কিয়ামত দিবসের বিভীষিকা
কিয়ামতের দিনের ব্যাপার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিনের বিভীষিকা-আতঙ্ক বড় কঠিন। এ দিবসে বান্দাদের আতঙ্ক ও ভীতি সঞ্চারিত হবে। জালেমদের চক্ষু উচ্চে স্থির হবে। সেদিনকে আল্লাহ মুটমিনদের প্রতি আছর থেকে যোহরের সময় পরিমাণ করে দিবেন। আর কাফেরদের প্রতি ৫০০ বছরের সমান করে দিবেন। সেদিনের কিছু কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়া হলোঃ
১। যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তেলিত হবে ও চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়া হবে, সেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে। (সূরা আল-হা-ক্বক্বাহ, আয়াতঃ ১৩-১৬)
২। যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে, যখন পর্বতমালা প্রসারিত হবে, যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে, যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে, যখন সমুদ্রগুলিকে উত্তাল করে তোলা হবে। (সূরা আত-তাকবীর, আয়াতঃ ১-৬)
৩। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, যখন নক্ষত্ররাজি ঝরে পড়বে, যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে এবং যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে। (সূরা ইনফিতার, আয়াতঃ ১-৪)
৪। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও তার পালনকর্তার আদেশ পালন করবে এবং আকাশ এরই উপযুক্ত এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে এবং তার পালনকর্তার আদেশ পালন করবে এবং পৃথিবী এরই উপযুক্ত। (সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াতঃ ১-৫)
৫। যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। তার সংঘটনের কোনই অস্বীকারকারী থাকবে না। তা কাউকে ভূলুণ্ঠিত করবে এবং কাউকে করবে সমুন্নত। যখন যমীন প্রকম্পিত হবে প্রবল প্রকম্পনে। আর পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। (সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াতঃ ১-৬)
৬। ইবনে উমার [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল [ﷺ] বলেন- “যে কিয়ামতের দিনকে স্বচক্ষে দেখতে চায় সে যেন সূরা তাকবীর, সূরা ইনফিতার ও সূরা ইনশিক্বাক পড়ে। (তিরমিযি, হাদিস নং-৩৩৩৩, মাদানী প্রকাশনী)
**কিয়ামতের দিন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের পরিবর্তন
১। যেদিন এ যমীন ভিন্ন যমীনে রূপান্তরিত হবে এবং আসমানসমূহও। আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাযির হবে। (সূরা ইবরাহীম, আয়াতঃ ৪৮)
২। সে দিন আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে নেব, যেভাবে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য। আমি তা পালন করবই। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৪)
যেদিন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল পরিবর্তন করা হবে সেদিন মানুষ কোথায় থাকবেঃ
আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [ﷺ]-কে আল্লাহর বানী "যে দিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হয়ে যাবে এবং আকাশ মণ্ডলীও" (সূরা ইবরাহীম-১৪, আয়াতঃ ৪৮) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তবে সে দিন লোকেরা কোথায় থাকবে? তিনি বললেন, পুলসিরাতের উপর (জাহান্নামের উপর নির্মিত সেতু)। (মুসলিম, হাদিস নং-৬৯৪৯, হাদীস একাডেমী)
**হাশরের ময়দানের ভীষণ উত্তাপ ও আতঙ্ক
আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মখলুককে পুনরুত্থান করবেন। অতঃপর ফয়সালার জন্য কিয়ামতের ময়দানে জুতা-স্যান্ডেল ছাড়া, খালি শরীরে, খাৎনাবিহীন অবস্থায় একই প্লাটফর্মে একত্রিত করবেন। সেদিন সূর্য সন্নিকটে হবে এবং সত্তর হাত গভীর ঘামের (সাগর) হবে। মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে।
১। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [ﷺ]-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। ফলে তা মানুষের থেকে 'মীল; পরিমাণ দুরুত্বে চলে আসবে। বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনু আমির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি জানিনা, مِيل বলে কি বুঝানো হয়েছে, ভূমির দুরত্ব, না চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা। মানুষ তাদের আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে (ডুবন্ত) থাকবে। কেউ তার দুই গোড়ালি পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ তার দুই হাঁটু পর্যন্ত (ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে), কেউ কোমরের দুই পাশ পর্যন্ত (ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে), আর কারো মুখ পর্যন্ত লাগাম পরিয়ে দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রাসুল [ﷺ] তার মুখের প্রতি ইশারা করলেন। (মুসলিম, হাদিস নং-৭০৯৮, হাদীস একাডেমী)
২। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে নাবী বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন পৃথিবী আপন মুঠোয় ধারণ করবেন এবং আসমানকে তাঁর ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেনঃ আমিই একমাত্র অধিপতি। দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়? (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৭৩৮২, তাওহীদ পাবলিকেশন)
**হাশরের ময়দানে যাদেরকে আল্লাহ ছায়া দান করবেন
১। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নাবী [ﷺ] বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১। ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২। সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে, ৩। সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে, ৪। সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫। সে ব্যক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬। সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না, ৭। সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকির করে, ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৬০, তাওহীদ পাবলিকেশন)
**ফয়সালার জন্য আল্লাহ তা’আলার আগমন
আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন ফয়সালার জন্য আসবেন তখন তাঁর নূর দ্বারা পৃথিবী আলোকিত হবে। আর সমস্ত সৃষ্টকুল তাঁর ভয়, বড়ত্ব ও মহিমায় বেহুঁশ হয়ে পড়বে।
১। কখনো নয়, যখন যমীনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে পরিপূর্ণভাবে। আর তোমার রব ও মালাইকাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। (সূরা আল-ফাজর, আয়াতঃ ২১-২২)
২। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলিম লোকটি বলল, তাঁর কসম, যিনি মুহাম্মাদ [ﷺ]-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফাযীলাত প্রদান করেছেন। আর ইয়াহূদী লোকটি বলল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফাযীলাত দান করেছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহূদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহূদী ব্যক্তিটি নাবী [ﷺ]-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটেছিল, তা তাঁকে অবহিত করল। নাবী [ﷺ] বললেন, তোমরা আমাকে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুঁশ আসবে, তখন (দেখতে পাব) মূসা (আলাইহিস সালাম) আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুঁশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা যাঁদেরকে বেহুঁশ হওয়া হতে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৪১১, তাওহীদ পাবলিকেশন)
আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম নর-নারীকে ক্বিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থা সম্পর্কে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ও এ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন, আমিন।
৭১৫
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
চিন্তা করুন আপনি যদি অধিকাংশ মানুষের অবস্থা নিয়ে একটু চিন্তা......
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) চারিত্রিক গুণাবলী ১. কেউ কথা বলতে বসলে সে ব্যক্তি......
ইবাদতের চেয়ে ইলমের মর্যাদা বেশি ইবাদতের চেয়ে ইলমের গুরুত্ব বেশি।......
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা মুহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী সকল সৃষ্টির......
মাদকাসক্তির কুফল : ০১. মাদক সেবনের দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর......
لا ید خل الجنة جسد غذی بالحرام . অর্থ :......
طلب العلم فریضة علی کل مسلم. অর্থ : (দ্বীনি) ইলম......
কিয়ামত দিবসের বিভীষিকা কিয়ামতের দিনের ব্যাপার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিনের......
বাংলা ভাষার প্রিয়জন -মুহাম্মদ সোলাইমান ফেব্রুয়ারী একুশ তারিখ বাংলা ভাষার......
শয়তানের অনুসরণ করো না আল্লাহ তা'আলা বলেন- হে ঈমানদারগণ, তোমরা......