বিদায় হজের ভাষণ: মানবাধিকারেরর মৌলিক নীতিমালা
অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী
জিলহজ মাসে হজের মৌসুম এলেই ইসলামের ইতিহাসের একটি পৃষ্ঠা জ্বলজ্বল করে ওঠে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের অন্যতম অধ্যায় ভাস্বর হতে থাকে। হজের পালনীয় বিধান ও ইবাদতগুলো সম্পন্ন করার পাশাপাশি এ পবিত্র সফরের গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় দিক হলো সেই তাৎপর্যপূর্ণ মূল্যবোধ ও মহামূল্যবান মূলনীতিগুলো, যা বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের সম্বোধন করে উল্লেখ করেছেন। যে মূলনীতিগুলোর সঙ্গে বিদায়ের অশ্রু ঝরে পড়েছে। তাই তো তাকে বলা হয় বিদায়ি ভাষণ।
এ ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবতা বিপন্নকারী ভয়ংকর ব্যাধি শিরক থেকে সতর্ক করেন। শিরকের শিকড় উপড়ে ফেলেন। আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দ-ায়মানদের জন্য এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা হজ : ২৬)।
অদৃশ্যের জ্ঞান ও আসমান থেকে ওহি পাওয়ার মিথ্যা দাবি করা, বেদাতি কাজে লিপ্ত হওয়া, ব্যক্তি পূজা করা এবং পাপক্ষমা ও প্রয়োজন পূরণের জন্য মানুষকে আল্লাহর মাধ্যম বানানো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। বিদায়ি ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ তোমাদের কাছে আজ তোমাদের এ দিন, এ মাস ও এ শহরের মতোই সুরক্ষিত পবিত্র।’
এগুলো মানবাধিকারের চিরন্তন মৌলিক নীতিমালা। প্রাণরক্ষার অধিকার বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘কেসাস বিধির মধ্যে রয়েছে তোমাদের জীবনের নিরাপত্তা।’ (সূরা বাকারা : ১৭৯)। সম্পদ রক্ষার জন্য আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা চোরের হাত কেটে দাও।’ (সূরা মায়েদা : ৩৮)। মানমর্যাদা রক্ষায় বলেন, ‘ব্যভিচারী নারী ও পুরুষের প্রত্যেককে ১০০ বেত্রাঘাত করো।’ ঈমানি ভ্রাতৃত্ব, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন, অধিকার আদায়, মা-বাবা ও প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ, বিয়ে, সুসম্পর্ক এবং নিরাপদ বাসস্থান এসবের মাধ্যমে ইসলাম মুসলমানের অন্তরে শান্তি ও নিরাপত্তার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।
ইসলামে মানবাধিকার রক্ষার মূলনীতি হলো, কাউকে তার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে কথা দিয়ে বা কাজ দিয়ে কষ্ট দেয়া ও মানহানি করা নিষেধ। তা শারীরিক বা আত্মিক যাই হোক। ইসলামে অন্যায়ভাবে অন্যকে আঘাত করা নিষিদ্ধ। কারও সম্পর্কে কুৎসা প্রচার, বিদ্রুপ আচরণ, গালাগাল করা ও মিথ্যা অপপ্রচার চালানো অবৈধ। জীবিত ও মৃত সব মানুষের মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম বদ্ধপরিকর। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তার মৃতদেহ নিয়ে উল্লাস করা, মৃতদেহকে ক্ষতবিক্ষত করে বিকৃত করা ইসলাম সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে।
বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যায়ভাবে মানুষের রক্তপাত বন্ধ, সুদের কুফল, বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহতা, স্বজনপ্রীতির বিরূপ প্রভাব, জাহেলি যুগের মানসিকতা পরিহার করার বিষয়ে মুসলমানদের জোরালো নির্দেশ প্রদান করেন। এ ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তোমরা তো তাদের আল্লাহর নিরাপত্তায় গ্রহণ করেছ।’ ইসলাম নারীর অধিকার সংরক্ষণ করেছে। মা, স্ত্রী ও মেয়ে হিসেবে তাকে মর্যাদা প্রদান করেছে। তাকে শিক্ষা ও উত্তরাধিকার-সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে। ইবাদতের প্রতিদানের ক্ষেত্রে পুরুষের সমান সুযোগ দিয়েছে।
বিদায়ি ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে গেলাম, যা আঁকড়ে ধরার পর তোমরা কখনও পথহারা হবে না, তা হলো আল্লাহর কিতাব। আল্লাহর কিতাব লেনদেন, বিচার, অর্থনীতি, জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষাদীক্ষা, চরিত্র, শান্তি-নিরাপত্তাসহ জীবনের সব বিষয়েই সঠিক ও যথার্থ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। আল্লাহ বলেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সমৃদ্ধির পথ খুলে দিতাম।’ (সূরা আরাফ : ৯৬)। মুসলমানরা কোরআনের পথনির্দেশ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একে অপরের ঘাড় মটকাচ্ছে। বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়টি থেকেই সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আমার পর তোমরা এরকম অবিশ্বাসী হয়ে যেও না, যাতে তোমরা একে অপরের শিরচ্ছেদ করতে থাক।’
লেখক : এম.ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
২৯২৮
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
বিসমিল্লাহ্ হির রাহমানির রাহিম। #তাওয়াফে নিষিদ্ধ কাজ ৭ টি ১,অজু......
মাবরুর হজের বিনিময় জান্নাত অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী হজের ইবাদত......
বিসমিল্লাহ্ হির রাহমানির রাহিম। #ইহরামের ফরজ ২ টি ১,নিয়ত করা,......
বিসমিল্লাহ্ হির রাহমানির রাহিম। হজ্জের সুন্নত ১৪ টি ১,ইহরাম বাঁধার......
বিদায় হজের ভাষণ: মানবাধিকারেরর মৌলিক নীতিমালা অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী......
হজ্জ্বের ফরজ,ওয়াজিব ও সুন্নত হজ্জ্বের ফরজ তিনটি। যথাঃ ১। ইহরাম......
বিসমিল্লাহ্ হির রাহমানির রাহিম। #ওমরাহ্ এর ফরজ ২ টি ১,ইহরাম......
হাফেজদের মর্যাদা রমজান মাসে আমাদের দেশে তারবিহ নামাজে খতমে কুরআনের......
বিসমিল্লাহ্ হির রাহমানির রাহিম। #হজ্জের নিয়ত আল্লাহুম্মা ইন্নি উরীদুলহাজ্জা, ফায়াসসিরহুলি......