সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

শারিয়া, শারিয়া আইন ও আমাদের ইমামেরা
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ১৫/০৬/২০১৭

শারিয়া মানে হল নীতিমালা − ইংরেজিতে যাকে বলে “প্রিন্সিপল্স্”। আইন শব্দের আরবি হল “কানুন”। কোরাণ যদি আইনের কেতাব হত তবে কোরাণে “শারিয়া” না হয়ে “কানুন” শব্দটাই থাকত, এ তো স্বাভাবিক কথা। কোরাণে আমরা কোথাও পাইনি “এটা কানুন-এর কেতাব,” বরং আছে এটা হল উপদেশ-কেতাব, মনে করিয়ে দেবার কেতাব ও বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদের কেতাব, আলোকিত কেতাব। ‘উপদেশ’ বা ‘সুসংবাদ’ রাষ্ট্রীয় আইন হতে পারে না। শক্তির সাথে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের ওপরে আইন প্রয়োগ করে, কিন্তু আমরা জানি, ইসলামে জোর-জবরদস্তি নেই (বাকারা ২৫৬, কাফেরূন ৬, আশ শুরা ১৫, ইত্যাদি)। চিরকাল অনেক সুফি-দরবেশ এতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসও করেছেন। মিশরের বিচারক আল্ আশমায়ী তাঁদের একজন। তিনি বলেন ঃ “কোরাণ শারিয়া শব্দটাকে ব্যবহার করেছে নৈতিক পথনির্দেশ হিসেবে, রাষ্ট্রীয় কোনকিছু এতে নেই” (উসুল আল্ শারিয়া পৃঃ ৫৩-র সূত্র)। বিখ্যাত ইসলামি পণ্ডিত ডঃ খালেদ আল্ ফাদেল স্পষ্টই বলেছেন ঃ “শারিয়া শুধু নৈতিক বিধান…রাষ্ট্রের আইন দিয়ে নৈতিক উনড়বতির প্রশড়বই ওঠে না” (দ্য গ্রেট থেফ্ট পৃঃ ১৯৬)। কোন ইতিহাসের বইতে প্রাচীন সমাজের কিছু অর্থনীতির বিবরণ থাকতে পারে কিন্তু তাতে সেটা অর্থনীতির বই হয়ে যায় না, বরং ইতিহাসকেই প্রমাণ করে। তেমনি কোরাণে কিছু ইতিহাস আছে, গ্রহ-নক্ষত্র আছে, অর্থনীতি আছে, কিছু আইনও আছে শুধু কোরাণের উপদেশ-বাণী প্রতিষ্ঠা করার জন্যই, কিন্তু তাই বলে কোরাণ ওগুলোর কেতাব হয়ে যায়নি, − উপদেশ সুসংবাদের কেতাবই আছে। এমনকি শারিয়া আইন বানাবার যে উৎস ফিক্হ, এ শব্দটারও অর্থ হল ‘মানুষের উপলব্ধি,’ কোন রাষ্ট্রীয় আইন নয়। এ উপলব্ধি কিসের উপলব্ধি ? দেখুন, − “সে যুগে ফিকাহ্ শব্দের অর্থ ছিল পরকালের পথ, কু-রিপু’র সূক্ষ্ম বিপদাপদ ও ক্ষতিকর মাসলা সমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া…সত্যি কথা হল, অধিকাংশ বুযুর্গ মনীষী ফিকাহ্ শব্দকে আখেরাত বিষয়ক শাস্ত্রের অর্থেই ব্যবহার করতেন, কিন্তু এখন এ-শব্দটি কেবল এক বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে মানুষ প্রতারণার জালে আবদ্ধ হচ্ছে” (ইমাম গাজ্জালী, এহিয়া উলুম আল দ্বীন ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৯-৫১)।

আরবিতে শারিয়া শব্দের মূল ধাতুগত অর্থ হল বালুর ওপরে উট-পশুর পায়ের ছাপে তৈরি পথ, যে পথে তারা পানির কাছে পানি খেতে যায়। আরেক বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিশেষজ্ঞ-দার্শনিকের মতে ঃ “কোরাণে কোথাও শারিয়া শব্দে কোন সামাজিক আইন- কানুনের ইঙ্গিত নেই। শারিয়া শব্দটি বিশেষ্য, এটা কোরাণে আছে মাত্র এক জায়গায়, সুরা আল্ জাসিয়াহ ১৮ (৪৫ঃ১৮)। এ-ছাড়া μিμয়াপদ হিসেবে (শারা’আ) আছে মাত্র দুই জায়গায়, মায়েদা ৪৮ ও আশ্ শুরা ১৩” (চ্যালেঞ্জ অব্ ফাণ্ডামেণ্টালিজম্, ডঃ বাসাম তিবি, পৃঃ ১৭০)। আপনারা যাতে মিলিয়ে নিতে পারেন সেজন্য আয়াতগুলো নীচে দেয়া হলো।

১। আল্ জাসিয়াহ ১৮ ঃ “অতঃপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরিয়তের ওপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল- খুশির অনুসরণ করবেন না।”

২। মায়েদাহ ৪৮ ঃ “আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি নীতিমালা ও পথ দিয়েছি।” অনেক অনুবাদে শারা’আ অর্থাৎ ‘নীতিমালা দেওয়া’ − এর অনুবাদে ‘আইন দেওয়া’ ব্যবহার করে শব্দটাকে ‘সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় আইন দেওয়া’ বলে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। এটাই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রম ও প্রধান ষড়যন্ত্র।

৩। আশ্ শুরা ১৩ ঃ “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন (শারা’আ − পথ নির্ধারিত করে দেওয়া) যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহ্কে, যা আমি আদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না।”

৪। আরো দেখুন সুরা আশ শুরা আয়াত ২১।

আমরা দেখছি হজরত নূহ্, হজরত ইব্রাহীম, হজরত মূসা, ও হজরত ঈসা ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি, করার চেষ্টাও করেননি। বরং তাঁদের দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী। এর বাইরে নবী-রসুলরা বহুকিছু করেছেন প্রয়োজনে, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দে, মানুষের মঙ্গলের জন্য ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণে। যেমন নবীরা উটে চড়েছেন ও নবীজী উটের মূত্র খেতে বলেছেন। এগুলো ইসলামি ধর্মবিশ্বসের অঙ্গ হতে পারে না। তাই হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছেন সাম্প্রতিক কালের বিশ্ববরেণ্য ইসলামি পণ্ডিত ডঃ ফজলুর রহমান ঃ “নবীজীর সব কথা ও কাজকর্ম ইসলামি ধর্ম-বিশ্বাসের অঙ্গ নয়, তাঁর বহু কাজ ও কথা ধর্মনিরপেক্ষ” (ইসলাম, পৃঃ ২২৯)।

কিন্তু তাহলে শারিয়া আইন কাকে বলে ? বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শারিয়াবিদ ডঃ হাশিম কামালি’র মতে ঃ “কখনো কখনো কোরাণের একটি বিষয়ে সাত বা আট রকমের আইনগত মতামত পাওয়া যায়। মুসলিম শাসক তাহার মধ্যে একটিকে বৈধ করিয়া আইন হিসেবে প্রয়োগ করিলে শুধুমাত্র সেইটিই সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হয়” (প্রিন্সিপল্স্ অব্ ইসলামি জুরি¯প্র“ডেন্স, পৃঃ ৩১)। অর্থাৎ ইসলামি রাষ্ট্রের শাসক প্রয়োগ না করা পর্যন্ত সেগুলো শুধুমাত্র ইমামদের ব্যক্তিগত মতামত হয়েই থাকবে, আইন হবে না। তাই ইমামদের এই ব্যক্তিগত মতামতগুলো গ্রামগঞ্জের আর ইণ্টারনেটের শারিয়া আদালতগুলোতে ‘আলা’র আইন’ হিসেবে প্রয়োগ করাটা মোটেই ইসলামি নয়। শারিয়া আইন প্রয়োগের বেলাতেও আইন দেয়া আছে ঃ “খলিফা ও তাঁহার প্রতিনিধি ছাড়া আর কেহই বিচারক নিয়োগ করিতে পারিবে না” (শাফি’ আইন নং o.21.3)। অর্থাৎ আমাদের গ্রামগঞ্জের ফতোয়ার আদালতগুলো শারিয়া মোতাবেকই সম্পূর্ণ অবৈধ।

এখানেই ফতোয়া শব্দটা চলে আসে। এ শব্দটা আমাদের পূর্বপুরুষেরা জানতেনই না। কিন্তু আজকাল এটার প্রয়োগ বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে, ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের গ্রামে-গঞ্জে মাঝে মাঝেই কথাটা শোনা যায়। ইমাম শাফি তাঁর শারিয়া বই উমদাত আল্ সালিক-এর ১১৮৪ পৃষ্ঠায় ফতোয়াকে বলেছেন Legal Formal Opinion অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক আইনগত অভিমত। শব্দটার মানে ইসলামি ওয়েসবাইটে দেয়া আছে এভাবে ঃ “ফতোয়া হইল ইসলামিক আইনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের অভিমত। শুধমু াত্র কোন বৈধ কর্তৃপক্ষই ইহা দিতে পারেন। কিন্তু যেহেত ু ইসলামে (সষ্ট্র া ও সৃষ্টির মধ্যে পাদ্রী-পুরুতের মত) কোন মধ্যব্যক্তি নাই কাজেই ফতোয়া জনগণের উপর বাধ্যতামূলক নহে।”

গ্রহণ ও বর্জনের এই বৈধ অধিকার সম্পূর্ণ মুসলিম জনগণের, ফতোয়া প্রদানকারীর নয়। জনগণের এই বৈধ অধিকারকে কেউ অস্বীকার করে মানুষের ওপর ফতোয়া চাপিয়ে দিলে তা ঐ শারিয়ারই বিরোধী হয়ে যাবে যে শারিয়া ঐ ফতোয়াবাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান।

ব্যাপারটা আরও একটু স্পষ্ট হবে আমাদের চারজন শারিয়া-ইমামদের দিকে তাকালে। সেই ইমামেরা আসলে কি চেয়েছিলেন ? নিজেদের আইনকে তাঁরা কি বলেছিলেন ? তখনকার ‘ইসলামি রাষ্ট্র’-এর সাথে তাঁদের কি সম্পর্ক ছিল ?

(১) “ইমাম শাফি’ তাঁহার আইনকে ‘শাফি আইন’ নামে চালাইতে চান নাই” (ইমাম শাফি’র বিখ্যাত কেতাব রিসালা, পৃঃ ২২)।

(২) “ইমাম শাফি’ নিজের নামে কোনো মজহাব চালাইতে চান নাই বলিয়া প্রতীয়মান হয়” (রিসালা, পৃঃ ৪৫)।

(৩) “ইমাম শাফি’ নিজেকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র-ক্ষমতা হইতে সম্পূর্ণ দূরে রাখিয়াছেন” (রিসালা, পৃঃ ১৮)।

(৪) “খালিফা মামুনুর রশীদ ইমাম শাফি’-কে কাজীর পদে আমন্ত্রণ জানাইলে শাফি’ তা প্রত্যাখ্যান করেন” (শারিয়া, দি ইসলামিক ল’ − ডঃ আবদুর রাহমান ডোই, পৃঃ ১০৫)।

(৫) “খলিফা আল্ মনসুর ইমাম মালিককে অনুরোধ করেন ইসলামি আইন লিখিতে যাহাতে খালিফা সকল মজহাবের উপরে উহাকে আইন হিসেবে বলবৎ করিতে পারেন। কিন্তু ইমাম মালিক তাহা প্রত্যাখ্যান করেন” (শাফি শারিয়া উমদাত্ আল সালিক, পৃঃ ১০৬৯)।

(৬) “খলিফা মনসুর ইমাম আবু হানিফাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণের অনুরোধ করিলে তিনি তাহা গ্রহণ করেন নাই” (বিধিবদ্ধ ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৭৭)।

(৭) “খলিফা হারুনর রশীদ ইমাম মালিকের কেতাবকে কাবা শরীফের দেয়ালে ঝোলানোর ও জনগণকে তা মানতে বাধ্য করার প্রস্তাব দিলে ইমাম মালিক তা প্রত্যাখ্যান করেন ” (দ্য ফোর ইমাম্স্ − আবু যাহরা পৃষ্ঠা ৭২)।

শারিয়া-রাষ্ট্র আমাদের প্রায় প্রতিটি ইমামের ওপর যে অত্যাচার করেছে তা চিন্তাও করা যায় না। শারিয়া-রাষ্ট্রের সৈনরা মদিনার পথে জনতার সামনে ইমাম মালিককে চাবুক মেরে মেরে তাঁর শরীর থেকে মুচড়ে মুচড়ে হাত ভেঙে ফেলেছে। শারিয়া- জেলখানায় বন্দি করেছে ইমাম শাফি আর ইমাম হাম্বলকে, জেলখানায় বন্দি করে বিষ দিয়ে খুন করেছে ইমাম তাইমিয়ার মত সম্মানিত ইমামকেও। এই অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি প্রায় কেউই। লোকচক্ষুর অন্তরালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন নির্বাসনদণ্ডে দণ্ডিত ইমাম বোখারি, দু’হাত তুলে হাহাকার করতেন ইসলামের যুগশ্রেষ্ঠ এই ইমাম ঃ “হে আলাহ্ ! আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও − এ দুনিয়া আমার জন্য ছোট হয়ে গেছে।” খেলাফতের নামে মুসলিম-ইতিহাসে অন্তত বিশটা রাজতন্ত্রের অবিরত গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা, গুপ্তহত্যা, বিদ্রোহ, পালটা বিদ্রোহে জনগণের দুর্ভোগের সাথে একই দুর্ভাগ্য হয়েছে অন্যান্য ইমামদেরও। খলিফা আল্ মনসুরের হাতে জেলখানায় খুন হয়েছেন ইমাম জাফর সাদিক, তাঁর পুত্র খলিফা হারুনর রশীদের হাতে খুন হয়েছেন জাফর সাদিকের পুত্র ইমাম মূসা কাজিম। সেই সাথে সুফিদের ওপরে যে কি অত্যাচার নেমে এসেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

আর ইমাম আবু হানিফা ? শারিয়া-রাষ্ট্র ইমাম তাইমিয়ার মত জেলখানায় বন্দি করে জেলখানার ভেতরেই বিষ দিয়ে খুন করেছে তাঁকেও। অথচ হানাফি হুদুদ আইনে লেখা আছে ঃ “রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে হুদুদ মামলা করা যাইবে না” (হানাফি আইন হেদায়া পৃঃ ১৮৮)। এসব অত্যাচারী শাসককে বাঁচাবার জন্য এ-অন্যায় আইন ইমাম আবু হানিফা কখনোই বানাতে পারেন না তা এক বাচ্চাও বোঝে। অথচ তাঁরই নামে চলছে এ-সব অন্যায় আইন। এ-থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় রাজপ্রাসাদে এক কোরাণ ছাড়া প্রতিটি দলিল বদলাবার সম্পূর্ণ সুযোগ ছিল । এ বইয়ের অনেক নিবন্ধে সে প্রমাণ আছে। ইমামরা মারা যাওয়ার পর ওই ইমামদের নামেই আইন বা হাদিস প্রতিষ্ঠিত করা রাজক্ষমতার পক্ষে ডালভাত। হাদিসে বা শারিয়া আইনে আমরা যে-সব অন্যায় আইন দেখি তা এ-ষড়যন্ত্রেরই ফল। এমনকি সহি হাদিসগুলোতেও হাজার হাজার জাল হাদিস আছে তা সবাই জানেন ও মানেন।

এই হলো মুসলমানের রক্তাক্ত ইতিহাস। “এইসব সন্ত্রাসী রাজতন্ত্রের জন্যই প্রভাবশালী অনেক সুফি ইরাণ-তুর্কীস্থান হইতে ভারতবর্ষে চলিয়া আসেন। মুসলিম রাষ্ট্রের সন্ত্রাস সর্বব্যাপী হওয়ায় সুফিদের উপর অত্যাচার হইতেছিল” − হিউম্যান রাইট্স্ ইন্মু সলিম ওয়ার্লড − ডঃ মায়মুল খান, পৃঃ ৬৫। এত আগুনের ভেতরেও মুসলিম জ্ঞানীবিজ্ঞানীরা অর্জন করেছিলেন বিশ্ব-জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ যা পেয়ে ইউরোপ-আমেরিকার বিজ্ঞানীরা ধন্য হয়েছে, এগিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বকে। এ-কথা তাঁরা এখনও সর্বদা সসম্মানে স্বীকার করেন।

বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অনেক উদ্ধৃতি দিলাম। কিন্তু আমাদেরও অনেক প্রবাসী ইসলামি বিশেষজ্ঞ আছেন। ডঃ মায়মুল খানের উদ্ধৃতি আগেই দিয়েছি।প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে আমেরিকার আপার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ ওমর ফারুক অন্যতম। যাঁরা ছোট পরিসরে শারিয়ার মূল তত্ত্ব জানতে চান আমি তাঁদের অনুরোধ করব তাঁর “শারিয়া, ল’ অ্যাণ্ড ইসলাম ঃ লিগ্যালিজম্ ভার্সাস ভ্যাল্যু-ওরিয়েণ্টেশন” নিবন্ধটা পড়তে। কেউ ওটা বাংলায় অনুবাদ করে চারদিকে ছড়িয়ে দিলে ভাল হয়। ওটা পাওয়া যাবে ইণ্টারনেটের এই ঠিকানায় ঃ http://www.theghouseteam.com/mg/WMC_Files/Shariah_value_Dr.Farooq.pdf

পুরোটা এখানে দেয়া গেল না, কিছু অংশের সারাংশ করে ভাবানুবাদ দিচ্ছি যেগুলো বিচ্ছিনড়ব হলেও স্ব-ব্যাখ্যাকারী।

“এ পর্যন্ত যাহা বলা হইল তাহার ভিত্তিতে (বলা যায়) শারিয়া ইসলাম নহে। কিন্তু মওলানা মওদুদির অনুসারী খুরশিদ আহমেদ বলিয়াছেন ‘ইসলামের অপর নাম শারিয়া।’ উপরোক্ত বক্তব্যে মনে হয় ইসলামে জীবনের সকল ব্যাপারে বিধান আছে। ইহাও মনে হয় মানুষের জীবনে যাহা কিছু ঘটিতে পারে সেই প্রত্যেক বিষয়, অবস্থা ও সমস্যার সমাধান তৈরি আছে (অথবা সহজে এবং দ্রুত তৈরি করিবার মত করিয়া দেওয়া আছে)। আরো মনে হয় ইসলাম হইল একটি সুসংহত স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন-বিধান, মুসলমানের উচিত নহে সমাধান বা নীতিমালার জন্য অন্য কিছুর তালাশ করা… ”

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হইল জীবনের প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রদান করে। কিন্তু ইহাকে এই পর্যন্ত টানিয়া নেওয়াও ভুল যে মুসলিম বা জনগণের সকল সমস্যার আগে হইতে তৈরি করা ম্যানুয়াল হইল ইসলাম। (শারিয়াবিদদের মতামতে) মনে হয় ধর্মগ্রন্থের অক্ষর বা ইমামেরা জীবনের সকল বিষয় ও সমস্যা আগে হইতেই চিহ্নিত করিয়া সমাধান দিয়াছেন। সেই হিসেবে, অন্য কাহারো কাছ হইতে কোন কিছু শিক্ষা করার দরকারই নাই। (বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যতীত) সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-বিষয়ক, রাজনৈতিক ও বাকি যত কিছুই মনে হইতে পারে তাহার সকল সমাধানের জন্য একটি কাজই করিতে হইবে, − তাহা হইল কোরাণ-হাদিস খুলিয়া দেখা, অথবা আইনবিদ ও বিশেষজ্ঞদের কেতাব খুলিয়া দেখা, অথবা কোন ফতোয়া-প্রতিষ্ঠানের সহিত যোগাযোগ করা, − তাহা হইলেই সমাধান পাওয়া যাইবে। কিন্তু বাস্তব তাহা নহে। ভাবিয়া দেখা দরকার সমস্যা ও সমাধান দুইটাই যদি এত তৈরি তবে বিশ্ব-মুসলিমের এই করুণ অবস্থা কেন। আগে হইতেই মুসলিম-চিন্তাবিদদের একটি মৌলিক ভ্রান্তি হইল (ধর্মগ্রন্থের) কেতাবপ্রবণতা… আমাদের তথাকথিত শারিয়া-বিশেষজ্ঞরা আমাদিগকে কেতাবের সহিত আঠা দিয়া আটকাইয়া রাখিয়াছেন, ওদিকে বিজ্ঞান আমাদিগকে বহু পিছনে ফেলিয়া আগাইয়া গিয়াছে…আমরা যত বেশি শারিয়া-প্রবণ হইয়াছি তত বেশি আলাহ্ ’র নির্দেশকে অমান্য করিয়াছি, বরং আমাদের মাথা কেতাবের ভিতরে ঢুকাইয়া রাখিয়াছি। আমরা আরও কেতাব পড়িয়াছি এবং আগের কেতাবের উপরে আরও কেতাব লিখিয়াছি। ফল যাহা হইবার তাহাই হইয়াছে। এখন আমরা মহানন্দে (?) জীবন কাটাইতেছি ওই ‘সামগ্রিক জীবন-বিধান’ মোতাবেক, কিন্তু কোথাও পৌঁছাইতে পারিতেছি না…সমস্যা হইল ইসলামের স্থবির উপলব্ধি, যেখানে বর্ণমালা ও ইহার বিশেষজ্ঞদিগকে সমস্যা-সমাধানের ডিকশনারী (অভিধান) ধরা হয়…প্রকৃতপক্ষে ইসলাম কোন অভিধান নহে, ইসলাম বর্ণমালার মত। অভিধানে দরকার-মত বহু শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু বর্ণমালা দিয়াই আরও বহু (নূতন) শব্দ তৈরি করা প্রয়োজন হয়। যখন ‘সামগ্রিক জীবন-বিধান’ বলিয়া ইসলামকে ডিকশনারির মত মনে করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা ইতিহাসের কাঠামোতে ফসিলের মত বন্দি হইয়া পড়ি। সামগ্রিক জীবন-বিধানকে বর্ণমালা মনে করিলে আমরা জীবনের নূতন নূতন বিষয় ও সমস্যার সমাধানে গতি পাইতাম। শাতিবি বলিয়াছেন, ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায় প্রত্যেক আলিম যিনি সমস্যা-সমাধানের জন্য কোরাণের দ্বারস্থ হইয়াছেন তিনি কোরাণকে নীতিমালা হিসেবেই পাইয়াছেন যাহা তাঁহাকে সে সমস্যা-সমাধানের মূল্যবোধ দিয়াছে’…ইসলাম সম্বন্ধে গভীরতম বিভ্রান্তির কারণ হইয়াছে শারিয়া ও ইসলামি আইনের পারস্পরিক সম্পর্ক কেননা কিছু লোক এই বিভ্রান্তির ভিত্তিতে ইসলাম প্রয়োগ করিতে চান।” − ভাবানুবাদ শেষ ॥

৫২৮

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭