সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ইত্তেবা
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ০১/০২/২০১৮

ইত্তেবার অর্থ:

আভিধানিক অর্থে ইত্তেবা অর্থ হল; কারো পদচিহ্ন দেখে দেখে চলা। এ শব্দটি অনুসরণ, অনুকরণ, মান্যকরণ, আদর্শ জ্ঞান করণ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

শরিয়তের পরিভাষায় ইত্তেবা:

দ্বীনের সকল বিষয় তথা ‘আক্বিদা-বিশ্বাস, কথা, কাজ, গ্রহণ- বর্জন সহ সর্বক্ষেত্রে রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণ করাকে ইত্তেবা বলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজটি যেভাবে করেছেন সেটি ঠিক সেভাবে করাই হল রাসূলের ইত্তেবা বা অনুসরণ। রাসূলের ইত্তেবা ছাড়া কোন ইবাদত শুদ্ধ হয় না। এ কারণেই ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূলের ইত্তেবার কোন বিকল্প নাইআর রাসূলের ইত্তেবা সম্পর্কে এবং আল্লাহর রাসূল কোন কাজ কিভাবে করেছেন সে সম্পর্কে জানতে হলে হাদিস বা সূন্নাহ অধ্যয়ন ছাড়া আর কোন পথ নাই। কেবল হাদিস বা সূন্নাহের অধ্যয়নের মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা সম্পর্কে জানা যাবে।

আল কুরআনে ইত্তেবার গুরুত্ব:

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। কারণ, আল্লাহর রাসূল হল আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি দূত। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। রাসূলের মাধ্যমেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ বাস্তবায়িত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়তাই আল্লাহ মানুষকে তার প্রেরিত রাসূলের অনুকরণ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ [الانعام: ١٥٣]

আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। [1]

ইমাম কুরতবী রহ. বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যাতে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূলের ইত্তেবা করার আদেশ দিয়েছেন এবং তার পথের ইত্তেবা ছাড়া অন্য সব পথ পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর আয়াতে সীরাতে মুস্তাকীম-এর অর্থ হল, আল্লাহর পথ যে পথের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে আহ্বান করেছেন। আর তা হল রাসূলের ইত্তেবা ও তার সুন্নাতের অনুসরণ। [2]

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ [النور : ٦٣]

অতএব যারা তার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তারা যেন তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক্আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সুরা নূর – ৬৩]

ইমামুল লুগাহ আল্লামা রাগেব আল ইসফাহানী রহ. বলেন, মুখালাফা অর্থ হল, কথা, কাজ ও কর্মে কোন ভাইয়ের বিরোধিতা করা এবং সে যে পথ চলা আরম্ভ করে তার বিপরীত পথে চলতে শুরু করা।[3]

আল্লামা ইবনুল আরাবী রহ. যুবাইর ইবনে বুকার হতে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মালেক ইবনে আনাস রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ আমি কোথা থেকে ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেন, জুল হুলাইফা হতে- যেখান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধেছেন। তখন লোকটি বলল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদ থেকে এহরাম বাঁধতে চাই। তিনি বললেন, না, তুমি তা করো না। লোকটি বলল, আমি মসজিদের পাশে রাসূলের কবরের নিকট থেকে এহরাম বাঁধব। তিনি বললেন, না তুমি তা করো না, আমি ভয় করছি তুমি কোন ফিতনায় আক্রান্ত হবে। লোকটি বলল, কিসের ফিতনা। তখন তিনি বললেন, এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কি হতে পারে যে, তুমি মনে করছ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক ফযিলত লাভ করবে, যা তিনি লাভ করতে পারেননি। আল্লাহ বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ [النور : ٦٣]

অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [4]

ইমাম মালেক রহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে ব্যক্তি এ উম্মতের দীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, যা ইতিপূর্বে দীনের মধ্যে ছিল না, তাহলে সে যেন এ কথা দাবী করল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের বিষয়ে খিয়ানত করেছেন। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائدة: ٣]

আজ তোমাদের জন্য দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”।[5] আয়াতে আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পূর্বেই দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা তার দীনকে পূর্ণতা দান করার পর দীনের মধ্যে কোন কিছু বাড়ানোর কোন অবকাশ নাই। যদি কেউ দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু বাড়ান বা কমান তার অর্থ হল আল্লাহ দীনকে পূর্ণতা দান করেননি দীনকে অসম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছেন এবং অবশিষ্ট কাজের জন্য কোন মাখলুককে দায়িত্ব বা অধিকার দিয়েছেন।[6]

ইত্তেবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গুরুত্ব:

কোন ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য বা ইবাদতটি ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য শর্ত হল, তার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইত্তেবা পাওয়া যেতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতটি যেভাবে করেছেন সেভাবে আদায় করতে হবে এবং তার মধ্যে কোন প্রকার বিকৃতি বা কমবেশ করা চলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি প্রসিদ্ধ হাদিসে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন। হাদিস দ্বয়ে তিনি ইবাদত যেভাবে করেছেন সেভাবে করার নির্দেশ দেন।

প্রথম হাদিস:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

صلوا كما رأيتموني أصلي

এটি পূর্ণ হাদিসের একটি অংশ মাত্র। পুরো হাদিসটি ইমাম বুখারি রহ. স্বীয় কিতাব সহীহ আল বুখারিতে আবু কালাবাহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মালেক বিন হুয়াইরাস রা. হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

(أتينا رسول اللهصلى الله عليه وسلمونحن شببة متقاربون فأقمنا عنده عشرين يوماً وليلة وكان رسول اللهصلى الله عليه وسلمرحيماً رفيقاً فلما ظن أنا قد اشتهينا أهلنا أو قد اشتقنا سألنا عمن تركنا بعدنا فأخبرناه. قال: ارجعوا إلى أهليكم فأقيموا فيهم وعلموهم ومروهم وذكر أشياء أحفظها أو لا أحفظها وصلوا كما رأيتموني أصلي فإذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم أحدكم وليؤمكم أكبركم).

আমরা একে অপরের কাছাকাছি ও সম পর্যায়ের কতক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে বিশ দিন অবস্থান করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তারপর যখন তিনি অনুভব করলেন আমরা আমাদের পরিবারের নিকট যেতে চাই তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের বাড়ীতে কাদের রেখে আসছি? আমরা তাদের বিষয়গুলো বললে, তিনি আমাদের বলেন, তোমরা তোমাদের বাড়িতে ফিরে যাও, তাদের মধ্যে তোমরা অবস্থান কর, তাদের তোমরা দীন শেখাও, ভালো কাজের আদেশ দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় আদেশ করেন তার সবগুলো আমার স্মরণ নাই। আর তোমরা সালাত আদায় কর, যেভাবে তুমি আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ। যখন সালাতের সময় হয়, তোমাদের মধ্য হতে একজন আযান দেবে, আর তোমাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি ইমামতি করবে”।[7]

বিশুদ্ধ হাদিসটি উপরে উল্লেখিত মূলনীতি-ইবাদতের ক্ষেত্রে আসল হল রাসূলের ইত্তেবা- কে আরও স্পষ্ট করেন। অর্থাৎ, সালাত আদায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুরোপুরি ইত্তেবা করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সালাত আদায় করেছেন, সেভাবে সালাত আদায় করতে হবে। তার মধ্যে কোন প্রকার কমবেশ করা যাবে না।

দ্বিতীয় হাদিস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-তিনি বলেন, (خذوا عني مناسككم) “তোমরা আমার থেকে হজের আহকামগুলো শিখে নাও”। মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাযা।

হজ বিষয়ে উল্লেখিত হাদিসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও মৌলিক-যেমনি ভাবে সালাত বিষয়ে উপরের হাদিসটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক। উল্লেখিত দুটি হাদিসই প্রমাণ করে ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূন্নাত ও পদ্ধতিই হল মূল বিবেচ্য ও অনুকরণীয়। তিনি যে ইবাদত যেভাবে করেছেন ঠিক সে ইবাদত সেভাবেই করতে হবে। তাতে কোন প্রকার কমবেশ করার কোন সুযোগ নাই।

ছয়টি বিষয়ে ইত্তেবা জরুরি:

মোট কথা, যে কোন ইবাদতে রাসূলের ইত্তেবা জরুরী। মনগড়া কোন ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য নয়। আমলের ক্ষেত্রে ইত্তেবা সহীহ হওয়া ও আমলটি শরীয়ত অনুযায়ী হওয়ার জন্য ছয়টি বিষয়ে এক ও অভিন্ন হতে হবে।

এক- ইবাদতের কারণটি শরিয়ত অনুযায়ী ও অনুমোদিত হতে হবে। সুতরাং, যদি কোন মানুষ এমন একটি কারণ দেখিয়ে ইবাদত করে যে কারণটি শরিয়ত অনুমোদন করেনি তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমন, কিছু মানুষ রজব মাসের সাতাশ তারিখ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করে থাকে। তাদের যুক্তি হল, এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এ রাতেই ফরয করা হয়েছে। সুতরাং, এ রাতে সালাত আদায় করা সাওয়াবের কাজ ও পূন্যময়। কিন্তু এখানে যে কারণটি উল্লেখ করা হয়েছে, তা শরিয়তের দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। কারণ, এ কারণটি দেখিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বা তার কোন সাহাবী এ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করেনি। তাই এ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করা বিদআত। সুতরাং, ইবাদতের কারণটি শরীয়তের মুয়াফেক হওয়া খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। যদি কারণটি শরিয়ত অনুমোদিত কিনা তা জানা যায়, তবে অনেক বিদআত থেকে বাঁচা যাবে। কারণ, আমরা এ ধরনের অনেক ইবাদতকে শরীয়ত মনে করি। কিন্তু বাস্তবে তা শরিয়ত নয় বরং বিদআত।

দুই: ইবাদতের ধরনটি শরিয়ত অনুমোদিত হতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি কোন একটি ইবাদত আল্লাহর জন্য করে থাকে কিন্তু তার ধরনটি শরিয়ত অনুমোদন করেনি। তাহলে সে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন, এক ব্যক্তি ঘোড়া কুরবানি করল, এ লোকের কুরবানি সহীহ হবে না। কারণ, লোকটি কুরবানির পশুর ধরনের মধ্যে শরিয়তের বিরোধিতা করছে। কারণ, শরিয়ত কুরবানি করার জন্য চতুষ্পদ জন্তু হতে কেবল গরু, ছাগল উটকেই নির্ধারিত করেছেন।

তিন- পরিমাণ:

পরিমাণ শরিয়ত অনুমোদিত হবে। যদি কোন মানুষ পরিমাণ বাড়ায় বা কমায় তাহলে তার ইবাদত শুদ্ধ হবে না। যেমন, যদি কোন মানুষ জোহরের সালাত চার রাকাতের জায়গায় পাঁচ রাকাত আদায় করে, তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের সালাত কখনো পাঁচ রাকাত আদায় করেননি।

চার- পদ্ধতি:

পদ্ধতি শরিয়ত অনুমোদিত হতে হবে। যেমন, যদি কোন ব্যক্তি ওজু করার সময় হাত দোয়ার পূর্বে পা দুয়ে ফেলে তাহলে সেও সূন্নাতের বিরোধিতা করল। তার ওজু ঠিক হবে না। কারণ, লোকটি ওজু করার পদ্ধতিতে ভুল করেছেন এবং শরিয়তের বিরোধিতা করেছে।

পাঁচ- সময়:

সময়টি শরিয়ত অনুযায়ী হতে হবে। যদি কোন ইবাদত শরিয়ত নির্ধারিত সময়ে না করে নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে করে তাহলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না এবং ইবাদত সঠিক হবে না। যেমন, কোন ব্যক্তি জিল হজ মাসের প্রথমে কুরবানি করে ফেলল বা ঈদের সালাতের পূর্বে কুরবানি করল, তাহলে তার কুরবানি সহীহ হবে না। বরং এটি গোস্ত খাওয়ার জন্য জবেহ করা হবে। অনুরূপ যদি কেউ রমযান মাসে কুরবানি করে তাহলে তার কুরবানি শুদ্ধ হবে না। সুতরাং, ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়টি শরিয়ত সম্মত হতে হবে।

ছয়-স্থান:

ইবাদতের স্থানটি শরিয়ত অনুমোদিত হবে। যদি স্থানটি শরিয়ত সম্মত না হয়, তবে ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হবে না। যেমন- শরিয়ত অনুযায়ী ইতিকাফ করার স্থান হল, মসজিদ। যদি কোন ব্যক্তি মসজিদের বাইরে ইতেকাফ করে তার ইতেকাফ করা শুদ্ধ হবে না। যদি কোন নারী বলে আমি স্বীয় ঘরে সালাতের স্থানে ইতেকাফ করব, তাহলে তার ইতেকাফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, ইতেকাফের স্থান হল, মসজিদ। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে গিয়ে দেখে সেখানে অনেক ভিড় তখন সে সেখান থেকে ফিরে মহল্লার মসজিদে তাওয়াফ করা আরম্ভ করল তার তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। কারণ তাওয়াফ করার স্থান হল, মসজিদ। আল্লাহ তা’আলা তার স্বীয় বন্ধু ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে বলেন,

﴿ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ [البقرة: ١٢٥]

তোমরা ইতেকাফ কারী, তাওয়াফকারী ও রুকু- সেজদাকারীদের জন্য আল্লাহর ঘরকে পবিত্র কর”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]

নবী আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইত্তেবা তথা অনুসরণ ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর উদ্ধৃতি বিদ্যমান। সবগুলো এ সংক্ষিপ্ত বইতে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। যেমন: আল্লাহ তা’আলা বলেন:

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ [الحشر: ٧]

রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”। [8]

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন:

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ [النساء: ٨٠]

যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি”। [9]

عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছে”।[10]

অপর একটি হাদিস আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ

তিনটি জিনিষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সাধ গ্রহণ করবে। এক- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে প্রিয় হওয়া। দুই- কোন মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। তিন- ঈমান আনার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়াতে এমন অপছন্দ করবে, যেমন আগুনে নিক্ষেপ করাকে অপছন্দ করে”। [11]

সুন্নাহ বা হাদিস যার মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা করা হয় তার গুরত্ব:

সুন্নাহ শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তাই সুন্নাহ। কুরআনে রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ বলতে সুন্নাহকেই বুঝানো হয়েছে। হাদিসের অপর নাম সুন্নাহ। হাদিস অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, খবর, প্রাচীন ও পুরাতনের বিপরীত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদিস বলে।

১. সুন্নাহ হল এক প্রকার ওয়াহী:

ওয়াহী দুই প্রকার: এক- ওয়াহী মাতলু দুই- ওয়াহী গাইরে মাতলু। ওয়াহী মাতলু হল, কুরআন মাজীদ। আর ওয়াহী গায়রে মাতলু হল, সুন্নাহ বা হাদিস। সূন্নাহ বা হাদিস ও আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রেরিত ওহী। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ [النجم: ٣، ٤]

আর সে মনগড়া কথাও বলে না । তাতো ওয়াহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়”। [12]

হাসান বিন আত্বিয়া বলেন, জিবরীল (আঃ) যেরূপ কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট অবতীর্ণ হতেন তেমনি হাদিস নিয়েও অবতীর্ণ হতেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কুরআনের ন্যায় হাদিসও শিক্ষা দিতেন।

২. সুন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা:

সূন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা। সূন্নাহ বাদ দিয়ে কুরআনের উপর আমল করা বা কুরান বুঝা সম্ভব নয়। যেমন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ইত্যাদি আদেশ কুরআনে দেয়া হয়েছে কিন্তু সালাত কীভাবে আদায় করতে হবে এবং যাকাত কি পরিমাণ আদায় করতে হবে, কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে না। তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। এ সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হাদিসেই করা হয়েছে।

﴿ بِٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِۗ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ [النحل: ٤٤]

“(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। [13]

﴿ وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِي ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٦٤ [النحل: ٦٤]

আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে এবং (এটি), হেদায়েত ও রহমত সেই কওমের জন্য যারা ঈমান আনে”। [14]

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ [الحشر: ٧]

রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”। [15]

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ [ابراهيم: ٤]

আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের নিকট বর্ণনা দেয়, সুতরাং, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [16]

আল্লাহ প্রত্যেক রাসূলের উপর তার নিজ ভাষায় কিতাব নাযিল করেছেন যাতে রাসূলগণ ব্যাখ্যা করে জনগণকে ভালভাবে বুঝাতে পারেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন যা হাদিসের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সংরক্ষণ করেছেন। যদিও হাদিসের মধ্যে রাসূলের নামে অনেক কথাই বিদ্যমান। কিন্তু সম্মানিত মুহাদ্দিস ইমামগণ কোনটি রাসূলের কথা আর কোনটি রাসূলের কথা নয়, তা পৃথক করেছেন। জঈফ ও জাল বা মিথ্যা হাদিস অবশ্যই বর্জন করতে হবে যা রাসূলের নামে মিথ্যুকরা চালিয়ে দিয়েছে। আমরা কেবল সহীহ ও হাসান হাদিসই গ্রহণ করব। যদি কখনো কোন জঈফ হাদিস উল্লেখ করতে হয়, তবে স্পষ্ট করে দিতে হবে।

وَعَن مَالك بن أنس مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ . رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأ

মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিস”। [17]

৩. সুন্নাহ বা হাদিস হল হিকমাহ (প্রজ্ঞা)

আল্লাহ তা’আলা তা’আলা কুরআনে সূন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ ١١٣ [النساء: ١١٣]

এবং আল্লাহ তোমার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ (হাদিস) অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না, তিনি তাই তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন”। [18]

আয়াতে আল্লাহ তা’আলা যেমনিভাবে কুরআন নাযিল করার কথা বলেন, অনুরূপভাবে হিকমাহ অর্থাৎ সূন্নাহ নাযিল করার কথাও বলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সূন্নাহও আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত অহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওহী অনুরূপভাবে সূন্নাহও আল্লাহর ওহী। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ ١٦٤ [ال عمران: ١٦٤]

নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শোনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ (হাদিস) শিক্ষা দিচ্ছে”। [19]

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ٣٤ [الاحزاب: ٣٤]

আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ (হাদিস) এর কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মèদর্শী ও সর্ব বিষয়ে অবহিত”। [20]

অনেক বিদ্বানরা বলেছেন, হিকমাহ হল সুন্নাহ বা হাদিস। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হত, তা ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ। এ জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

أَلَا إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ

সাবধান! আমাকে কিতাব (কুরআন) ও তার সঙ্গে অনুরূপ কিতাব (হাদিস) দেওয়া হয়েছে।[21]

৪. সুন্নাহর বাইরে যে আমল করা হয়, তা পরিত্যাজ্য।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد»

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”।[22]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ ثَلَاثَة رَهْط إِلَى بيُوت أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أخبروا كَأَنَّهُمْ تقالوها فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أحدهم أما أَنا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْل أبدا وَقَالَ آخر أَنا أَصوم الدَّهْر وَلَا أفطر وَقَالَ آخر أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ: «أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مني»

আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নিকট তার ইবাদতের অবস্থা জানার জন্য আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইবাদতের খবর শুনে তারা যেন তার ইবাদতকে কম মনে করলেন। তারা পরস্পর আলাপ করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর তুলনায় আমরা কী? আল্লাহ তা’আলা তার আগের-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন, আমি সারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয় জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের এই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে পড়লেন এবং বললেন, “তোমরা কি এ ধরনের কথাবার্তা বলেছিলে? খবরদার! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন ছেড়ে দিই। রাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমও যাই। নারীদেরকে বিয়েও করি। এটাই আমার পথ। তাই যে ব্যক্তি আমার পথ ছেড়ে দিয়েছে সে আমার ( উম্মতের মধ্যে) গণ্য হবে না”। [23]

সুতরাং ভাল কাজ বিশুদ্ধ নিয়তে করলেও কোনই লাভ হবে না যতক্ষণ না রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাত অনুযায়ী হয়। আর জেনে রাখা ভাল যে, সহীহ ও হাসান হাদিস ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত প্রমাণিত হয় না।

৫. সুন্নাহ ছাড়া আমল হল বিদআত, আর বিদআত হল ভ্রষ্টতা, আর ভ্রষ্টতা হল জাহান্নামের পথ।

إِنَّ أَحْسَنَ الحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَأَحْسَنَ الهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَشَرَّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, “সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ”।[24]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: অতঃপর অবশ্য অবশ্যই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার কিতাব। আর সর্বোচ্চ পথ হচ্ছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)”। [25]

وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ

জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই বিদআত। এরূপ সব বিদআত-ই-গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)। এরূপ সব গুমরাহী (পথভ্রষ্ট) হবে জাহান্নামের আগুনে অবস্থিতির কারণ। [26]

৬. সুন্নাহ হল নাজাতের অসীলা, মুক্তির পথ।

সুন্নাহর অনুসরণ করার মধ্যেই নাজাত ও মুক্তি। সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা ছাড়া নাজাত বা মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، حَدَّثَنَا هِلاَلُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى»

আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আমার সকল উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই ( জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল”। [27]

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ [النساء : ١٣]

এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য”। [28]

আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাকে মহা সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩ [النساء : ٦٩]

যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী![29]

﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢ [ال عمران: ١٣٢]

আল্লাহর ও রাসূলের হুকুম মান্য কর, যাতে তোমরা কৃপা প্রাপ্ত হতে পার”। [30]

﴿ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨ [الاعراف: ١٥٧]

যে আল্লাহ ও তার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তার (রাসূলের) অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার”। [31]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢ [النور : ٥٢]

যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার অবাধ্যতা পরিহার করে চলে তারাই কৃত কার্য”। [32]

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤ [النور : ٥٤]

বল, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। [33]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ [الاحزاب : ٧١]

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে-মহা সাফল্য। [34]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ [النساء : ١٣]

আর যে কেউই আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে, ল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর যে কেউ পিঠ ফিরিয়ে নিবে, তিনি তাকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন। [35]

৭. রাসূলের ফায়সালার সামনে মু’মিনের আর কোন এখতিয়ার বা স্বাধীনতা থাকে না। বরং শুনলাম ও মানলাম বলা।

﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ [النساء : ٦٥]

কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে”। [36]

﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١ [الانفال: ١]

তোমরা যদি মু’মিন হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর”। [37]

﴿ إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١ [النور : ٥١]

মু’মিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মু’মিনদের জওয়াব তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম”। [38]

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ ٢٠ [الانفال: ٢٠]

ওহে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং আদেশ শোনার পর তা অমান্য কর না”।[39]

﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ [الاحزاب : ٣٦]

আল্লাহ ও তার রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী উক্ত নির্দেশের ভিন্নতা করার কোন অধিকার রাখে না। যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে গুমরাহ হয় সুস্পষ্ট গুমরাহীতে”। [40]

৮. রাসূলের অনুসরণই আল্লাহর আনুগত্য:

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ [النساء : ٨٠]

যে রাসূলের হুকুম মানল, সে তো আল্লাহরই হুকুম মানল, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি তোমাকে তাদের প্রতি পাহারাদার করে পাঠাইনি”। [41]

রাসূল সা. বলেন,

مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ

যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল, সে আল্লাহরই অনুসরণ করল, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে তো আল্লাহর নাফরমানী করল”।[42]

৯. মু’মিন জীবনের আদর্শ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম):

একজন মুমিনের জন্য রাসূল সা. এর জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আল্লাহর রাসূলই হল একজন মুমীনের অনুকরনীয় আদর্শ।

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ [الاحزاب : ٢١]

তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [43]

﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ [القلم: ٤]

তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত”। [44]

১০. আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার মাধ্যম রাসূলের অনুসরণ:

আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে, রাসূলের ইত্তেবার কোন বিকল্প নাই। রাসূলের ইত্তেবার মাধ্যমেই আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ [ال عمران: ٣١]

বলে দাওযদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করবেন, বস্তুত, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [45]

১১. কুরআন ও সুন্নাহই সকল সমস্যার সমাধান:

একজন মুমীনের জন্য কুরআন ও সূন্নাহই হল সব সমস্যার সমাধানের মূল।

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ [النساء : ٥٩]

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গেরও ; তবে যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে ঈমান আন ; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা”।[46]

﴿ وَلَا يَأۡتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَأَحۡسَنَ تَفۡسِيرًا ٣٣ [الفرقان: ٣٣]

তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি”। [47]

﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٤٦ [الانفال: ٤٦]

আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ কর না, তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”। [48]

১২. সহীহ হাদিস যখন আহ্বান করবে, তখন সকলকে সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া জরুরী। সহীহ হাদিসের বিপরীতে কোন দূর্বল হাদিস বা যুক্তির পিছলে আমল করা যাবে না।

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا يُحۡيِيكُمۡۖ ٢٤ [الانفال: ٢٤]

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহ্বান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে”। [49]

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ، يَأْتِيهِ الْأَمْرُ مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ، أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ، فَيَقُولُ: لَا أَدْرِي، مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই, সে তার খাটের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর আমি যা আদেশ দিয়েছি অথবা যা থেকে নিষেধ করেছি, তা তার কাছে পৌছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করি”। [50]

﴿ لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ [النور : ٦٣]

রাসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের উপর পরীক্ষা নেমে আসবে কিংবা তাদের উপর নেমে আসবে ভয়াবহ শাস্তি”। [51]

সালাত ছেড়ে রাসূলের ডাকে সাড়া দান।

১৩. আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা ঈমানী কর্তব্য:

দুনিয়ার সব কিছু হইতে আল্লাহর রাসূলকে সর্বোচ্চ ভালো বাসতে হবে। সকল কিছুর উপর রাসূলের ভালোবাসাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে।

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে কেউ মু’মিন হতে পারবে না , যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তানাদি এবং সকল মানুষ হতে বেশী প্রিয় না হবো”।[52]

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ، بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ، مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ

আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি জিনিস পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সঠিক স্বাদ আস্বাদন করেছে। প্রথমত: তার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল জিনিস অপেক্ষা বেশী হবে। দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালবাসে। তৃতীয়ত: যে ব্যক্তি কুফরির অন্ধকার হতে বের হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর আবার কুফরির অন্ধকারে ফিরে যাওয়াকে এত খারাপ মনে করে যেমন মনে করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে।

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١ [الحجرات: ١]

ওহে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আগে বেড়ে যেয়ো না , আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”।[53]

১৪. মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ শাশ্বত ও চিরন্তন। তাঁর শরীয়ত পূর্বের সমস্ত শরীয়তকে রহিত বা বাতিল করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা রহিত থাকবে।

فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” والذي نفس محمد بيده لو بدا لكم موسى فاتبعتموه وتركتموني لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وأدرك نبوتي لاتبعني ) رواه الدارمي

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- “আল্লাহর কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন। যদি মুসা আ: তোমাদের মাঝে প্রকাশ পেতেন তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে,ফলে তোমরা সহজ -সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। অথচ মুসা আ: যদি এখন জীবিত থাকতেন ও আমার নবুওতের কাল পেতেন তাহলে তিনি নিশ্চিত আমার আনুগত্য করতেন”।[54]

﴿ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ لِمَ تَلۡبِسُونَ ٱلۡحَقَّ بِٱلۡبَٰطِلِ وَتَكۡتُمُونَ ٱلۡحَقَّ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٧١ [ال عمران: ٧١]

হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান”। [55]

মুসলিম হওয়ার পর খ্রিষ্টান হল কিন্তু কবর তার মৃতদেহ গ্রহণ করল না। সুতরাং পূর্বের সমস্ত ধর্ম বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য বা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ رَجُلٌ نَصْرَانِيًّا فَأَسْلَمَ، وَقَرَأَ البَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ، فَكَانَ يَكْتُبُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَعَادَ نَصْرَانِيًّا، فَكَانَ يَقُولُ: مَا يَدْرِي مُحَمَّدٌ إِلَّا مَا كَتَبْتُ لَهُ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ فَدَفَنُوهُ، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا: هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ فَأَعْمَقُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا: هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ وَأَعْمَقُوا لَهُ فِي الأَرْضِ مَا اسْتَطَاعُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَعَلِمُوا: أَنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ، فَأَلْقَوْهُ

আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “এক খ্রিষ্টান মুসলিম হল এবং সূরা বাকারা ও আল ইমরান শিখে নিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য অহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিষ্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশী কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিষ্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিষ্টানরা বলতে লাগল-এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এবারও তারা বলতে লাগল, এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরও গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল”।

আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না।

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣ [المائدة: ٣]

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম”। [56]

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ [ال عمران: ٨٥]

আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [57]

১৫. মৃত সুন্নাত জীবিত করার মর্যাদা:

যখন কোন সূন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়, তার উপর মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করা এবং তার উপর আমল করার ফযীলত অনেক। রাসূল সা. বলেন,

مَنْ أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي، فَعَمِلَ بِهَا النَّاسُ، كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، لَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ ابْتَدَعَ بِدْعَةً، فَعُمِلَ بِهَا، كَانَ عَلَيْهِ أَوْزَارُ مَنْ عَمِلَ بِهَا، لَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِ مَنْ عَمِلَ بِهَا شَيْئًا

যে ব্যক্তি আমার একটি (মৃত) সুন্নাত জীবিত করে এবং লোকেরা তদনুযায়ী আমল করে, সেও আমল কারীর অনুরূপ পুরস্কার পাবে। এতে আমলকারীর পুরস্কার কিছুমাত্র কম হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোন বিদআতের উদ্ভাবন করে এবং সে অনুযায়ী আমল করা হয়, তার উপর আমলকারীর পাপের বোঝার অনুরূপ বোঝা বর্তাবে। এতে আমলকারীর পাপের পরিমাণ কিছুই কমানো হবে না”। [58]

১৬. যারা আল্লাহ ও রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা মু‘মিন নন। বরং তারা মুনাফিক, যালিম, কাফির।

আল্লাহ তা’আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,

﴿ وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٞ مِّنۡهُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُوْلَٰٓئِكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٤٧ [النور : ٤٧]

তারা বলে- আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম আর রাসূলের প্রতিও আর আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যকার একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা মু’মিন নয়”। [59]

﴿ وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨ [النور : ٤٨]

তাদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তার রাসূলের পানে আহ্বান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়”। [60] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١ [النساء : ٦١]

যখন তাদেরকে বলা হয়-তোমরা আল্লাহর অবতীর্ণ হুকুমের এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তুমি ঐ মুনাফিকদের দেখবে, তারা তোমার কাছ থেকে ঘৃণা ভরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে”।[61]

﴿كَيۡفَ يَهۡدِي ٱللَّهُ قَوۡمٗا كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ وَشَهِدُوٓاْ أَنَّ ٱلرَّسُولَ حَقّٞ وَجَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٦ [ال عمران: ٨٦]

আল্লাহ কীরূপে সেই সম্প্রদায়কে সুপথ দেখাবেন যারা ঈমান আনার পর, এ রাসূলকে সত্য বলে স্বীকার করার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল আসার পর কুফরি করে? বস্তুত: আল্লাহ যালিম কওমকে পথ দেখান না”।[62]

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢ [ال عمران: ٣٢]

বল, ‘তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আজ্ঞাবহ হও’। অতঃপর যদি তারা না মানে, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না”। [63]

১৭. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অমান্য করবে তারা জাহান্নামী।

তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤ [النساء : ١٤]

আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন, সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে”। [64] আল্লাহ তা’আলা তাদের বিষয়ে বলেন,

﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ [النساء : ١١٥]

যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কত মন্দই না সে আবাস”! [65] আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿إِلَّا بَلَٰغٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِسَٰلَٰتِهِۦۚ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ [الجن: ٢٣]

আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে”। [66]

﴿ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِٱلۡكِتَٰبِ وَبِمَآ أَرۡسَلۡنَا بِهِۦ رُسُلَنَاۖ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٧٠ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢ [غافر: ٧٠، ٧٢]

যারা কিতাবকে আর আমি আমার রাসূলদেরকে যা দিয়ে পাঠিয়েছি তাকে অস্বীকার করে, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলায় থাকবে বেড়ি আর শিকল; তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে – ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করা হবে”। [67]

১৮. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য পরিহার করবে তাদের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া কোন আমল কাজে আসবে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣﴾ [محمد : ٣٣]

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের আমলগুলোকে নষ্ট করে দিও না”।[68]

১৯. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পথ অবলম্বন করুন। রাসূলের পথ বাদ দিয়ে শয়তানের পথে চলার পর অনুশোচনা, কোন কাজে আসবে না।

সুতরাং সময় থাকতে তওবা করে কুরআন ও সহীহ হাদিসের দিকে আসুন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ [الفرقان: ٢٧]

যালিম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম”।[69]

﴿ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ [الفرقان: ٢٨]

হায় আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম”। [70]

﴿ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ [الفرقان: ٢٩]

আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়”। [71]

২০. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ যেরূপ হওয়া উচিত:

فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: «إِنَّ اللَّهَ بَعَثَ إِلَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا نَعْلَمُ شَيْئًا، فَإِنَّمَا نَفْعَلُ كَمَا رَأَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُ

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন: “আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন, আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে রূপ করতে দেখি, আমরাও সেরূপ করি”।[72]

كَانَ ابْنُ عُمَرَ :إِذَا سَمِعَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثًا لَمْ يَعْدُهُ، وَلَمْ يُقَصِّرْ دُونَهُ»

ইবনে উমার রা. যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস শুনতেন, তাতে তিনি কোন কিছু বাড়াতেন না এবং তা থেকে কিছু কমাতেন না।[73]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: اتَّخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ، فَاتَّخَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَ مِنْ ذَهَبٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي اتَّخَذْتُ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ» فَنَبَذَهُ، وَقَالَ: «إِنِّي لَنْ أَلْبَسَهُ أَبَدًا» ، فَنَبَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَهُمْ

ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পড়তে লাগল। এরপর (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি সোনার আংটি পরছিলাম-তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন: আমি আর কোন দিনই তা পরব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল”।[74]

عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الحَجَرِ الأَسْوَدِ فَقَبَّلَهُ، فَقَالَ: «إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

উমার রা. হতে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, “আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না”। [75]

২১. হাদিস অমান্য কারীর সঙ্গে সম্পর্ক কিরূপ হওয়া চাই:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، أَنَّهُ كَانَ جَالِسًا إِلَى جَنْبِهِ ابْنُ أَخٍ لَهُ، فَخَذَفَ، فَنَهَاهُ، وَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا وَقَالَ: «إِنَّهَا لَا تَصِيدُ صَيْدًا، وَلَا تَنْكِي عَدُوًّا، وَإِنَّهَا تَكْسِرُ السِّنَّ، وَتَفْقَأُ الْعَيْنَ» قَالَ: فَعَادَ ابْنُ أَخِيهِ يخذفَ فَقَالَ: أُحَدِّثُكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا، ثُمَّ عُدْتَ تَخْذِفُ، لَا أُكَلِّمُكَ أَبَدًا

আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. থেকে বর্ণিত। একদা তার কাছে তার এক ভাতিজা বসা ছিল। সে তখন কংকর নিক্ষেপ করছিল। তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করছেন। তিনি আরও বললেন: এতে না শিকার করা হয়, আর না শত্রু পরাভূত হয়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় অথবা চক্ষু নষ্ট করে দেয়। রাবী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি [ইবনে মুগাফ্ফাল রা.] বলেন: আমি তোমাকে হাদিস শুনাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ এরপরও তুমি কংকর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সাথে আর কখনও কথা বলব না।[76]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ أَنْ يُصَلِّينَ فِي الْمَسْجِدِ» فَقَالَ ابْنٌ لَهُ: إِنَّا لَنَمْنَعُهُنَّ، فَقَالَ: فَغَضِبَ غَضَبًا شَدِيدًا، وَقَالَ: أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وتقولُ: إِنَّا لَنَمْنَعُهُنَّ؟

ইবনে উমার থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (মহিলাদের) মসজিদে সালাত আদায় করতে মানা করো না। তখন ইবনে উমারের এক পুত্র বললেন: আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব। রাবী বলেন: এতে তিনি (ইবনে উমার) ভয়ানক রাগান্বিত হয়ে বললেন: আমি তোমার নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করছি, অথচ তুমি বলছ যে, আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব [77]?

২২. হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। কারণ মিথ্যা হাদিস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। তাই সহীহ ও হাসান হাদিস ছাড়া জাল বা জঈফ হাদিস আমল করার জন্য বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য জঈফ ও জাল হাদিস জানা দরকার। জঈফ হাদিস রাসূলের সূন্নাহর ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। “হে মু’মিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক ; কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ”। আর জাল বা মিথ্যা হাদিস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়। সুতরাং হাদিস যাচাই করতে হবে। তাক্বলিদ করা চলবে না (বিনা দলিল-প্রমাণে কারও কথা মেনে নেওয়া)।

كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ

কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়”। [78]

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن جَآءَكُمۡ فَاسِقُۢ بِنَبَإٖ فَتَبَيَّنُوٓاْ أَن تُصِيبُواْ قَوۡمَۢا بِجَهَٰلَةٖ فَتُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَا فَعَلۡتُمۡ نَٰدِمِينَ ٦ [الحجرات: ٦]

মুমনিগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করবে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও”। [79]

سَمِعْتُ عَلِيًّا، يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَكْذِبُوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ»

আলী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে যাবে।[80]

عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ لِلزُّبَيْرِ: إِنِّي لاَ أَسْمَعُكَ تُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا يُحَدِّثُ فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ؟ قَالَ: أَمَا إِنِّي لَمْ أُفَارِقْهُ، وَلَكِنْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতা যুবায়রকে বললাম: আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মতো আল্লাহর রাসূলের হাদিস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন: জেনে রেখ আমি তার (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।[81]

قَالَ أَنَسٌ: إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِبًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদিস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়[82]

عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

সালামাহ ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়’। [83]’

২৩. মত বিরোধপূর্ণ পরিবেশে সুন্নাত ও হিদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। আর বিদআত পরিত্যাগ করতে হবে।

عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا، وَسَتَرَوْنَ مِنْ بَعْدِي اخْتِلَافًا شَدِيدًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَالْأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও মানবে, যদিও তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর আমার সুন্নাত ও হিদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান ! তোমরা বিদআত পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি-পথভ্রষ্ট। [84]

২৪. যুগে যুগে ইত্তেবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী। যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বা আল জামায়াতের অনুসারী। যে জামায়াত আঁকড়ে ধরার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং যারা কুরআন হাদিসের অনুসরণকে বাদ দিয়ে যুক্তির পিছনে ছুটে বেড়ায় তাদের পথ পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে আহলুর রায় থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং কুরআন ও সহীহ হাদিসের অনুসারী হতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تَفَرَّقَتِ اليَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ أَوْ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَالنَّصَارَى مِثْلَ ذَلِكَ، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً.

আবু হুরাইর রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াহুদী জাতি ৭১ বা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। নাসারাও তাই। আর আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। [85]

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَرَقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، فَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَافْتَرَقَتِ النَّصَارَى عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، فَإِحْدَى وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَتَفْتَرِقَنَّ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ» ، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ؟ قَالَ: «الْجَمَاعَةُ»

আওফ ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-ইয়াহুদী জাতি ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। একদল জান্নাতী আর ৭০ দল জাহান্নামী। খ্রিস্টানরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। ৭১ দল জাহান্নামী আর একদল জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, অবশ্যই আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল হবে জান্নাতী। আর ৭২টি দল হবে জাহান্নামী। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারা জান্নাতী ? তিনি বললেন: আল জামায়াত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের জামায়াত)। [86]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ افْتَرَقَتْ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَإِنَّ أُمَّتِي سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، كُلُّهَا فِي النَّارِ، إِلَّا وَاحِدَةً وَهِيَ: الْجَمَاعَةُ

আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-বনী ইসরাঈল ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭২ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। আর তা হচ্ছে আল জামায়াত। [87]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بني إسرائيل حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ، حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ، وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বনূ ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হল একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা ? তিনি বললেন: আমি এবং আমার সাহাবীরা আজকের দিনে যার উপর (প্রতিষ্ঠিত)”। [88]

যুগে ইত্তেবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী তাদের তালিকা নিম্নে দেয়া হল।

2

মুহাম্মদ আমিনুল হক : হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম নবী ও রাসূল। তাঁর উপর ঈমান রাখা ও তাঁকে নিজের চেয়েও ভালবাসা মুমিনের একান্ত কর্তব্য। পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফের একাধিক বর্ণনায় মুমিনদেরকে রাসূল (সা.) এর প্রতি অগাধ প্রেম-ভালবাসা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: ‘‘বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং বাসস্থান -যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করবেন না’’ (সূরা আত তাওবাহ:২৪)। তিনি আরো বলেন: ‘‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ’’ (সূরা আল আহযাব:০৬)। নবী (সা.) বলেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষের চাইতে প্রিয় হই’’ (বুখারী ও মুসলিম)। আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা নবী (সা.) এর সাথে ছিলাম। নবী (সা.) হযরত ওমর (রা.) এর হাত ধরা ছিলেন। অত:পর ওমর (রা.) রাসূল (সা.)কে বললেন: হে রাসূল আমি আপনাকে সবচাইতে বেশি ভালবাসি তবে আমার নিজের চাইতে বেশি নয়। নবী (সা.) বললেন: তাহলে হবে না; আল্লাহর শপথ! তোমার নিজের চাইতেও আমাকে বেশি ভালবাসতে হবে। তখন ওমর (রা.) বললেন: এখন আমি আপনাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি। অত:পর নবী (সা.) বললেন: হে ওমর তাহলে এখন ঠিক আছে’’ (বুখারী)।

রাসূল (সা.) কে ভালবাসার নমুনা:

মানুষ একে অপরকে ভালবাসে হৃদয়ে ও বিশ্বাসে; যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তার আচার আচরণ ও কর্মে। নবী (সা.)কে ভালবাসলে তার আলামত নিশ্চয়ই আমাদের কাজে কর্মে থাকতে হবে। যারা নবী (সা.)কে ভালবাসেন তাদের মধ্যে নিম্নের আলামতগুলো বিদ্যমান থাকা আবশ্যক।

এক. রাসূল (সা.) কে সম্মান করা: এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘আমিতো আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে সাহায্য কর ও সম্মান কর এবং সকালে সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ কর’’ (সূরা আল ফাতহ: ৮-৯)। আমাদেরকে সব সময় নবী (সা.) কে সম্মান করতে হবে। নবী (সা.) যতটুকু মর্যাদার হক্বদার আমাদেরকে ততটুকুই মর্যাদা দিতে হবে এতে কোন কার্পণ্য করা যাবে না। রাসূল (সা.) কে সম্মান করতে গিয়ে আমাদেরকে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে- যেমন:

ক. নবী (সা.) এর সামনে উঁচুস্বরে কথা না বলা: নবী (সা.) যখন জীবিত ছিলেন তখন তাঁর সামনে উচু আওয়াজেও কথা বলা নিষেধ ছিল। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন: ‘‘হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বরকে রাসূলের কণ্ঠস্বরের উপর উঁচু করো না এবং তোমরা তাঁর সাথে এমন উঁচু স্বরে কথা বলো না; যেমন তোমরা একে অপরের সাথে উচু স্বরে কথা বলে থাক। এতে তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে যাবে, অথচ তোমরা টেরও পাবে না’’ (সূরা আল হুজুরাত: ০২)। তিনি আমাদের মাঝে এখন আর বিদ্যমান না থাকলেও তাঁর কথামালা রয়ে গেছে। তাই কুরআনের এ আয়াতের দিকে লক্ষ্য রেখে রাসূল (সা.) নিসৃত বাণী মনোযোগ ও সম্মানের সাথে শুনতে হবে এবং তা যথাযথভাবে আমল করতে হবে। রাসূলের কোন কথাকেই বিকৃত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। যে সমস্ত দায়ী ইলাল্লাহ ও আলেমে দ্বীন রাসূলের বাণী প্রচার করেন; তাঁদেরকেও সম্মান করতে হবে।

খ. রাসূল (সা.) এর উপর ছালাত ও ছালাম পড়া: নবী (সা.) এর উম্মতের কর্তব্য হচ্ছে- রাসূল (সা.) এর উপর ছালাত ও ছালাম পেশ করা। এটি তাঁদের উপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাগণ নবীর উপর ছালাম পেশ করে। অতএব, হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর উপর ছালাত ও ছালাম পেশ কর’’ (সূরা আল আহযাব: ৫৭)। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন: ‘‘যে ব্যক্তির সামনে আমার নাম উচ্চারিত হল; অথচ সে আমার উপর ছালাম পেশ করল না সে কৃপণ’’ (আহমদ)। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন: ‘‘তার নাক ধুলায় মলিন হোক যে আমার নাম শুনেও আমার উপর ছালাম পেশ করল না’’ (আহমদ)।

দুই: রাসূল (সা.) ও তাঁর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখা: রাসূল (সা.) কে ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- তাঁকে এবং তাঁর সুন্নাতকে সবসময় সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘এ সম্পদে হক রয়েছে মুহাজিরদের, যারা নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ থেকে উৎখাত হয়েছে। তারা কেবল অন্বেষণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি এবং তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী’’ (সূরা আল হাশর: ০৮)। সাহাবীগণ রাসূল (সা.) কে ও তাঁর সুন্নাতকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। সব কিছুর উর্ধে রাসূলকে মর্যাদা দিতেন। তাঁর আদেশ-নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেন। রাসূলের আদর্শকে সমুন্নত রাখাই ছিল তাঁদের একমাত্র সাধনা। সাহাবায়ে কিরামের জিন্দেগী পর্যালোচনা করলে তাঁদের রাসূল প্রেমের অসংখ্য নজির দেখতে পাওয়া যায়। রাসূলের জন্য তাঁরা তাঁদের জীবন কুরবান করে ইতিহাস রচনা করেছেন। আমাদেরকেও তাই রাসূলের আদর্শ ও তাঁর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করতে হবে। রাসূল (সা.) এর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখার অর্থ হচ্ছে- রাসূলের সুন্নাত সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা, একে বিশুদ্ধ রাখা, এর অপপ্রয়োগ না করা, অপব্যাখ্যা না করা ও চরমপন্থী ও বিদয়াতপন্থীদের হাত থেকে রক্ষা করা। আর যারা রাসূলের হাদীস কেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্দেহ ও অপবাদ প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক জবাব দেয়া। তাদের মিথ্যা প্রচারণাকে মানুষের সামনে যুক্তি দিয়ে অসার প্রমাণ করা।

তিন: রাসূল (সা.) যা বলেছেন তা সত্য বলে মেনে নেয়া: ঈমানের অন্যতম দাবী হচ্ছে- রাসূল (সা.) কে সকল প্রকার মিথ্যা ও অপবাদের উর্ধে রাখা। তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন, এই বিশ্বাস হৃদয়ে ধারন করা। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যা খবর দিয়েছেন তাকে সত্য জানা। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘‘নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কুরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়’’ (সূরা আন নাজম:১-৪)। নবী (সা.) কে অপবাদ দেয়া ও তাঁর কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা কুফুরী। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদেরকে নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন: ‘‘আর কুরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহ নেই- তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে। মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’’ (সূরা ইউনুস:৩৭-৩৮)।

চার: রাসূল (সা.) এর অনুসরণ ও আনুগত্য: রাসূল (সা.) কে মহববত করার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- নবী (সা.) যা বলেছেন এবং যা করেছেন তার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও আনুগত্য করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সূরা আল-আহযাব:২১)। রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করা ফরজ। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের অনেক নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক’’ (সূরা আল-হাশর:৭)। আল্লাহ তায়ালা রাসূলের আনুগত্যকে তাঁর আনুগত্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করে’’ (সূরা আন-নিসা: ৮০)। রাসূল (সা.) এর আনুগত্যের বিষয়ে অনেক হাদীস বিধৃত হয়েছে। নবী (সা.) বলেন: ‘‘তোমাদের কর্তব্য হচ্ছে- আমার এবং খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আকড়ে ধরা। এবং তা শক্তভাবে দাঁত কামড়িয়ে যেভাবে ধরে সেভাবে ধরবে। সাবধান! তোমরা ধর্মের মধ্যে নতুন বিষয় থেকে দূরে থাকবে। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুনত্বই (ধর্মের মধ্যে) বিদয়াত। আর প্রত্যেক বিদয়াতই ভ্রষ্টতা’’ (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযি)। অতএব, প্রত্যেক কাজে রাসূলের অনুগত্য করাই হচ্ছে রাসূলের মহববত। আর তাই রাসূলের মহববত যত বাড়বে রাসূলের আনুগত্যও তত বাড়বে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালবাসেন’’ (সূরা আল-ইমরান: ৩১)।

পাঁচ: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কে সর্ব বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালাকারী হিসেবে মেনে নেওয়া: মানব সমাজ বিবাদের উর্ধে নয়। সমাজের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন বিষয়ে মতদ্বৈততা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এই বিবাদ মিটানোর জন্য আমাদেরকে রাসূল (সা.) এর নীতি অনুসরণ করতে হবে। তিনি যে পথনির্দেশ দেখিয়েছেন সেটিকেই চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নিতে হবে। রাসূল (সা.) কে ভালবাসার এটিও একটি নজির। যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সর্ব বিষয়ে শালিস মানতে পারেন না তিনি মুসলমান দাবি করতে পারেন না। এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ফয়সালার অধিকারী। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতভেদ কর, তবে তা প্রত্যার্পণ কর আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি। যদি তোমরা ঈমান এনে থাক আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে কল্যাণকর’’ (সূরা আন-নিসা:৫৯)। তিনি আরও বলেন: ‘‘তবে না; আপনার রবের কসম! তারা মুমিন হবে না যে পর্যন্ত না তারা আপনার উপর বিচারের ভার অর্পণ করে সেসব বিবাদ-বিসম্বাদের যা তাদের মধ্যে সংঘটিত হয়, তারপর তারা নিজেদের মনে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ বোধ না করে আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়’’ (সূরা আন-নিসা:৬৫)। যারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করে অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফয়সালা মেনে নেয় না তারা মূলত: মুনাফিক; ইসলামের সাথে তাঁদের সম্পর্ক থাকতে পারে না। আল্লাহ বলেন: ‘‘আপনি তাদের দেখেননি যারা দাবি করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাসী? অথচ তারা বিচারপ্রার্থী হতে চায় তাগুতের কাছে, যদিও তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করতে। আর শয়তান তাদের পথভ্রষ্ট করে বহু দূরে নিতে চায়। আর যখন তাদের বলা হয়, এস আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে সরে যাচ্ছে’’ (সূরা আন-নিসা: ৬০-৬১)।

রাসূল (সা.) কে ভালবাসার নামে বাড়াবাড়ি : আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা রাসূল (সা.)কে মহববত করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। রাসূল মাটির তৈরী নয়, তিনি গায়েব জানেন, দুনিয়া ও আদম সৃষ্টির আগে রাসূলকে সৃষ্টি করা হয়েছে, নবী (সা.) কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক এরকম অসংখ্য অশুদ্ধ কথা বাজারে প্রচলিত আছে। এই সমস্ত বাড়াবাড়ি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন: ‘‘আর এটিই আমার সরল সঠিক পথ, অতএব তোমরা এ পথেই চল, বক্র পথে চলো না। চললে সেসব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে’’ (সূরা আল-আনয়াম: ১৫৩)। নবী (সা.) তাঁর সম্পর্কে অতিরিক্ত প্রশংসা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন: ‘‘তোমরা আমার অতিরিক্ত প্রশংসা করো না; যেভাবে ইহুদীরা ঈসা ইবনে মরিয়মকে নিয়ে করেছে। আমি কেবল আল্লাহর বান্দা। অতএব তোমরা বল: আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’’ (বুখারী)। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা একব্যক্তি নবী (সা.) কে বললেন: আপনি এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। তখন নবী (সা.) বলেন: তুমি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে ফেললে; বরং তুমি বল, একমাত্র আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে’’ (আহমদ)। এভাবে অনেক হাদীসে নবী (সা.) তাঁকে নিয়ে অতিরিক্ত ভক্তি, প্রশংসা ও যেকোন ধরনের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।

পরিশেষে আমি সকল মুসলিম ভাই-বোনদের উদ্যেশ্যে বলতে চাই যে, রাসূল (সা.) কে আমাদের হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে হবে; কিন্তু সে ভালবাসা যেন হয় শরীয়তের গন্ডির মধ্যে থেকেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা রাসূল (সা.) কে ভালবাসতে গিয়ে এমন কথা বলেন বা বিশ্বাস রাখেন যা মূলত: আল্লাহর শানে মানায়। এরকম কথা ও বিশ্বাসকে পরিহার করে রাসূল (সা.) যা করতে বলেছেন এবং তিনি যা করেছেন তার হুবহু অনুকরণ করতে পারলেই তাঁর পরম ভালবাসার পাত্র হওয়া যাবে, অন্যথায় নয়। মনে রাখা দরকার, রাসূলের নামে মিলাদ-মাহফিল কিংবা রাসূল (সা.) এর নাম শুনে মুখে আঙ্গুল নিয়ে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো ও জশনে জুলুস করা যত প্রয়োজন তাঁর চেয়ে বেশি প্রয়োজন মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, বছরে একবার রমজান মাসে শুদ্ধভাবে রোযা রাখা, ইসলামের বিধান মানা, হারাম থেকে দূরে থাকা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া, ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রের মধ্যে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করা। এগুলোর মধ্যেই রাসূলকে পাওয়া যাবে; পাওয়া যাবে তাঁর মহববত। রাসূল (সা.) এর নামে মিলাদ-মাহফিল করলাম কিন্তু তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ করতে পারলাম না এটি দু:খজনক। আমি যাকে ভালবাসব তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী ভালবাসতে হবে; না হয় ভালবাসা হয় না; হয় প্রতারণা। রাসূলকে ভালবাসতে হলে তাই রাসূলের নির্দেশিত পন্থায়ই তাঁকে ভালবাসতে হবে; নচেৎ এই সমস্ত নেফাকী ভালবাসা দিয়ে আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল সম্ভব নয়; নয় রাসূলের খাঁটি উম্মত হওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (সা.)-এর পরিশুদ্ধ ভালবাসা অর্জনের তাওফীক দিন। আমীন।

3

ধর্ম কী? এটি হচ্ছে মানুষের জন্য জীবনবিধান যা আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আল-কুরআন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে নাযিলকৃত জীবনবিধান। অথচ আমরা মুসলমানরা ধর্ম বলতে সাধারণত নামায, রোযা, বে-বুঝ কুরআন তিলাওয়াত এবং হাদীসে উদ্ধৃত দু‘আ-দরূদের আমল করাকেই বুঝে থাকি।

কুরআনের জ্ঞানের অভাব এবং ভুল শিক্ষার কারণে আমাদের অধিকাংশ মুসলিম আজ কুরআনের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে নানা প্রকার ভ্রান্ত আমলে লিপ্ত রয়েছে। এর ফল স্বরূপ আমাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেন, ‘তুমি বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের পরিচয় বলে দেব না, যারা আমলের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত! তারা ওইসব লোক, দুনিয়ার জীবনে যাদের প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা সৎ কাজ করছে।’ (১৮:১০৩-১০৪)

আমাদের আমল ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, ভুল শিক্ষার কারণে ৩টি মৌলিক বিষয় সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা। তা হচ্ছে—

১. কুরআনের মূল্যায়নে ব্যর্থতা,

২. হাদীসের গুরুত্ব,

৩. রাসূল (সা.)-এর মর্যাদা ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা।

১. কুরআনের মূল্যায়নে ব্যর্থতা

কুরআন হচ্ছে ইসলামের মূল পাঠ্যপুস্তক বা টেক্সট বই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কুরআন ‘মানুষের জন্য হিদায়াত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।’ (সূরা বাকারা: ১৮৫)

এ কুরআন এক বরকতময় কিতাব যা আমি তোমার (রাসূল) প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষেরা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে ও বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (৩৮:২৯)

এ কুরআন মানুষের জন্য সুস্পষ্ট দলিল এবং দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত।’ (৪৫:২০)

এ কুরআন সমগ্র জগতের জন্য উপদেশ ব্যতীত কিছুই নয়।’ (৬৮:৫২)

অথচ কুরআনের উপদেশ গ্রহণের আগ্রহ আমাদের মধ্যে নেই। যেহেতু আমাদের অধিকাংশের ধারণা সহীহ উচ্চারণে (যা চালু হয় রাসূলের পরের যুগে) অর্থ ও মর্ম না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত হচ্ছে কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য। আর ইবাদতের জন্য হাদীসের অনুসরণ ও বাস্তবায়ন যথেষ্ট।

আসলে কুরআনের বিধি বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করাটাই হচ্ছে কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য। কেবল অর্থ বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করলে অর্থাৎ পড়লে এবং সে অনুযায়ী আমল করলে আল্লাহর রহমত অর্জন সম্ভব। না বুঝে পড়া সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, ‘কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্যই হলো বুঝে পড়া।’ (বুখারী ও মুসলিম)

কুরআন বুঝে পড়তে হলে সূরা আলে ইমরানের ৭নং আয়াতে প্রদত্ত দিকনির্দেশনার অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ মুহকাম (সুস্পষ্ট) এবং মুতাশাবিহ (রূপক) আয়াতের গুরুত্ব অনুধাবন এবং তার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।

আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, কুরআন হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার প্রণয়নকৃত ও নাযিলকৃত আমাদের জীবনবিধান। এ বিধান অনুযায়ী জীবন গড়া বা না গড়া ও তার পরিণাম সম্পর্কিত বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে কুরআনে ব্যক্ত করা হয়েছে, যার অতিরিক্ত কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। কেননা এগুলোই হচ্ছে মুহকাম আয়াত। তাছাড়া কুরআনে বিভিন্ন নবীর জীবনী, তাদের দায়িত্ব, আল্লাহ প্রদত্ত মুজিজা ও মর্যাদা এবং কওমের উত্থান-পতনের ঘটনা নানাভাবে বার বার বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে (১৭:৪৯)। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সকল আয়াতের ব্যাখ্যা সম্ভব। তাই সূরা আলে ইমরানের ৭নং আয়াতে এ সকল আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা পরিহারের কথা বলা হয়েছে।

সুধী পাঠক, আল কুরআন না বুঝে পড়ার ফলেই মুসলমানরা আজ প্রকৃত সত্য এবং প্রকৃত শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। অথচ কুরআন বুঝে তা বাস্তবে প্রয়োগের ফলেই আল্লাহ তা‘আলা স্বর্ণযুগের মুসলমানদের দিয়েছিলেন পৃথিবীর কর্তৃত্ব। এই কর্তৃত্ব প্রদান সর্ব যুগের জন্য প্রযোজ্য। (দেখুন আল কুরআন ২৪:৫৫)

কুরআন বুঝতে হলে যে কোনো পাঠ্যপুস্তকের মতই তা নিজ ভাষায় বুঝে অধ্যয়ন করতে হবে। নিজ ভাষায় অধ্যয়ন করলে এর উপদেশবাণী হাদীস ও তাফসীরের সাহায্য ছাড়াই অনুধাবন সম্ভব। কুরআন বুঝা শুধু ধর্মীয় আলেম ও ইমাম সাহেবদের কর্তব্য নয়। এর বিধি বিধান জানা ও মানা সকল মুসলমানের জন্য ফরয। তাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআন বুঝা সহজ করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, ‘আমি তো তোমার ভাষায় কুরআন সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (৪৪:৫৮)

কুরআন আরবীতে নাযিল হওয়ার একমাত্র কারণ, এটা ছিল রাসূলের মাতৃভাষা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার নিজ জাতির ভাষা-ভাষী করে পাঠিয়েছি, তাদের জাতির কাছে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করার জন্য। (১৪:৪, ৪১:৪৪) এখানে উল্লেখ্য যে, রাসূল (সা.) নিজেও অনুবাদকের মাধ্যমে অন্যান্য ভাষা-ভাষীদের কাছে তাদেরই মাতৃভাষায় কুরআনের বাণী পৌঁছিয়েছেন।

সুধী পাঠক, একটু ভেবে দেখুন, কুরআন আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি পঠিত কিতাব। প্রতিনিয়ত কুরআন তিলাওয়াত ছাড়াও আমরা প্রতিদিন কুরআনের আয়াতের সাহায্যে নামায আদায় করি, দু‘আ করি। বিপদে-আপদে, অসুখে-বিসুখে এবং অন্যান্য প্রয়োজনে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করি। অথচ দুঃখের বিষয় হলেও এটা কি সত্যি নয় যে, আমাদের অধিকাংশ যা পড়ছে বা তিলাওয়াত করছে, তার কিছুই তারা বুঝে না?

কুরআনের জ্ঞান আপনার ধর্মীয় চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনে দিবে, যা আপনার ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি এবং হাদীসের বক্তব্যের সঠিকতা নির্ণয়ে সহায়ক হবে।

আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এবং নিজেদের প্রিয়জনকে এ উপদেশ দেয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, ‘যারা জ্ঞান রাখে আর যারা রাখে না, তারা কি কখনো সমান হতে পারে? (৩৯:৯)

রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারী ও মুসলিম)

কুরআনের মৌলিক শিক্ষা

১. এক আল্লাহর একত্ব, সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। (১:৪, ৯৮:৫)

২. নবী-রাসূল ও সকল মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি ও আল্লাহর দাস, সুতরাং মানুষের মনগড়া আইন নয় বরং আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করতে হবে। (২৮:৭০, ৮৮, ৫:৭২)

৩. কুরআন ও সহীহ হাদীস বহির্ভূত আমল পরিত্যাগ করতে হবে।

৪. সকল কাজ ও ইবাদতে নবীর অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে। (৪:৮০)

২. হাদীসের গুরুত্ব

হাদীস হচ্ছে মূলত আল্লাহ প্রদত্ত কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বা নোট বই এবং সুন্নাত ও নফল (অতিরিক্ত) আমলের সূত্র।

আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, ‘ওরা তোমার নিকট কোনো সমস্যা নিয়ে এলে আমি তোমাকে তার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকি।’ (২৫:৩৩) ‘তার বিশদ ব্যাখ্যা করে দেয়ার দায়িত্বও আমার।’ (৭৫:১৯)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘সে (রাসূল) নিজের ইচ্ছামত কোনো কথা বলে না (ধর্মীয় বক্তব্য দেয় না), সে যা বলে সবই আল্লাহর ওহী।’ (৫৩:৩-৪)

রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমার নিকট ওহীর মাধ্যমে যা নাযিল হয়, আমি শুধু তারই অনুসরণ করি।’ (৬:৫০, ৭:২০৩, ১০:১৫ এবং ৪৬:৯)

উপরিউক্তি আয়াতগুলো পর্যালোচনা করে এটা সহজেই বলা যায় যে, হাদীসের সকল বক্তব্য আল্লাহর বাণী যা রাসূল (সা.) নিজ ভাষায় ব্যক্ত করেতেন। সুতরাং কুরআন হাদীস বহির্ভূত বক্তব্য বা আমল ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। বরং তা বিদআত। মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য শয়তানের অপচেষ্টা। এ সত্য উপলব্ধি করলে সহজেই শিরক ও বিদআতমুক্ত আমল করা সম্ভব।

হাদীস গ্রন্থগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাবো যে, রাসূল (সা.) কেবল কুরআনের ব্যাখ্যাই দেননি। তিনি যেভাবে কুরআন বাস্তবায়ন করেন তার বিস্তারিত বিবরণও এর অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া তিনি তার সাহাবীদের বিভিন্ন সময়ে নফল আমল ও তার ফযীলতের কথাও জানিয়েছেন। অবশ্য রাসূল (সা.) বুঝতে পেরেছিলেন যে, নও মুসলিমরা কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে সেসব ফযীলতের আমলকে প্রাধান্য দেবে। তাই তিনি তার জীবদ্দশায় কুরআনের শিক্ষা বিস্তারের পূর্বে এ সকল আমলের কথা লিখতে এবং জনসাধারণের কাছে তার প্রচার নিষেধ করেছেন।

রাসূলের এ নিষেধবাণী উপেক্ষা করে, কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে কেবল হাদীসের অনুসরণের ফলে মুসলিমরা আজ পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত আমলে লিপ্ত।

অল্প চেষ্টায় অধিক লাভের আশা করা মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা। রাসূলের পরবর্তী যুগে মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইসলামের শত্রু কতিপয় মিথ্যুক হাদীস বর্ণনাকারী ও স্বার্থপর আলেমরা সাহাবীদের উদ্ধৃতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ জাল হাদীসের প্রচলন ও প্রচার আরম্ভ করে। মুসলমানেরা এই সকল হাদীসের অনুসরণ করে বিপথগামী হতে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফাযতের ঘোষণা দেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী।’ (১৫:৯) দুর্ভাগ্যবশতঃ হাদীস সংরক্ষণে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোর ন্যায় হাদীসশাস্ত্রেও নানা প্রকার বিকৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে। হাদীস বিশারদদের দ্বারা স্বীকৃত ১নং সহীহ হাদীস গ্রন্থের সংকলনকারী ইমাম বুখারী (রহ.) ১০ (দশ) লক্ষের অধিক হাদীস সংগ্রহ করে নির্ভরযোগ্যতার ১৮টি পন্থায় যাচাই-বাছাই করে সর্বমোট মাত্র ৭,৩৯৭টি হাদীস সহীহ বুখারী শরীফের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তা ছিলো ১%-এর কম, বাকি ৯৯ শতাংশের বেশি মিথ্যা বা সঠিক নয় বলে পরিত্যাগ করেন। অবশ্য সহীহ বলে গৃহীত হাদীসগুলোর সত্যতার ব্যাপারে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা আজও কেউ দিতে পারবে না।

যে কোনো হাদীস সঠিক নয় বলে বিবেচিত হবে যদি তা হয়—

১. কুরআনের বক্তব্যের পরিপন্থী

২. শরীয়তের কোনো সুস্পষ্ট নীতির বিপরীত

৩. রাসূলের চরিত্র কিংবা শিক্ষার বিরূপ

৪. সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধির আলোকে অথবা বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বক্তব্যটি অবাস্তব

৫. সামান্য আমলে অত্যধিক ফযীলত কিংবা বেহেশতে যাওয়ার নিশ্চয়তা

৬. আমলটির প্রচলন হয় খোলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তী যুগে।

রাসূল (সা.) যে আমলের কথা বলেননি, হাদীসের কথা বলে তা চালু করা বা প্রচার করা নিশ্চয়ই রাসূলের নামে মিথ্যা বলার শামিল। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার নামে মিথ্যা বলবে সে অবশ্যই জাহান্নামী।’ (মুসলিম)

রাসূল (সা.) আরও বলেন, যে লোক এমন আমল করল, আমার উপস্থাপিত শরীয়ত যার অনুকূলে ও সমর্থনে নয়, তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’ (মুসলিম)

অতিরিক্ত ফযীলতের আশায় সন্দেহযুক্ত আমল করা কি বোকামি নয়? দরূদে ইবরাহীম ব্যতিত অধিকাংশ দরূদ যেমন বিদআত তেমনি বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত অনেক ধর্মীয় আমলের বইগুলোতে উদ্ধৃত অধিকাংশ আমল বিদআত বলে প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ফযীলতের বর্ণনা সহীহ হাদীসের উদ্ধৃতি ব্যতিত মানুষের মনগড়া বলে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সকল আমল করার পূর্বে এর সূত্র যাচাই করা অত্যাবশ্যক।

৩. রাসূলের মর্যাদা ও তার প্রতি ভালোবাসা

পূর্ববর্তী সকল ধর্মগ্রন্থের বিকৃতি এবং ধর্মের মূলমন্ত্র তাওহীদ-এর জায়গায় শিরক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে— নবী-রাসূলদের ক্ষমতা, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অতিরঞ্জিত কিচ্ছা-কাহিনীর প্রচলন। ফলে মানুষ স্রষ্টাকে ভুলে সৃষ্টির ইবাদতে লিপ্ত হয়।

রাসূলের ওফাতের অনেক পরে মুসলিম সমাজের কতিপয় স্বার্থান্বেষী আলেম ও ইসলামের শত্রু মানুষরূপী শয়তানেরা নানাবিধ কিচ্ছা-কাহিনী ও কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের অপব্যাখ্যা এবং মানুষ রচিত কলেমা ও মিথ্যা ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে অন্যান্য নবীদের অনুসারীদের ন্যায় রাসূলের নিজস্ব অলৌকিক ক্ষমতা, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের নানাবিধ কাল্পনিক চমকপ্রদ কাহিনীর প্রচলন করে। এসবের দ্বারা তারা মানুষের মনে শিরকের বীজ বপন করে।

আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, সকল নবী-রাসূল আমাদের মতো মাটির মানুষ ছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলো হে নবী! আমি তোমাদের মতো মানুষ।’ (১৮:১১০, ৪১:১৬) তাদের নিজস্বে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা বা মুজিজা ছিলো না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভালো-মন্দের উপরেও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতো না। আমি তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা বৈ আর কিছু নই।’ (৭:১৮৮)

এমনকি নবী-রাসূলদের মানুষকে হিদায়াত করার ক্ষমতাও ছিলো না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেন, ’যাকে ভালোবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনিই জানেন সৎপথের অনুসারীদের।’ (২৫:৫৬)

তাছাড়া নবী-রাসূলগণ মুশরিকদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারেননি, এমনকি দু‘আও চাইতে পারেননি। রাসূল (সা.) তার নিজের আত্মীয় স্বজনদের জন্য (৯:১১৩), ইবরাহীম (আ.) তার পিতার জন্য (৯:১১৪), নূহ (আ.) তার ছেলের জন্য (১১:৪৫-৪৭) মাগফিরাত চাইতে পারেননি।

নবী-রাসূল বলতে আল্লাহ তা‘আলা ওই সকল ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন যাদের কাছে তিনি মানুষের জন্য জীবনবিধান নাযিল করে তা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেবার ও বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব দেন(১৬:২) এক কথায় বলা যায় যে, তারা ছিলেন আল্লাহর মনোনীত ধর্মীয় শিক্ষক।

রাসূল (সা.) বলেন, আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করে শোনায়, তোমাদের পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা দেয়।’ (২:১৫১, ৩:১৬৪)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে আমি রাসূলদের এজন্য প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলদের আগমনের পর আল্লাহর সম্মুখে মানুষের কোনো ওজর আপত্তি না থাকে।’ (৪:১৬৫)

রাসূলদের কর্তব্য তো কেবল স্পষ্ট বাণী প্রচার করা; এক আল্লাহর উপাসনা করা ও মন্দকে পরিহার করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মাঝে রাসূল পাঠিয়েছি।’ (১৬:৩৫-৩৬)

রাসূলের শিক্ষা বাস্তবায়নের চেষ্ট করাই হবে রাসূলকে ভালোবাসা। আদর্শ শিক্ষকের প্রিয় ছাত্র হতে হলে তাকে ভালোবাসতে হবে তার উপদেশ মেনে চলতে হবে, তার অনুশীলন করতে হবে। কথায় বলে ছাত্রের কৃতিত্বেই শিক্ষকের কৃতিত্ব। তাই রাসূলের প্রশংসায় বাড়বাড়ি না করে আমাদের উচিত কুরআন-হাদীসের অনুসরণ ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। এ শিক্ষা দেয়াটাই ছিল সকল নবী-রাসূলের একমাত্র দায়িত্ব। অথচ রাসূলকে নিয়ে রচিত নানা রকম মিথ্যা, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত কিচ্ছা-কাহিনীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কুরআনের অজ্ঞ মুসলমানেরা আজ আল্লাহর চেয়ে রাসূলকে অধিক ভালোবাসতে শুরু করেছে। (২:১৬৫)

বর্তমানে মুসলিমদের অধিকাংশের আমলের ধরন থেকে দেখতে পাওয়া যায় তারা—

১. কুরআনের উপর আমল না করে রাসূলের শাফায়াত কামনা করছে। আমাদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা এই যে, রাসূলের শাফায়াত ছাড়া কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। (এ ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের জন্য দেখুন সূরা বাকারা, আয়াত ৪৮, ১২৩, ১৮৬)

২. আল্লাহর যিকির করা থেকে রাসূলের উপর দরূদ পাঠ উত্তম মনে করছে। (৩:১৬০, ৯:১১৬)

৩. আল্লাহর পরিবর্তে রাসূলের গুণগান গাইতে পছন্দ করছে। (২৮:৭০, ৬৪:১)

তাদের কাছে—

১. নামাযের চেয়ে মিলাদের গুরুত্ব বেশি

২. সুন্নাতের চেয়ে বিদআতি আমলের ফযীলত বেশি

৩. সর্বোপরি তাওহীদের চেয়ে শিরকের মর্যাদা বেশি।

আমল করা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, ‘এমন কেউ নেই যার আমলই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনিও না? উত্তরে তিনি বললেন, না, আমিও না; যদি না আল্লাহর অনুগ্রহ আমার প্রতি বর্ষিত হয়।’ (মুসলিম-২৮১৬)

আর আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার শর্তগুলো আল কুরআনের মাধ্যমেই আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদেরই সুবিধার্থে মহান আল্লাহ তা‘আলা আল কুরআনের সব বিধি-নিষেধের সারাংশ মাত্র দশটি আয়াতের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। সেগুলো হচ্ছে— সূরা তওবার একটি আয়াত (৯:১২), সূরা আহযাবের একটি আয়াত (৩৩:৩৫) এবং সূরা মুমিনুনের আটটি আয়াত (২৩:২-৯)।

সম্মানিত পাঠক, একটু ভেবে দেখুন তো, রাসূলের উম্মাতদের উপরে বর্ণিত কার্যকলাপের জন্য রাসূলকেও হয়তো ঈসা (আ.)-এর মতো আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হতে পারে (৫:১১৬-১১৮)। তাই সত্য উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন।

আল্লাহ বলেন, ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা অপসারিত হয়েছে, আর মিথ্যার পতন অবধারিত।’ (১৭:৮১)

অবশ্য সত্য জানতে হলে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। তাই জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে কুরআনের অনুবাদ অধ্যয়ন করে অন্যান্য পাঠ্যপুস্তকের মতো এর আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তা থেকে উপদেশ গ্রহণে সচেষ্ট হতে হবে।

আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি ওরা অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি ওদের অন্তর তালাবদ্ধ?’

আল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০

১৬৭০

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭