সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

একাধিক বিয়ে এবং অামরা...
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : মঙ্গলবার ০৬/০২/২০১৮

একাধিক বিয়ে এবং আমরা...

পশ্চিমা চিন্তা-ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের সমাজ আজ বিবাহের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের জন্য কেবলমাত্র একজন স্ত্রীকেই বাধ্যতামূলক করে ফেলেছে। ইসলাম যেখানে একজন মুসলিম পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে, শুধু অনুমতিই নয় বরং উৎসাহিত করেছে, এমনকি আজকের যুগের প্রয়োজনীয়তার সাপেক্ষে এটা অনেকাংশে ওয়াজিবের পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে, সেখানে আজ কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করলে আমরা তার চরিত্র খারাপ কিংবা তাকে ভোগবাদী বলে তকমা দিতেও কুন্ঠা বোধ করি না! আর এর জন্য আমাদের বোনেরাও অনেকাংশে দায়ী। অনেক সিনিয়র ভাইকে দ্বিতীয় বিয়ের কথা বললেই বলেন সেরকম করলে আগের স্ত্রী আর থাকবে না! অনেকে বলেন দ্বিতীয় বিয়ে সম্ভব না।
.
অন্যদিকে আমাদের সমাজে অসংখ্য বোন আজ ডিভোর্সি কিংবা বিধবা। অসংখ্য বোনের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে, কিংবা দেখতে অতোটা সুন্দর না হওয়ার জন্য বিয়ে হচ্ছে না। আর আমরা কখনো বয়সের কারনে। কখনো বা নিজেদের উপার্জন ততো ভালো না হওয়াতে। কখনো বা নিজে চাইলেও ছোটো হওয়াতে পরিবারে তেমন আধিপত্য নেই বলে এমন কাউকে বিয়ে করতে পারছি না। অথচ যেটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। তাহলে ঐ বোনদের দায়িত্ব কে নেবে? উনারা কি আজীবন এভাবে কাটিয়ে দেবেন? তারা কিই বা দোষ করেছেন? তারা কি কখনো স্ত্রী হতে পারবেন না? মা হতে পারবেন না? পরিবার-সংসারের আশা কি তাদের নেই? আর যে আপনি আজ আপনার স্বামীকে উৎসাহিত করছেননা অন্য কোনো অসহায় বোনের দায়িত্ব নিতে, কাল যে আপনি বিধবা-অসহায় হবেন না তার নিশ্চয়তা কে দিলো আপনাকে?
.
বর্তমানে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত এই "একটার বেশি বিয়ে করা যাবে না" রিচ্যুয়াল-টার জন্য এর থেকে আরো হাজারটা সুদূরপ্রসারী সমস্যা তৈরি হচ্ছে, অথচ আমরা তা অনুধাবন করতে পারছি না। শুধু সমস্যা নয় বরং সেগুলো সমাজের এক একটা ব্যাধি। যার থেকে সমাজের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। ছেলেদের গলায় আজ "জীবনে তো একবারই বিয়ে"-র তালা ঝুলানোর জন্য, ছেলেরা পাত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক খুঁতখুঁতে হয়ে গেছে। তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন আমাদের বোনেরাই। ঘরে ঘরে বাড়ছে বয়স্ক কুমারী মেয়েদের সংখ্যা। মেয়ে জন্মানোর সাথে সাথেই পিতার মাথায় বিশাল দায়িত্বের বোঝা এসে চাপছে যে, মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। পণের ভারে নুইয়ে পড়ছে কতো পরিবার। চলছে বধূ-নিগ্রহ। সংসারে আশান্তি বাড়ছে। বাড়ছে তালাকের সংখ্যা। বাড়ছে কণ্যাভ্রুন হত্যা। আরো কতো কিছু...
.
এই এক বিয়ের নীতির জন্য ছেলেদের মনে এই মানসিকতা তৈরি হচ্ছেঃ যেহেতু জীবনে একবারই বিয়ে করতে পারবো, সেহেতু বউকে হতে হবে একেবারে পারফেক্ট, আইডিয়াল। তার মধ্যে কোনো রকমের খুঁত থাকলে হবে না। আমার বউকে তো সুন্দরী হতেই হবে, নো চয়েস। সেইসাথে বউকে হতে হবে উচ্চশিক্ষিত। বুদ্ধিমতি। চাকুরীজীবি। স্লিম ফিগার। এতএত রূপগুন তার থাকতে হবে। সাথে সাথে সমাজ-পরিবারের চাওয়া হিসেবে, তাকে কম বয়সী হতে হবে। বউ তো বিধবা-ডিভর্সী হবার প্রশ্নই উঠে না। সেইসাথে টাকা-পয়সা, সামাজিক স্ট্যাটাসেরও একটা বিষয় আছে। বিয়ে তো জীবনে একটাই করবো। এতো বছর ওয়েট করেছি তো এই জন্যেই যে একটা পারফেক্ট মেয়েকে বিয়ে করবো!
.
আর পাত্রপক্ষের ক্রমবর্ধমান এই আকাশছোঁয়া চাহিদা পূরণে অপারগ অসংখ্য বোনের কপালে জুটছে শুধু আহাজারি। আর তালাকপ্রাপ্তা কিংবা বিধবা বোনেদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, তাদের দ্বিতীয়বার বিয়ে হওয়া তো এখন কল্পনাতীত!
.
আর শুধু এটুকুই নয়, এই "এক বিয়ে নীতি"-র সঙ্গে কোথাও না কোথাও জড়িয়ে রয়েছে পরকীয়া ও পতিতালয়ের মতো ভয়ংকর সব ব্যাধি। এরকম আরো অনেক কিছু। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারবো। আল্লাহর তৈরি একটি হালাল পথকে বন্ধ করে আমরা একাধিক হারাম পথ খুলে দিয়েছি।
.
আমরা যদি ইসলামের সোনালী যুগে একবার ফিরে তাকায় তাহলে দেখবো সাহাবা (রাঃ)-দের সময় এই বিয়ে জিনিসটা অনেক সহজ ছিলো। সেইসময় কখোনো এরকম হতো না যে, বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ কোনো ভালো পাত্রের প্রস্তাব আসছে না। বরং তখন পাত্রীপক্ষের কাছে একাধিক বিয়ের প্রস্তাব আসতো, আর সে একাধিক প্রস্তাবকে রিজেক্ট করে নিজের পছন্দ মতো একজনকে চয়েস করতো। কেউ তালাকপ্রাপ্ত হলেই কিংবা কারো স্বামী শহীদ হলেই সঙ্গে সঙ্গে অন্যজন বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতো। ধনী হোক বা দরিদ্র, তালাকপ্রাপ্তা কিংবা বিধবা, সুন্দর কিংবা অসুন্দর - কোনো মেয়ের পিতার জন্যই এটা চিন্তার বিষয় ছিলোনা যে মেয়ের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র পাবো কি না। আর এটা এজন্যই সম্ভব হয়েছিলো যে তখন সমাজে পুরুষদের জন্য একাধিক বিয়ে করাটাই সাধারণ ছিলো। এটা ছিলো সকলের কাছে নবীজীর সুন্নত! আর সাহাবা-রা (রাঃ) প্রত্যেকটা সুন্নতকে মজবুত ভাবে আঁকরে ধরে ছিলেন। তাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিলো সাম্য, শান্তি।
.
ইসলাম তো বিয়েকে অনেক সহজ করেছে। অথচ আমরা দ্বীনে এসেও তা কঠিন করে রেখেছি। যদি একাধিক বিয়েকে আমরা আবার সহজ করতে পারি তাহলে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেটা বা সদ্য চাকরীতে জয়েন করা স্বল্প বেতনের ছেলেটা অপেক্ষাকৃত কম সুন্দর বা অসহায় কোনো এতিম/ডিভোর্সড/বিধবা কাউকে বিয়ে করে নিতো। (ফেমিনিষ্টরা না আবার বলা শুরু করে আমরা বিধবা ও ডিভোর্সিদের অসহায় মনে করি। না, আমরা অসহায় মনে করি না। সমাজ তাদেরকে অসহায় বানিয়ে রেখেছে। তার জন্যে সমাজের এক বিয়ে নীতি দায়ী।) ছেলেটার সাইকোলজি হয়তো কাজ করতো যে, ক্যারিয়ারটা আরেকটু গুছিয়ে তখন হয়তো কোনো আয়িশা বা যায়নাব (রূপকার্থে) কে বিয়ে করে নিবো। এরকম হলে সমাজ অনেক ব্যালেন্সড হতো। সমাজে এতো এতো অসহায় অসুন্দর বোনও অবিবাহিত থাকতো না। যতদিন না আমরা সমাজের এই ট্যাবু (এক বিয়ে নীতি) ভেঙ্গে ফেলতে পারছি ততদিন এই সমস্যার সমাধান খুব কঠিন। 
.
বিয়ে যে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরণের বস্তু ব্যাপারটা এমন নয়। বিয়ে/সংসার একটা প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে সমাজ গড়ে উঠে এবং এতে ভারসাম্য থাকে।
.
তাই হে আমার দ্বীনের বোনেরা! আপনার স্বামী যদি সচ্চরিত্রের এবং দ্বীনদার হয়ে থাকে। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে থাকে। সে যদি মেডিক্যালি আনফিট না হয়ে থাকে। তাহলে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দিয়ে আপনি আপনার উম্মাহর-ই অন্য আরেক অসহায় বোনের উপর জুলুম করছেননা কি? আপনার স্বামী ইনসাফ করতে পারবে না এই অজুহাত দেখিয়ে আপনি তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দিচ্ছেন না। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বরং এটাই কি বেইনসাফি নয়?
.
তাই আসুন আমরা সকলে একটা সুন্নতকে জিন্দা করি! আসুন আমরা সাহাবাদের লাইফস্টাইলকে মডেল হিসেবে অনুকরন করি। সমাজের প্রয়োজনীয়তার তাগিদে আমাদের স্বামীদের, সন্তানদের, ভাইদের একাদিক বিবাহে উদ্বুদ্ধ করি। আসুন আমরা সমাজের এই ট্যাবুকে, এই কুসংস্কারকে ভেঙে ফেলি। আল্লাহর তৈরি একটি ব্যবস্থাকে অন্তর থেকে মেনে নিই। আর এতে উপকৃত হবো আমরাই।

কোরআন ও হাদীসের আলোকে পুরুষদের জন্য একাধিক বিবাহ করা কেবল জায়েজ (মুবাহ), না মুস্তাহাব, না অবস্থা ক্ষেত্রে ওয়াজিব - ইনশাআল্লাহ এটা নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করবো।
আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দিন। আমীন।
ভুল ত্রুটির জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি। সংগৃহীত ও পরিমার্জিত।

৮৯৩

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭