে কার্যকর করা হলে প্রতিষ্ঠান তথা দেশ-জাতির প্রভূত উন্নতি সাধন হয়। মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা না হলে উন্নয়ন-প্রক্রিয়া দারুণভাবে ব্যাহত হয়। সুতরাং মানবসম্পদ উন্নয়নে দেশের পণ্ডিত ব্যক্তিরা, আলেম সমাজ, ধর্মীয় নেতা বা মসজিদের ইমাম-খতিবদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। অবক্ষয়মুক্ত সমাজ, ধর্মীয় অনুশাসন ও মানুষকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে ইমামদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। মানুষের স্বভাব-চরিত্রের উন্নয়ন ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে উন্নত নৈতিকতাপূর্ণ আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো ইমামদের দৈনন্দিন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। মানুষ চেষ্টার মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটায় এবং আল্লাহ তার জীবনের সফলতার পথ সুগম করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’ (সূরা রা’দ, আয়াত: ১১)
চেষ্টা ও সাধনা মানবজাতির উন্নতির চাবিকাঠি। পৃথিবীর বহু জাতি-গোষ্ঠী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে যে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে, এর মূলে রয়েছে চেষ্টা ও পরিশ্রম। উন্নয়নের চিন্তা ও গবেষণা ব্যতিরেকে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। যে জাতি যত চেষ্টা করে, সে জাতি ততই উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করে। তাই তরুণ প্রজন্ম ও যুবসমাজের জন্য ভদ্রোচিত ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, বেসরকারি খাতে সহযোগিতায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আর এই যে, মানুষ তা-ই পায় যা, সে চেষ্টা করে।’ (সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৯)
সমাজে ইমানদার লোকেরা জনগণকে ইসলামের সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য, স্বদেশপ্রেম, মানবতা, সমাজকল্যাণ সর্বোপরি মানবসম্পদ উন্নয়নে পরিবার পরিকল্পনা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা প্রভৃতি বৈষয়িক জ্ঞান শিক্ষা দিতে পারেন। নিজেদের মেধা, শ্রম ও মসজিদের অবকাঠামোগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে সমাজ থেকে বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাবলম্বন তথা ধর্মপ্রাণ মানুষকে কর্মপ্রেমিক করে তুলতে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান হতে হবে। ইমামদের দ্বারা নিরক্ষরতা দূরীকরণ, মাদকাসক্তি প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ, পরিবেশ সংরক্ষণ, পশুপালন, মৎস্য চাষসহ জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উত্তরণ ঘটানো যেতে পারে। দেশের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মসজিদের ইমাম-খতিবেরা যদি পরিকল্পিত পন্থায় অগ্রসর হন, তাহলে তাঁরা মসজিদের আওতাধীন ধর্মপ্রাণ মানুষকে সামাজিক অনাচার ও অনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সজাগ-সচেতন থাকার ব্যাপারে অবহিত করে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
যে জাতি মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে পেরেছে, সে জাতি উন্নতির চরম শিখরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। সমকালীন প্রেক্ষাপটে জাতীয় উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হচ্ছে মানবসম্পদের উন্নয়ন। বিশ্বায়নের যুগে সততা ও মেধাই যোগ্যতার অন্যতম মাপকাঠি। তাই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির জগতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় মানবজাতিকে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখতে হবে।
মসজিদের ইমামদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারায় তাদের সম্পৃক্ত করে নীতি-নৈতিকতার বিকাশ সাধন করা যেতে পারে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, মাদকাসক্তি নিরসন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মতো সামাজিক অপরাধ দমন, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের মতো জাতীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দ্বারা মানবাধিকার বাস্তবায়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাতি গঠন এবং একটি আদর্শ সুশীল সমাজ বিনির্মাণে ইমামদের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করা যায়। 

লেখক : ইসলামী গবেষক।

৪০৯

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭