সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : রবিবার ২৬/১১/২০১৭

দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা 
মুহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী 

সকল সৃষ্টির মধ্যে বিশেষভাবে মানুষকেই আল্লাহ তাআলা জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দান করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও ধারণ করতে পারে। ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আসমানী ইলমের উপযুক্ততার কারণেই মানুষের জন্য এসেছে হালাল-হারামের বিধান। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এই যোগ্যতা নেই। তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ তাদের সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য পশম, অন্ধকারে পথ দেখার জন্য চোখে বিশেষ শক্তি ইত্যাদি। তদ্রূপ প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই রয়েছে জীবন ধারণের জন্য সহজাত বোধ ও প্রবণতা। যার দ্বারা চালিত হয়ে তারা আত্মরক্ষা করে ও বংশ বিস্তার করে। কিন্তু এ পর্যন্তই। পশু-পাখির জীবন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বভাবের গন্ডিতে বাধা। স্বভাবের বৃত্ত থেকে তাদের উত্তরণ ঘটে না। পক্ষান্তরে মানুষ শিক্ষা অর্জন করে এবং শিক্ষা দান করে। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তাই পৃথিবীর শাসন ও নিয়ন্ত্রণের ভার তাদের উপর অর্পিত।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২
আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষ যেমন লাভ করেছে জীবনের আলো তেমনি আল্লাহরই নিকট থেকে সে লাভ করেছে ইলমের নূর।  ইলমের মাধ্যমে মানুষ নবজন্ম লাভ করে। আল্লাহর মারিফত যখন মানুষের মধ্যে আসে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়।
শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার : জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী।
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব (উপকরণের জগত) বানিয়েছেন। এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মানুষকে দান করা হয়েছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি। এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে।
জাগতিক জ্ঞান অর্জনের হুকুম 
এ প্রসঙ্গে ইমাম গাযালী রাহ.বলেন, অনুমোদিত জাগতিক জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত : ১. যা চর্চা করা অপরিহার্য ২. যা চর্চা করা উত্তম।
প্রথমটি হচ্ছে ওই সব জ্ঞান যা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন চিকিৎসা বিদ্যা। কেননা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তদ্রূপ গণিত। কেননা, লেনদেন, মিরাছ বন্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে তাহলে সকলেই কষ্টে পতিত হবে। একইভাবে কৃষি, বয়ন, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য।-ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন ১/২৯-৩০
পক্ষান্তরে যা মানুষকে কুফর ও ইলহাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় তা চর্চা করা হারাম। যেমন ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরী সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষেধ।
মোটকথা, পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। তাই জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৌলিকভাবে অনৈসলামিক মনে করার অবকাশ নেই। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে শিক্ষার উপাদান ও পরিবেশে নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। যা একটি মুসলিম দেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই সব  দর্শন ও অনৈসলামিক পরিবেশের কোনো প্রয়োজন নেই।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, জাগতিক জ্ঞান ও কলাকৌশল অর্জন করার একটি খালিছ দ্বীনী দিকও রয়েছে। সেক্ষেত্রে তা দ্বীনী খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষার যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তিতে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা প্রয়োজন। কুরআন মজীদে মুসলমানদেরকে আদেশ করে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন কর ...।’ -সূরা আনফাল : ৬০
অতএব ইসলামের খিদমতের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার করা হলে সেটা আর দুনিয়াবী কাজ থাকে না, সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হয়। তদ্রূপ দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা এবং প্রকাশনার অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন রয়েছে।
মোটকথা, খালিছ দ্বীনী খিদমতের জন্য বিভিন্ন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দ্বীনী খিদমতের উদ্দেশ্যে তা অর্জন করা হলে তা দ্বীনী কাজে পরিণত হয় এবং তাতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যায় যে, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সওয়াব হয় কি না? যদি দ্বীনের খিদমতের উদ্দেশ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করা হয় তবে যে এতে সওয়াব হবে তা তো বলাই বাহুল্য। পক্ষান্তরে হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জনের পিছনে কার্যকর থাকলে এতেও সওয়াব রয়েছে।
কিন্তু এই প্রেরণা তো তখনই সৃষ্টি হতে পারে যদি জাগতিক শিক্ষা অর্জনরত ছাত্রদের মধ্যে আল্লাহমুখিতা তৈরি করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক সত্য এই যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন, সুনাম-সুখ্যাতি লাভ ইত্যাদি বিষয়কে এত ফলাও করে প্রচার করা হয় যে, শিক্ষার্থীদের মনে উপরোক্ত দ্বীনী চেতনা জাগ্রত হওয়ার সুযোগই হয় না। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে এতটাই ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি; বরং অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম-বিরোধী বানিয়ে রেখেছি যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামী চেতনা বিকশিত হওয়ার সুযোগই নেই। বলাবাহুল্য, এজন্য কিয়ামতের দিনে দায়িত্বশীলদের অবশ্যই জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।
 দ্বীনী শিক্ষা ও তার গুরুত্ব
দুনিয়ার নিযাম ও ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য যেমন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি দ্বীনের হিফাযতের জন্য এবং দুনিয়ার সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক হওয়ার জন্য দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজন। মুসলিম সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ যেন দ্বীন মোতাবেক চলতে পারে এবং হারাম থেকে বেঁচে হালালভাবে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য কুরআন-সুন্নাহয় পারদর্শী একটি জামাআত বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেন বের হয় না প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একটি দল, যাতে তারা দ্বীনের তাফাক্কুহ অর্জন করে এবং  ভীতি প্রদর্শন করে তাদের জাতিকে যখন তারা ফিরে আসে তাদের নিকট। সম্ভবত তারা আল্লাহ ভীতি অর্জন করবে।’ সূরা তাওবা : ১২২
এজন্য প্রত্যেক জনপদে দ্বীনের ইলমে পারদর্শী ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান থাকা ফরযে কিফায়া। আর এই উদ্দেশ্যে দ্বীনের ইলমের চর্চা  অব্যাহত রাখা সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য।
কুরআন-সুন্নাহর চর্চা ও অনুসরণের অভাব হলে সমাজের সকল অঙ্গনে দুর্নীতি ও অনাচার দেখা দিবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক ঈমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে তা মানুষের ক্ষতি ও অকল্যাণে ব্যবহৃত হবে। মানুষের সকল আবিষ্কারকে অর্থপূর্ণ ও কল্যাণমুখী করার জন্যই অপরিহার্য প্রয়োজন ইলমে ওহীর চর্চা।
তদ্রূপ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবিকলভাবে সংরক্ষণ করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর বিশেষজ্ঞ তৈরি করা অপরিহার্য। ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী চিন্তাধারা পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দেওয়াও আলিমদের কর্তব্য। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রজন্মের ন্যায়-নিষ্ঠ লোকেরা দ্বীনের এই ইলমকে ধারণ করবে। তারা সীমালংঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে একে রক্ষা করবে।’-সুনানে বায়হাকী ১০/২০৯
দ্বীনী শিক্ষার ফযীলত
এশিক্ষার বিষয়বস্ত্ত যেহেতু সরাসরি দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত তাই এর ফযীলতও অন্যান্য শিক্ষার তুলনায় বেশি। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করা হল :
১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন বহুগুণ।’ সূরা মুজাদালা : ১১
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’-সহীহ বুখারী ২/৭৫২
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ আসান করে দেন।’-সহীহ মুসলিম ২/৩৪৫
৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করে দিন, যে আমার কোনো হাদীস শুনেছে। অতঃপর  অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।’-সুনানে আবু দাউদ ২/৫১৫
৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।’ - সহীহ বুখারী ১/১৬
৬. অন্য হাদীসে আছে, ‘আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিস।’-তিরমিযী ২/৯৭
৭. আরেক হাদীসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।’-জামে তিরমিযী ২/৯৩
তবে দ্বীনী ইলমের উপরোক্ত ফযীলত লাভের জন্য শর্ত হল : ইখলাছ। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই  ইলম অর্জন করতে হবে। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে তা অর্জন করা যাবে না। পার্থিব সুনাম-সুখ্যাতির উদ্দেশ্যে দ্বীনী ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। হাদীস শরীফে এসেছে যে, জাহান্নামে সর্বপ্রথম নিক্ষিপ্ত তিন ব্যক্তির একজন হবে ঐ আলিম, যে লোকের কাছে আলিম হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য ইলম চর্চা করেছে।
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, ‘যে দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা শুধু আল্লাহর জন্যই শেখা হয় সে কিয়াতমতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।-সুনানে আবু দাউদ ২/৫১৫
মোটকথা, ইসলামে দ্বীনী শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি জাগতিক শিক্ষারও গুরত্ব রয়েছে। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনী কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
পক্ষান্তরে জীবনের সকল কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনী শিক্ষার বিকল্প নেই। দ্বীনী ইলমের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমেই সমাজে ঈমান-আমল, আল্লাহ ভীতি ও আখিরাত-মুখিতা সৃষ্টি হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়া যেমন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখিরাতের কামিয়াবী অর্জন করা যায় না তেমনি দুনিয়ার জীবনও দুর্নীতি, অনাচার, জুলুম ও শোষণ থেকে মুক্ত করা যায় না। এজন্য আখিরাতে কামিয়াবী ও দুনিয়ায় শান্তি নিরাপত্তার জন্য দ্বীনী ইলমের চর্চা অপরিহার্য।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক মানুষের মেধা, আয়ু ও সামর্থ্য সীমিত, সকল বিষয় একই ব্যক্তি শিখে ফেলবে এটা সম্ভব নয়। অতীতেও এরকম হয়নি। বর্তমানেও হয় না। সমাজে যে ডাক্তার হয় সে একই সাথে অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, আইনবিদ, কৃষিবিদ, দার্শনিক সবকিছু হয় না। হতে পারেও না। তাই ইসলামের দিকনির্দেশনাও হচ্ছে প্রতিটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে সমাজের কিছু কিছু লোক পারদর্শী হবে। প্রত্যেকে তার স্ব স্ব শিক্ষার মাধ্যমে অন্যকে সাহায্য করবে। এভাবে পুরো সমাজ একটি ইউনিটের ন্যায় হবে। পেশা ও বিষয়বস্ত্তর বৈচিত্র সত্ত্বেও যে বিষয়টি সবাইকে মেলবন্ধনে আবদ্ধ রাখবে তা হচ্ছে ঈমান ও ইসলাম। কর্মক্ষেত্র ভিন্ন হলেও সবার বিশ্বাস ও আদর্শ হবে অভিন্ন এবং এই আদর্শিক অভিন্নতার ভিত্তিতেই সকল মুসলিম হবে ভাই ভাই। মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার রূপরেখা এটাই। মুসলিম জাতি যখন বিজয়ীর আসনে ছিল তখন তাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থা এমনই ছিল। মুসলমান যদি তাদের গৌরবময় অতীত ফিরে পেতে চায় তাহলে তাদেরকে এ পন্থাই অনুসরণ করতে হবে।

১৩৪১০

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭