ইমাম শব্দটি আরবী, তার বাংলা অর্থ হচ্ছে নেতা, প্রধান, নামাজের ইমাম, অগ্রণী, দিক-নির্দেশক, আদর্শ নমুনা ইত্যাদি। সাধারণত ইমাম বলা হয় যাকে অনুসরণ করা হয়। কর্মের মাঝে যিনি সবার আগে থাকে। যেমন নবী করীম (সাঃ) হলেন নবীদের ইমাম, খলিফা মুসলমানদের ইমাম, সেনাপতি সৈন্যদের ইমাম।
নামাজের ইমাম বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যিনি মুসল্লীদের মাঝে সবার আগে থাকেন, নামাজের ক্রিয়াগুলোতে যাকে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়। (লিসানুল আরব, আল-মুজামুল ওয়াফী)
নামাজের ইমামতি হচ্ছে একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ শরয়ী দায়িত্ব। যেমন মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “জাতির ইমাম হবে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর কিতাব অধিক ভাল পড়তে পারেন”। এতে প্রতীয়মান হয় ইমামতের মর্যাদা সবার উপরে।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূরা ফুরকানে মুমিন এর ১৩টি গুণের বর্ণনা দিয়েছেন। তার মাঝে একটি গুণ হলো- মুমিনরা আল্লাহ্র দরবারে এই বলে প্রার্থনা করবে যে, “হে প্রভু আমাদের মুত্তাকীনদের ইমাম বানিয়ে দিন। সুতরাং একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো ইমামতের আকাক্সক্ষা পোষণ করা।
ইমামত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ পুরস্কার বা নেয়ামত। যেমন আল্লাহ তা’য়ালা সূরা সিজদার ২৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, “আমি তাদেরকেই ইমামত দান করেছি যারা আমার আদেশের উপর অটল-অবিচল থাকে এবং আমার নিদর্শনাবলীর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।”
নবী করীম (সাঃ) স্বয়ং ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য আল্লাহ্র দরবারে দু’আ করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম হলেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। “হে আল্লাহ আপনি ইমামদের সুপথে পরিচালিত করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন”। (আবু দাউদ-৫১৭, তিরমিযি- ২০৭)
ইমামত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব। যা পালন করেছেন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) স্বয়ং নিজেই। তাঁর পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনগণ। তাদের পরবর্তী মুসলমানদের সর্বোত্তম পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ সমাজের ইমামতি করেছেন।
নবী করীম (সাঃ) ইমামদের মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সাথে সাথে এই মহান দায়িত্ব পালনে ইমামদের সতর্কও করেছেন হযরত উক্বাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি “যদি কোনো ইমাম সময়মতো নামাজের ইমামতি করে তবে তার ছওয়াব ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ের উপর বর্তাবে। আর যদি এতে কোনো ত্রুটি হয়, সেটির দায়ভার হবে ইমামের উপর, মোক্তাদির উপর বর্তাবে না”। (আবু দাউদ- কিতাবুস সালাত বাবু জামায়ীল ইমামতি- ৫৮০)
হযরত সাহাল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি “ইমাম হলেন জিম্মাদার, তিনি যদি উত্তমভাবে কাজ করেন তবে তার পুণ্য ইমাম ও মুক্তাদি উভয়ে পাবেন। আর যদি এতে কোনো ত্রুটি হয় তবে তা হবে ইমামের উপর। মুক্তাদির উপর বর্তাবে না।” [ইবনে-মাজাহ-কিতাবুস সালাত-৯৮১]
এই ইমামতির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে আল্লাহ পাক মানবজাতিকে সুপথে পরিচালনা ও মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যুগে যুগে, তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত নবী রাসূলগণই জনসাধারণকে হেদায়াতের বাণী শুনিয়েছেন এবং ইমামতি করেছেন। নবী (সাঃ) এই গুরুদায়িত্ব পালনে পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। নবী (সাঃ) এর ইন্তিকাল পরবর্তী তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি সাহাবায়ে ক্বেরাম (রাঃ) এই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানবী (সাঃ) এর রেখে যাওয়া এই গুরুদায়িত্ব বর্তমানে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা উচিত। ইমাম, ইমামত ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ রাসূল (সাঃ) যেই অর্থে এবং যেভাবে ব্যাপক অর্থে মুসলিম সমাজে ইমামতি করেছেন, সেই অর্ধে ধরতে হবে। তারা হলেন, রাসূল (সাঃ)-এর যোগ্য উত্তরসূরি। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আলেমগণই হলেন নবীদের ওয়ারিশ।” আলেমগণও সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
নামাজের ইমামতি ছাড়াও তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রকে যেভাবে নিঃস্বার্থভাবে ইমামত ও নেতৃত্ব প্রদান করছেন সেই আদর্শের কথা সকলকে স্মরণ রাখতে হবে।
প্রতিটি মুসলমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় মকতব শিক্ষার মাধ্যমে। আর মকতবের শিক্ষক হলেন সাধারণত ইমামগণই। সুতরাং বলা যায় একজন মুসলমানের প্রথম শিক্ষক হলেন ইমাম। ইমামগণ মকতবে শিশুদের কে কুরআন-হাদীস শিক্ষার পাশাপাশি হস্তলিপি শিক্ষার মাধ্যমে নিরক্ষরমুক্ত জাতি গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। মকতবে শিশুরা শিক্ষা পায় “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ”। অতএব ইমামই প্রথম মানুষকে স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়ে থাকে। মকতবে শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অনেক বিদ্যা অর্জন করে। যেমন মাতা-পিতা, শিক্ষক ও গুরুজনদের সম্মান করতে হবে। ছোটদের স্নেহ করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। মিথ্যা বলা ও মন্দ কাজ করা পাপ। মানুষের উপকার বৈ ক্ষতি করা যাবে না। এসব শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইমামগণ শিশুদের দেশের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।
সমাজে অশান্তির মূল কারণ হলো বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলা রোধে ইমাম সাহেবগণ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছেন। হাদীসে আছে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- “মুসলিম হলো সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে মানুষ নিরাপদ থাকবে।” এই বাণীগুলো ইমামগণ মানুষের মাঝে প্রচার করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। কোনো রাজনৈতিক কিংবা কোনো সাধারণ সভা-সমাবেশে মানুষের নিরাপত্তার জন্য বহুসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এরপরেও বিশৃঙ্খলামুক্ত, শান্ত-সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ শেষ করা যায় না। অথচ প্রতি মসজিদে কিংবা কোনো ধর্মীয় সভা-মাহফিলে একজন ইমাম শত, হাজার-লাখ মানুষকে সাথে নিয়ে ধর্মীয় কার্যাদি অত্যন্ত সুশৃঙ্খলার সাথে সম্পন্ন করে থাকেন। এটি সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইমাম সমাজের সফল ভূমিকার অনন্য দৃষ্টান্ত।
স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিবেশ সংরক্ষণে ইমামদের ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ইমামগণ মকতবের শিশু থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি মুসল্লীদের দীক্ষা দিয়ে থাকেন যে, ‘পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’ পবিত্রতা ব্যতীত কোনো এবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা চর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতার চর্চা করা হয়। সুতরাং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইমাম সাহেবদের ভূমিকা অতুলনীয়।
ইমাম সাহেবগণ মকতবে শিশুদের রাস্তায় চলাচলের আদব শিক্ষা দেন। যেমন- রাস্তার ডান পাশ দিয়ে চলতে হবে। রাস্তায় কষ্টদায়ক কোনো বস্তু দেখলে তা সরিয়ে রাখা। যার মাধ্যমে শিশুরা সামাজিক শিষ্টাচার ও পরিবেশ সচেতনতার শিক্ষা পায়। হাদীস শরীফে রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “কোনো ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষ কিংবা কোনো শস্য রোপণ করে এবং তা থেকে যদি ফল বা ফসল পাখি, মানুষ বা কোনো পশু বক্ষণ করে, তবে তা হবে রোপণকারীর জন্য সদকায়ে জারিয়া’’।
ইমাম সাহেবগণ উক্ত বাণীসমূহ মানুষের মাঝে প্রচার করে জনসমাজকে পরিবেশ সংরক্ষণে উৎসাহিত করেন। ইমামগণ নিজেরাও এর চর্চা করে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে মসজিদের আঙ্গিনা বা ভিটায় সুন্দর সুন্দর বৃক্ষের সারি কিংবা ফুলের বাগান দেখতে পাই। এগুলোর বেশিরভাগই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের হাতে গড়া। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। অথচ এদেশের ইমাম সমাজ বিনা অর্থে উক্ত সেবাটি দিয়ে আসছেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিবেশ সংরক্ষণে ইমাম সমাজের ভূমিকা এর চাইতে বেশি এর কী-ই বা হতে পারে।
প্রতি শুক্রবারে ও বছরের বিশেষ দিন সমূহে এবং বিভিন্ন সভা মাহফিলে ইমামগণ মানুষকে দ্বীন-ধর্মের বয়ানসহ ব্যক্তি, পারিবারিক ও সমাজ জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা করে থাকেন। যা থেকে মানুষ আত্মশুদ্ধির চর্চা করে থাকেন। ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।
উল্লিখিত বিষয়সমূহ থেকে একথা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত যে, দেশ ও জাতি গঠনে এবং সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইমাম সমাজ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জার বিষয় হলো- আমাদের দেশে যারা দেশ ও জাতিকে এই মহৎ সেবাটি নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারবেন তাঁদের ও তাঁদের পেশাকে ছোট দৃষ্টিতে দেখা হয়। সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় বাংলাদেশের সিংহভাগ মসজিদের ইমামগণই মসজিদ কমিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইমামগণ অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা কিংবা সত্য বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি কিংবা অন্য কোনো সদস্যের সাথে ইমামের মনোমালিন্য হলেই ইমাম সাহেবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কারণে অকারণে ইমাম সাহেবদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এর জন্য কমিটি কোনো নীতিমালার অনুসরণ করে না এবং মসজিদ কমিটিকে কারো কাছে জবাবদিহিতাও করতে হয় না।
বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ লাখের উপরে মসজিদ রয়েছে (সরকারি জরিপ মতে) আর প্রতি মসজিদে একজন ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন মিলে পুরো দেশে ১০ লাখের মতো বিশাল এক জনগোষ্ঠী উক্ত পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের আপামর মুসলিম জনসাধারণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিশাল এই ইমাম সমাজের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গুটিকয়েক মসজিদ ব্যতীত প্রায় সব মসজিদে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৩০০০-৭০০০ টাকা যা উল্লেখ করতেও লজ্জা হয়। অথচ বর্তমানে একজন সাধারণ শ্রমিকও মাসে ১০,০০০ টাকা মজুরি পায়। এটি বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও পরিতাপের বিষয়। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির এই যুগে এতো অল্প পারিশ্রমিক নিয়ে ইমাম সাহেবগণ কিভাবে তাদের পরিবারের ব্যয়ভার বহন করবেন। বিবেকবান প্রতিটি মুসলিম নাগরিকের ভাবা উচিত। অবশ্য এ জন্য। ইমাম ও ইমামত শব্দের অর্থ সংকীর্ণভাবে নেয়াও একটি কারণ।
ইমাম সাহেবদের বেতন-ভাতাসহ সংশ্লিষ্ট সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমাম পরিষদ ও ইমাম সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো বেশি তৎপর ও আন্তরিক হতে হবে।
কোন ইমাম সাহেবকে নিয়োগ দেয়া ও চাকরি থেকে বরখাস্তের বিষয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তথাপি ইমাম নিয়োগ ও বাতিলের জন্য শরীয়াহ্ সম্মত নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন একান্ত জরুরি। এ জন্য ইমামগণকেও শিক্ষা জীবনেই মহানবীর আদর্শে ইমামতের অর্থ বুঝার চেষ্টা করতে হবে। যেন তাদের হাতেই নিয়োগের দায়িত্বও আসতে বাধ্য।
বর্তমানে মহৎ পেশাটিকে অবহেলার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো ইমামদের মাঝে ঐক্যের ঘাটতি। চাকরির উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়া। ইমামকে আল্লাহ্ পাক যে মর্যাদা দান করেছেন সে সম্পর্কে সচেতন না হওয়া। সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যজনক হলো ইমামদের মাঝে অনেকে পবিত্র কুরআন শরীফকে জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম বানিয়ে ফেলেন। যা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী।
ইমামতি ধর্মের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি পদ। তাই ইমাম সাহেবকে ইমামতির যোগ্য হওয়ার জন্য ধর্মের মৌলিক নীতিমালার পাশাপাশি আরো কিছু মহৎ গুণের অধিকারী হওয়া উচিত। যেমন- সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব চরিত্রবান, নিরহংকার, আমানতদার ও মুখলেছ হওয়া ইত্যাদি।
যেহেতু ইমাম সাহেবকে মুসল্লীগণ আদর্শ মানুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। তাই ইমাম সাহেবের উক্ত আনুষঙ্গিক গুণগুলো থাকলে তার কথার ও আদেশ-উপদেশের প্রভাব সমাজে সহজে পড়বে। উক্ত আনুষঙ্গিক গুণগুলো না থাকলে কোনো ব্যক্তি ইমামতির হকদার হলেও সেই ইমাম সাধারণত সফল ইমাম বলে বিবেচিত হন না।
নিম্নে বর্ণিত বিষয়াবলির প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিলে আশা করি ইমাম সমাজ দ্বীনের দিক থেকে লাভবান হওয়ার সাথে সাথে তাঁদের কথা-কাজও সমাজে অধিক হারে গৃহীত হবে। ফলে তাঁরা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করবেন ইনশাআল্লাহ্। যেমন :-
(ক) আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে সদা-সর্বদা সজাগ থাকা। নিজের শত অভাব-অনটন থাকলেও তা সকলের কাছে কোনোভাবে প্রকাশ না করা। কারণ এর ফলে ইমাম সাহেবের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা মানুষের কাছে ছোট হয়ে যায়। তার আদেশ-উপদেশ ও মুসল্লিদের কাছে হালকা হয়ে যায়। যার ফলে লোকজন তাকে মর্যাদা দেয়া তো দূরে থাক বরং তাকে দেখলেই উপহাসের ছলে কথা বলে।
(খ) কুরআন মাজিদকে কখনো জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম বানানো যাবে না। কেবল প্রয়োজনে বৈধ ঝাড়ফুঁক করা। কিন্তু এটাকে কখনো নিজের পেশা বা স্বভাবে পরিণত করা যাবে না। কারণ একাজ সাধারণত বৈধতা দিয়ে শুরু হলেও পরে তা হারামে পরিণত হয়। যেমন তাবিজ ব্যবসা।
(গ) মহল্লা বা গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ধনী ও দরিদ্র্যের মাঝে কোনো পার্থক্য না করা।
(ঘ) সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্বন্ধে শরীয়তের বিধান স্পষ্ট করে বলে দেয়া।
(ঙ) মসজিদ পরিচালনা কমিটি অযৌক্তিক কারণে বা টুনকো অজুহাতে কোনো ইমাম সাহেবকে পদচ্যুত কিংবা অপদস্থ করেন তখন অন্য একজন ইমাম অনায়াসে তার স্থলাভিষিক্ত হয়। যা পুরো ইমাম সমাজের জন্য লজ্জার বিষয়। এ ব্যাপারে ইমাম সাহেবদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকদের পক্ষ থেকে পূর্বের ইমামের সাথে কৃত বিরূপ আচরণের পুনঃবৃত্তি না ঘটার প্রতিশ্রুতি নিয়েই নতুন ইমামের ইমামতির সেবা প্রদান করা উচিত।
(চ) ইমাম সাহেবদের উচিত হবে ইমামতিকে সেবার মানসে গ্রহন করা। এটিকে কখনো জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম মনে না করা। তাই আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ইমাম সাহেবরা বিকল্প হালাল উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যেমন হস্তশিল্প, ক্ষুদ্রকুটির শিল্প, পোল্ট্রিফার্ম ও মৎস্যচাষ ইত্যাদি।
এসব বিষয়ের সাথে সাথে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটিরও উচিত হবে অল্প বেতনে তুলনামূলকভাবে অযোগ্য ব্যক্তিদের ইমামতিতে নিয়োগ দেয়ার প্রবণতা পরিহার করা।
মানবসমাজের কোনো ব্যক্তি ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। ইমাম সমাজও কোনোভাবে তার ব্যতিক্রম হতে পারেন না। ইমাম সাহেবদেরও ভুলক্রুটি হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে কখনো ইমামদের অশ্রদ্ধা কিংবা হেন করা যাবে না। তাঁদের সর্বদা সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে।
মহানবী (সাঃ) মানবতা, নৈতিকতা ও আত্মার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি অসভ্য, বর্বর ও মুর্খ জাতিকে আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছেন। দেশের ইমাম ও আলেম সমাজ মহানবীর (সাঃ) এর পবিত্র শিক্ষার ধারাবাহিকতায় মানুষ কে দ্বীনি শিক্ষা দানের মাধ্যমে পাপাচারমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
মাদরাসাসমূহে ইমাম ও ইমামতের সঠিক অর্থ ও নবী জীবনের আদর্শে তাদের সেই কর্তব্য যোগ্যতার সাথে শিক্ষা দেয়া হলে পরিস্থিতি কিছুতেই এমন না হয়ে আরও উন্নততর হতো। নৈতিক অবক্ষয় ও বেপরোয়া জীবনাচারের পুঁতিগন্ধময় সমাজে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের যতটুকু পরিদৃষ্ট, তা ইমাম সমাজেরই সফল অবদান। অতএব জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অবশ্যই শ্রদ্ধা, সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। অবজ্ঞা করার কোনো অবকাশ নেই। আল্লাহ্ আমাদের সকলের তা বুঝার তাওফীক দান
৬০৯১
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
ইমাম শব্দটি আরবী, তার বাংলা অর্থ হচ্ছে নেতা, প্রধান, নামাজের......