চাঁদ নেমেছে আজ আমার ঘরে
আল্লাহর রাসূল সা.এর ঘরে কয়েকদিন ধরে খাবার নেই। ক্ষুধা লেগেছে প্রচন্ড তাঁর। খাবারের সন্ধানে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। এদিকে আবু বকর রা. ও উমর রা.এর ঘরেও চলছে অভাব-অনটন। তারাও ক্ষুধার জ্বালায় নিজ নিজ ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছেন। পানাহারের সন্ধানে। সবার অভিন্ন প্রত্যাশা, পানাহার করার জন্য যদি কিছু পেয়ে যাই।
.
আল্লাহর রাসূল সা. তাঁর দুই সাথীকে দেখে জিজ্ঞাসা করেন,
-সাথীগণ! এ-সময় ঘরের বাইরে তোমরা, কী ব্যাপার?!
দু’জনই এক সুরে বললেন,
(الجوع يا رسول الله)
- “আল্লাহর রাসূল সা.! ক্ষুধার জ্বালায় বেরিয়েছি।” পেট খালি। খাবারের সন্ধান করছি।
.
এদিকে আল্লাহর রাসূল সা.ও তাদের সঙ্গে সহমত পোষন করে ইরশাদ করেন,
(وأنا والذي نفسي بيده)
-“সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমিও একই কারণে ঘর থেকে বের হয়েছি যে-কারণে তোমরা বের হয়েছো।”
নবী করিম সা. তাঁর সাথীদের বললেন:
(قوموا)
-“চলো তাহলে, উঠো!”
সাথীদ্বয় রাসূলুরাহ সা.এর সঙ্গে উঠে দাঁড়ান। রওয়ানা হন আল্লাহর রাসূল সা.এর সাথে। তাঁর ঘনিষ্ঠ জনৈক আনসারির ঘরের দিকে।
.
সম্মানিত পাঠক! তখনকার যুগে বাগানের ভিতরেই ঘর তৈরি করা হত। কোনো কোনো বাগানে তো পানির কূপও থাকত ভিতরে। আল্লাহ তা‘আলার মর্জি দেখুন, আল্লাহর রাসূল সা. যখন সেই সাহাবির ঘরে তাশরিফ নিয়ে গেলেন তখন তিনি ঘরে ছিলেন না। তার স্ত্রী যখন আল্লাহর রাসূল সা., আবু বকর রা. ও উমর রা.কে ঘরের দরজায় দেখেন, যারপরনাই খুশি হলেন। বললেন:
(مرحبا وأهلا)
-“স্বাগতম। আপনাদের আগমন শুভ হোক।”
.
আল্লাহর রাসূল সা. তার স্বামীর নাম ধরে জিজ্ঞাসা করেন:
(أين فلان؟)
-“অমুক কোথায়?”
জবাব দিলেন,
-সে তো পানি আনতে গেছে। ব্যাস, এক্ষণই এসে পড়বে।
কথাবার্তা চলছিল। ইতিমধ্যে ঐ সাহাবি পানি নিয়ে ঘরে ফিরে আসেন।
এসে দেখলেন, আল্লাহর রাসূল সা. এবং তাঁর দুই সাথী তার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে। তিনি তো খুশিতে আত্মহারা। আল্লাহু আকবর! এরচেয়ে বড় আনন্দ, এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য কী হতে পারে! বিশ্বনবী সা. তার ঘরে তাশরিফ এনেছেন। অকপটে বলে উঠলেন:
(الحمد لله)
- “হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা তোমার জন্য।”
(ما أحد اليوم أكرم أضيافا مني)
-“আজ আমার চাইতে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। আমার ঘরে সেসব অতি সম্মানিত অতিথি এসেছেন যাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আর কেউ নেই এই জগতে।”
.
দ্রুত অতিথিদেরকে ঘরে বসালেন। ঘরের সাথে লাগানো খেজুরের বাগান ছিল। একটি খেজুর গাছে চড়ে যান। দ্রুততার সঙ্গে একটি বড় থোকা কেটে আনেন। সেই থোকায় সর্বপ্রকার খেজুর ছিল। কিছু কাঁচা, কিছু পাকা। আবার কিছু আধাপাকা আর আধাকাঁচা। বলতে গেলে (بسر وتمر ورطب) তিনপ্রকারের খেজুরই ছিল সেই থোকায়।
অত্যন্ত আদব ও সম্মানের সাথে অতিথিদের সামনে থোকাটা রাখলেন। আরজ করছেন,
- হে আল্লাহর রাসূল! গ্রহণ করুন।
আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেন,
-পুরো থোকা নেয়ার কী দরকার ছিল?!
সাহাবিটি আরজ করেন:
-আমার ইচ্ছা, কাঁচা, আধাপাকা ও একদম পাকা খেজুরের মধ্যে যেটাই আপনার পসন্দ, আপনি যেন খেতে পারেন।
.
তিনি তো আজ বেজায় খুশি। সীমাহীন আনন্দিত। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল সা.এর আতিথেয়তার সৌভাগ্য অর্জন করছেন। আজ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন তিনি। আরে! তিনি (সা.) তো চাঁদের চেয়েও সুন্দর, স্নিগ্ধ।
অতিথিগণ খেজুর খাওয়ায় ব্যস্ত। আর তিনি চুরি নিয়ে অনেকটা দৌঁড়ে গেলেন ছাগলের পালের দিকে। আল্লাহর রাসূল সা. তাঁর এ প্রিয় মেজবান সাথীকে চুরি হাতে যেতে দেখেছেন। এবার আপনি আপনার প্রিয় রাসূল সা.এর উন্নত চরিত্র লক্ষ করুন। তিনি (সা.) বললেন:
(إياك والحلوب)
-“সাথী! দুগ্ধবতী ছাগল কখনো যবেহ করো না।”
.
সাহাবিটি তাড়াতাড়ি ছাগল একটা ধরে যবেহ করেন। গোস্ত তৈরি হয়ে গেছে। তার স্ত্রীও আনন্দিত চিত্তে গোস্ত রান্না করছেন। খাবার প্রস্তুত। আল্লাহর রাসূল সা. এবং তাঁর দুইসঙ্গী আবু বকর ও উমর রা. খেজুর খাচ্ছেন। ঠান্ডা পানি পান করছেন। অত:পর ছাগলের গোস্ত খেলেন।
সুপ্রিয় পাঠক! আল্লাহর রাসূল সা. সেই সাহাবির জন্য দুআ করেছেন। এটা তাঁর মহৎ চরিত্র যে, যখনই তিনি কারো নিকট খাবার গ্রহণ করতেন তার জন্য কল্যাণ ও বরকতের দুআ করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, এধরনের উপলক্ষে তিনি সা. বলতেন:
(أكل طعامكم الأبرار وصلت عليكم الملائكة)
-“নেককার লোক তোমার খাবার গ্রহণ করুক এবং ফেরেশ্তারা দুআ করুক তোমার জন্য।”
.
বন্ধুরা, এবার একটু ভেবে দেখুন, আল্লাহর রাসূল সা. তাঁর সাথীদের কীভাবে তরবিয়ত করতেন। ইরশাদ করেন,
-সাথীগণ!
(والذي نفسي بيده! لتسألن عن هذا النعيم يوم القيامة)
-“সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, এসব নেয়ামত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন তোমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
.
তিনি সা. আরো ইরশাদ করেন:
(أخرجكم من بيوتكم الجوع, ثم لم ترجعوا حتى أصابكم هذا النعيم)
-“পেটের ক্ষুধা তোমাদেরকে ঘর থেকে বের হবার জন্য বাধ্য করেছিল। আর যখন তোমরা ফিরে যাচ্ছো এমতাবস্থায় এসব নেয়ামত তোমাদের নসিব হয়ে গেল।”
.
প্রিয় পাঠক! রাসূলুল্লাহ সা.এর চরিত্র কী চমৎকার ছিল! তিনি কোনো সাহাবির ঘরে যাওয়াটা দোষ মনে করতেন না। তিনি সা. ইচ্ছা করলে কোনো সাহাবিকে নির্দেশ দিতে পারতেন। এবং ওই সাহাবিও খানাপিনার সব জিনিস তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে আসতেন। তবে তাঁর চরিত্র ছিল, তাঁর বিনয় ছিল এই যে, তিনি নিজে হেটে সাহাবির ঘরে যেতেন। সেখানে তাশরিফ রাখতেন। তার আতিথেয়তা কবুল করতেন এবং খাবার গ্রহণ করার পর যেখানে তিনি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেন একইসাথে সেখানে মেজবানদের জন্য দুআও করতেন। সেখানে অন্তরে পরকালে জবাবদিহিতার অনুভূতিও জাগ্রত করতেন।
৪৭৭
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা) । নাম তাঁর খাদীজা। কুনিয়াত ‘উম্মু......
বিশ্বস্ত সহধর্মিণীর মধুময় স্মৃতি আল্লাহর রাসূল সা. পঁচিশ বছর বয়সে......
দাউদ (অাঃ) এর জমানায় এক সুন্দরী রমনীর কাহিনী হযরত দাউদ......
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না পাকিস্তানের একজন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসক......
শিশুকালীন যৌন হয়রানি রোধে মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ১.......
দক্ষতার গল্প কোনো ব্যক্তিত্বের উন্নত চরিত্র সম্পর্কে জানতে চান? তা......
শূন্যহাতেও তিনি নির্ভিক যে ঘটনাটি আপনারা পড়তে যাচেছন তার বর্ণনাকারী......
অাল্লাহর ঘরের চাবি বায়তুল্লাহ শরিফের চাবি রাসূলুল্লাহ সা.এর পূর্বপুরুষ সর্দার......
আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম যেদিন অফিস করে স্বাগত বক্তব্য......
শিক্ষণীয় গল্প এক গরীব লোক এক থোকা আঙ্গুর নিয়ে, হযরত......